পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র নবম খণ্ড.pdf/১০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

YoSq মানিক রচনাসমগ্ৰ ওটাই তো আসল কথা ভাই। ভোগ আমিই করি। কিন্তু ভুলি না যে আমায় ভোগ করায় তাই ভোগ করি। কেশব চুপচাপ ভাবে। মাথার উপরে তারা-ভরা আকাশ পুরানো হয় না। কিন্তু চারিদিকে এলোমেলোভাবে ছড়ানো বাড়ি আর গাছপালার পৃথিবীটা যেন জীর্ণ পুরানো হয়ে গেছে। আমার অসুখটা সারিয়ে দেবেন। ভুবনন্দা ? মোহিনী বলে অসুখ ? তোমার আবার কী অসুখ গো ? মোহিনী কখন এসে সিঁড়ির মাথায় বসেছিল তারা টের পায়নি। কেশব বলে, সেটাই তো জানি না। মাথা ঘোরে, ঘুম হয় না, ভেতরে একটা অদ্ভুত যন্ত্রণাবোধ হয়মোহিনী বলে, বিয়ে থা করে সংসারী হও, সেরে যাবে। ভুবন বলে, আমি বুঝেছি তোমার অসুখটা কী! তোমার রোগ হল অবিশ্বাস। এ রোগ সারাতে হলে তোমার নিজেকে ছোটো করতে হবে, বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে। আমি সাহায্য করতে 叶崎日 মনে কিন্তু সাড়া জাগে না কেশবের। অবিশ্বাস ? এক অজ্ঞাত দুৰ্জয় শক্তিতে অন্ধবিশ্বাসের অভাব ? কত অসংখ্য মানুষের এ বিশ্বাস ভেঙে গেছে। কই, তারা তো ভোগে না তার মতো রোগে ? হাসি আনন্দের অভাব তো নেই তাদের জীবনে। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের কোনো বালাই নেই। কানুর। সে তো দিব্যি আছে-খাট, খায়-দায় আর ঘুমায়। মা করুণ চোখে তার খাওয়া দেখতে দেখতে বলে, এই খেয়ে কী করে এত খাটিস তুই ? এই বয়সে তোর এই খাওয়া ! শরীরটা ভালো নেই। আমারও মরণ নেই। w কিছুই করার নেই, খেয়ে উঠে কেশব শূয়ে পড়ে। গোবিন্দের বাড়ির দিকে তার ঘরের জানালা। জানালার পাশে চৌকিতে বিছানা পাতা। জানালার দিকে মুখ করে শুয়ে সে আকাশ-পাতাল ভাবে। একে একে আলো নেভে এ বাড়ির ও বাড়ির। রাত বেড়ে চলে। তখন আলো জুলে মায়ার ঘরে। জানালায় একটি লণ্ঠন বসানো আছে দেখা যায়। খানিক পরে নিভে যায় আলোটা। মায়ার সংকেত। কিন্তু আজ যেন মায়ার ডাকেও সাড়া দেবার ক্ষমতা নেই কেশবের। কী হবে গিয়ে ? মায়া ওই এককথাই বলবে—যে কাজে এমন প্ৰাণের ভয় সে কাজ তুমি ছেড়ে দাও ! কেশব ওঠে না। খানিক পরে তাকে চমকিত অভিভূত করে মায়া এসে তার জানালা ঘেঁষে দাঁড়ায়। ঘুমিয়েছ নাকি ? হঠাৎ মমতার বন্যায় প্ৰাণটা যেন গলে যেতে চায় কেশবের। তার জন্য এও সম্ভব করতে পারে মায়া ? সন্ধ্যারাত্রে চালাঘরে এক রাঁধতে যারা ভয় করে, ছেলেমেয়ে একজনকে পাহারা দরকার হয়, প্রায় মাঝরাত্রে সে এসেছে কলাবাগান আর পুকুরপারের অন্ধকার দিয়ে একা । কী আশ্চর্য, তোমার ভয় করল না ? করল না ? কী করব ? আজ আমার এত জরুরি কথা ছিল, আজকেই তুমি গেলে না। শরীরটা ভালো নেই। আজি। চলো তোমার সঙ্গে যাচ্ছি। পাগল হয়েছ ? এত রাতে সঙ্গে যাবে, কারও যদি চোখে পড়ে ? একা হলে বলতে পারব घi ggनछेिलाभ ।