পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পদ্মানদীর মাঝি ክrዒ কুবেরের। লাফাইয়া দাওয়া হইতে নামিযা গাল দিতে দিতে সকলকে সে বাড়ির বাহির করিয়া দিয়া আসিল। তারপর নিজের একখানা কাপড় আনিয়া দিল মালাকে। কমে কমে শীত কমিয়া আসিল । কেতুপুর গ্রাম ও জেলেপাড়ার মাঝামাঝি খালটা শুকাইয়া গিয়াছে। পদ্মার জলও কমিয়াছে অনেক। ক্ৰমে ক্ৰমে মাঠগুলি ফসল-শূন্য হইয়া খাঁ খ্যা করিতে লাগিল, পায়ে চলা পথগুলি স্পষ্ট ও মসৃণ হইয়া আসিয়াছে অনেকদিন আগে। আমগাছে কচিপাতা দেখা দিয়াছে। দেখিতে দেখিতে পাখির সংখ্যা বাড়িয়া গিয়াছে দেশে। ঝাক বধিয়া বুনোেহাঁসের দলকে উড়িতে দেখা যায়। উত্তরাভিমুখী নৌকাগুলি দক্ষিণের জোরালো সমগতি বাতাসে বাদাম তুলিয়া তরতর কবিয়া ভাসিয়া যায়, দূরে গেলে অতিথি হাঁসগুলির মতোই রহস্যময় মনে হয় তাদের। মাছ দুধ সস্তী হইয়াছে, পদ্মার চর হইতে কলসিভরা দুধ আসিয়া বাজাবে চার পযসা সের বিকাইয়া যায়। শীতে কুঁকড়ানো গ্রামগুলি গা মেলিয়াছে। সকাল সন্ধ্যায্য মালা কাপড় ভঁাজ করিয়া লখা ও চণ্ডীর শরীর ঢাকিয়া গলায় বধিয়া দেয় না, খালি গাযেই তা-ৰ শুকনো ডোবা পুকুরে কাদা ঘাঁটিয়া মাছ ধবিতে যায়। ফাটা চামড়া উঠিয়া গিয ত্বক মসৃণ হইযা ৬:সিতেছে সকলেব, মালার রং যেন আরও ফরসা হইয়া আসিয়াছে, একমুষ্টি যৌবন যেন অতিবির্ভূক্ত আসিয়াছে মালার দেহে। মালাকে চাহিয়া রাত্রে কুবেরেব ঘুম ভাঙে ৷ কোনোদিন গৃহে, কোনোদিন পদ্মার বুকে। রাসুর সঙ্গে গোপির বিবাহের বন্দোবস্তু কিন্তু হইয়া গিয়াছে বাতিল। এ কীর্তিও হােসেন মিয়ার। সোনাখালির একটি পাত্ৰ হোসেন ঠিক কবিয়া দিযাছে গোপির জন্য, নাম তার বঙ্কু, বয়স বেশি নয। এ জগতে বঙ্কুর আপনার কেহ নাই বটে। কিন্তু হােসেন মিয়া আছে। হােসেন মিয়া যার মুকুব্বি, কীসের অভাব তাব ? বঙ্কু পাঁচকুড়ি টাকা পণ দিবে কুবেরকে, গোপিকে গহনা দিবে। তিনকুড়ি টাকাব, আর একদিন জেলেপাড়াব সকলকে দিবে ভোজ । এ কথা জানিতে কুবেরের বাকি নাই যে বিবাহের পর নবদম্পতিকে হােসেন ময়নাম্বীপে লইয়া যাইবে, কিন্তু জানিয়া কী লাভ ? হোসেন মিয়ার অবাধ্য কুবের কেমন করিয়া হইবে ? তা ছাড়া পাঁচকুড়ি টাকার মায়া ত্যাগ করিবাব সাধ্য কুবেবের নাই। বিবাহ দিলে মেয়ে পবের ঘরে যায়, কাছে অথবা দূরে। গোপি না হয় যাইবে দূরে-অনেক দূরের ময়নাদ্বীপে। হয়তো কখনও একটু মন কেমন করিবে কুবেরের, কিন্তু তাৰ প্ৰতিকাব কী ? মন তো অনেক কার: কেমন কবে মানুষের ! খবর শনিয়া রাসু গালাগালি কবিয়া গিয়াছে। বলিয়াছে, কথা দিয়া কথা রাখিল না। কুবের, কুবেরের সে সর্বনাশ করিয়া ছাড়িবে। যুগীকে গিয রাসু বুঝি ধবিয়াছে, তারপর একদিন শীতল আসিয়া রাসূব সপক্ষে খানিকক্ষণ ওকালতি করিয়া গিয়াছে কুবেরের কাছে। বলিয়াছে, টাকা। যদি বেশি চায় কুবেব, সে তা বলে না কেন ? সোনাখালির পাত্ৰ যত টাকা দিতে চায। তাই দিবে রাসু । গ্রামে রাসুর মতো পাত্ৰ থাকিতে দূর দেশে মেযেকে কুবের পাঠাইবে কেন ? কেন ? এ কোনর জবাব দিবার ক্ষমতা নাই কুবেরের ! ময়নাদ্বীপে গিয়া গোপিকে বাস কবিতে হইবে ভাবিলে জালে আবদ্ধ ইলিশ মাছের মতো মাঝে মাঝে তাবও মনটা কি ছটফট করে না ? তবু তাকে এ সব বলা মিছে। একদিন গোয়ালন্দে অধরের সঙ্গে কুবেরেস দেখা হইয়া গেল। অধর বলিল, কয়েকদিন আগে কপিলা চরডাঙায় আসিয়াছে, কিছুদিন থাকিবে। বাড়ি ফিরিয়া কুবের সেদিন মালাকে বড়ো দািবদ দেখায়। বলে, মালা কতকাল বাপের বাড়ি যায় নাই, ইচ্ছা করে না। যাইতে ? ইচ্ছা যদি হয় তবে না হয় চলুক মালা কাল, দু-চারদিন থাকিয়া আসিবে। মালা বলে, না, বাপের বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছা! তাহার নাই। বাপ কি যাইতে বলিয়াছে তাকে ? এতকাল সে যে যায় নাই, একবার কি দেখিতে