পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র নবম খণ্ড.pdf/১০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

So 3 মানিক রচনাসমগ্ৰ আর ওই অজানা আতঙ্কের মতো কী যেন চেপে ধবে রাখে প্ৰাণটাকে । জীবনটা মনে হয় যন্ত্র। মায়ার ভালোবাসাকে মনে হয় যান্ত্রিক। কিছুই নেই তার এই প্রোমে। দরদ করা তার স্বভাব, পাঁচজনকে যেমন আপনা থেকে স্নেহ করে, তাকেও তেমন আপনা থেকে ভালোবাসে । ডাক্তার তন্নতন্ন করে পরীক্ষা করেছে দেহের যন্ত্র এবং উপাদান সব কিছু। কোনো খুঁত মেলেনি। gदन 50 gभन् 52 ? যখন ভালো থাকে নতুন কিছুই তো ঘটে না যে বলা যাবে যে সে জন্য সব উলটােপালটা হয়ে গেল। দিনরাত্ৰি ক-টা ভালো কেটেছে। অন্ধকাব থাকতে উঠে দেহমানে সুখ আর স্বস্তি নিয়ে কাজে যাচেছ। ঠিক তেমনই আরও একটা দিন এবং রাত্ৰি কাটল । তারপর ভোরে ঘুম ভেঙেই মনে হল দেহমানে স্বস্তি নেই। শুরু হল দুঃখের দিন। মায়া বলে, তবে এই অসুখের জন্যই গোড়ায় নাকি তাব খুব মমতা হত, প্ৰাণ কাঁদত। ইচ্ছা! হত, আদর-যত্ন দিযে সেবা করে তার অসুখ সারিয়ে দেয়, রাতে ঘুম না এলে শিশুব মতো তাকে ঘুম পাডিয়ে দেয়। সেই ভাবটাই তারপর অন্য রকম হয়ে গেছে। পারতাম।-- অসুখ সারিয়ে দিতে ? ቌ এক মাসও লগত না। তোমার অসুখ আর কিছুই নয। তুমি ভাবী মাযাবী মানুষ। সংসাবে কারও কাছে মায়া-মমতা পাওনি বলে তোমার এ রকম হয়েছে। এত খাটবে পয়সা আনবে খাটি একটু দরদ পাবে না-এটাই তোমাব সন্য না । কেন, মা- ? তোমার মা ? আমি জানি সব। তোমার চেযে তোমার ভায়েব জন্য মা-র দািবদ বেশি। তুমি কাঠখোট্টা মানুষ, মোটর চালাও, স্নেহ দিয়ে তুমি করবে। কী ! স্নেহের কঙাল বলে ? কঠিন বাস্তব নিয়ে তার জীবন কিন্তু ভিতরে তার স্নেহ, মমতার জন্য আকণ্ঠ পিপাসা -এ পিপাসা মেটেনি বলে তার দেহমান বিগড়ে গেছে ? কিন্তু কই, সে তো টের পায়নি এই মারাত্মক তৃষ্ণা। বরং নিজের ঘরে পরের ঘরে যে স্নেহমমতার ছড়াছড়ি দেখেছে তাকে মনে হয়েছে কুৎসিত ন্যাকমি। এ স্নেহ এ মমতা উথলায় নিছক বাস্তব দেনাপাওনার নিরিখে। মা বলে, বউ বলো, ভাইবোন-বন্ধু বলো, যতটুকু প্ৰতিদান পাবে বা পাওয়ার আশা রাখবে ঠিক ততটুকুই দরদ দেবে প্রতিদানে। প্ৰথম বয়সে বুকটা জ্বালা করত। কিন্তু সে ছেলেমানুষি ক্ষোভ মিটে গেছে বহুদিন আগেই। এটাই যখন নিয়ম সংসারের এ জন্য আপশোশ করার তো কিছুই নেই। স্বামী ছাড়া গতি নেই বলে, একদিন স্বামীর কপাল ফিরবে। আশা করা ছাড়া উপায নেই বলে, সীতা-সাবিত্রী-শৈব্যারা যদি চরম দুঃখবরণ করে থাকে তাতে তো এরা ছোটাে হয়ে যায না। জীবন যখন যেমন তখন তার তেমনই রীতিনীতি। এই রীতিনীতি ঠিকমতো ধরতে পারা, আগামী সুখের দিনের জন্য দুঃখের দিনের তপস্যা বরণ করা, এ তো সহজ কথা নয়, তুচ্ছ কথা নয়।