পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Գ8 মানিক রচনাসমগ্ৰ টানিতেছে তামাক, বিপিন কথাটা ফঁাস করিল। বলিল, নালিশ আছে একটা । নালিশ ? হােসেনের মুখ গম্ভীর হইয়া গেল। বিপিন ধীরে ধীরে ব্যাপারটা খুলিয়া বলিল। নারীসংক্ৰান্ত লজ্জাকর ঘটনা। এনায়েত দ্বীপে আসিয়াছে মাত্ৰ ছমাস আগে, ইতিমধ্যেই সে সকলকে বড়ো জ্বালাতন করিয়া তুলিয়াছে। প্রথম প্রথম এর সঙ্গে ওর সঙ্গে প্রায়ই তার কলহ বাধিত, একদিন নিরীহ দুর্বল গগন ঘোষকে মারিয়া সে জখম করিয়া দেয়, সকলে মিলিয়া তখন খুব শাসন করিয়া দেয় এনায়েতকে। তারপর হইতে সে বেশ শাস্তশিষ্ট হইয়াই থাকে, ব্যাপারটা তাই হােসেনকে জানানো হয় নাই। কিন্তু কদিন আগে সে এক ভয়ানক অপরাধ করিয়া বসিয়াছে। বসির মিয়ার বউটি ছেলেমানুষ, কিছুদিন হইতে এনায়েত তাকে নাকি বিরক্ত করিতেছিল, ভয়ে বিউটি কাহাকেও কিছু বলে নাই। তারপর একদিন দুপুরবেলা সকলে যখন কাজে গিয়াছে, এনায়েত বসিরের ঘরে প্রবেশ করে। বসিরের স্ত্রীর চেঁচামেচি শুনিয়া পাশের কুটিরের আকবরের স্ত্রী গিয়া পড়ায় বেচারি সেদিন ভালোয় ভালোয় রক্ষা পাইয়াছে। হোসেন বলিল, হারামিব পোলারে কইটা দরিয়ায় দিলা না ক্যান ? বিপিন স্বীকার কবিল অতটা তাহারা করিতে পারে নাই, তবে মারধোর করা হইয়াছে যথেষ্ট ! খানিকক্ষণ চুপ করিযা থাকি।যা সকলকে হােসেন ডাকিযা আনিতে বলিল, এনায়েতও যেন আসে। অল্পক্ষণের মধ্যেই সকলে আসিয়া জুটিল, মেয়োবাও কেহ কেহ আসিয়া তফাতে দাঁড়াইযা বহিল কৌতুহলেব সঙ্গে। বিচাব হইবে এনায়েতের। কে জানে তাহাকে শূলেই দিবে না। সাগবে ডুবাইয়া মারিাবে হোসেন ! এনায়েতের বয়স বেশি নয়, বলিষ্ঠ যুবক সে, ময়নাদ্বীপে এমন আব্ব একটা মানুষও নাই। তেজের সঙ্গে সে আসিযা হোসেনের সামনে বসিল, নিৰ্ভয় নিশ্চিন্ত। হোসেন একে ওকে দুটো একটা কথা জিজ্ঞাসা করিল, বুষ্ট চোখে এনায়েতের দিকে চাহিতে লাগিল, বারবাব বলিতে লাগিল, কী আপশোশ । কী আপশোশ ! তাব।পর সে কৈফিয়ত তলব করিল এনায়েতের } এনায়েত বলিল, জবরদস্তি কবি নাই মিযা । হোসেন বলিল, না করলা জবরদস্তি, বসিবের ঘরের মন্দ্যি যাবা ক্যান তুমি ? কবিলাবে নজব দিবা ক্যান ? আমাৰে দেইখা একরোজ স্যায্য হাসিলো ! আরে বলদা তুমি ! বাই বইলা হাসিলো, দাশগাঁও ছাইড়া দ্বীপের মন্দ্যি আইসা রইছ, বাহঁ বাইন না মাইযা মবিদ অ্যানে ? ভােলা কাম কব নাই মিয়া। তিন রোজ বাইন্ধা থুমু তোমারে, খানাপিনা ळि । । তখন হোসেন মিযর হুকুমে সকলে মিলিয়া তাহকে দাওয়ার খুঁটির সঙ্গে বধিয়া দিল। আলগা কবি যাই বাঁধিল, হোসেন মিয়ার তুকুমের চেয়ে দড়ির বাঁধন তো এ দ্বীপে জোবালো নয়, বাঁধন খুলিয়া পালানোর সাহস এনায়েতোব হইবে না। কোথায় পালাইবে ? হােসেনেব। ঘরের কাছেই একখানা ঘরে কুবের ও তাহার সঙ্গীদেবী থাকিতে দেওয়া হইযাছিল। সেদিন অনেক রাত্রে বাহিবে গিয়া জ্যোৎস্নালোকে কুবের দেখিতে পাইল, হোসেনের ঘরের দাওয়ায় বন্দী এনায়েত থালায় ভাত খাইতেছে, কাছে বসিয়া আছে একটি রমণী। চুপিচুপি কুবের ঘূরিয়া হােসেনের ঘরের পিছন দিকে গেল, জানােলা দিয়া আস্তে আস্তে তাহাকে ডাকিয়া তুলিল। খবর শুনিয়া হোসেন হাই তুলিয়া বলিল, হ ? ঘুমাও গা কুবির। আর শোনো মিয়া, কী দেখলা কী শুনলা আঁধার রাইতে মনে মনে থুইয়ো, কইয়া কাম নাই। বলিয়া হােসেন পাশ ফিরিয়া শুইল।।