পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র নবম খণ্ড.pdf/১১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S. So মানিক রচনাসমগ্র না ! বলে প্রমাণ দিলেন যে আপনার বিদেশি বিদ্যাবুদ্ধি আপনাকে গ্রাস করেনি। বিদ্যাবুদ্ধির দেশ-বিদেশ আছে নাকি ? এটা যে জানে তার কাছে নেই। না জানলেই আছে ! বঙ্কিম সেদিন বিশেষভাবে ললনাকে নিমন্ত্রণ করেছিল। তার বাড়িতে সন্ধ্যার সময় আসর বসবে, লালনার যাওয়া চাই। একটু দেরি হবে। আমার। একটা কাজ সেবে যাব। তা হােক। দেবি হলে আপত্তি নেই। কিন্তু ললনার যাওয়া চাই। আসলে ললনার কাজ কিছুই ছিল না। আগে গেলে বেশিক্ষণ থাকতে হবে তাই দেবি করে 2N33 ! সে অনিমেষকে বলে, তুমিও চলো না বাবা ? অনিমেষ বলে, না। আমার কাজ আছে। প্ৰায় সাড়ে সাতটার সময় ললনাকে নিযে কেশব বঙ্কিমের বাড়ির সামনে পৌঁছায়। বাইবে থেকে দেখে মনে হয না ভিতরে অনেক লোকের আসব বসেছে। উপরেব এক ঘরে রেডিয়ো বাজছে ( ! লালনা ভিতরে গিয়ে ফিরে আসে। পাঁচ-সাতমিনিটের মধ্যে। থমথম করছে মুখ, ঠোঁট ফুলে উঠেছে, চোখে বিদ্যুতের ঝলক । কেশব মনে মনে বলে, অ ! ধীরপদেই ললনা গাড়িতে ওঠে, শান্তভাবেই বলে, বাড়ি চলুন। অনিমেষ বাইরের ঘরেই ছিল। বাড়িতে পা দিয়েই ললনা বলে, বাবা, এখুনি বঙ্কিমবাবুকে ফোন করে দাও তো আর যেন কখনও আমাদের বাডিতে না আসে। কেন ? ছল করে খালি বাড়িতে ডেকে নিয়ে আমায় অপমান করেছে। মুখে অপমান করলে তোমায জানতাম না। এমন অসভ্য মানুষ হয় ? চলে আসব, কিছুতে হাত ছাড়বে না। আমাকে শেষে হাতে কামড়ে দিতে হল। একটু থেমে খানিকটা খুশির সুরে ললনা যোগ দেয়, একেবারে রক্ত বাব করে দিয়েছি। অনিমেষ নীরবে ফোনের কাছে গিয়ে রিসিভারটা তুলে নেয়। চার সেদিন বাড়ি ফিরতে প্ৰণব খুব রাগের সঙ্গে অনুযোগ দিয়ে বলে, তুমি কি দাদা এমনি উদাসীন হয়ে থাকবে ? সংসারের দিকে একটু ফিরেও তাকবে না ? সব ঝঞ্ঝাট পোয়াতে হবে। আমাকেই ? বিয়ে করে আমিই কাকমারি করেছি নাকি ? এমনিতে প্ৰণব খুব শাস্ত এবং নিরীহ। ছোটােখাটাে রোগা মানুষটার চেহারায় একটু রুগণ ব্লগণ ভাব। পোস্টাপিসে চাকরি করে। আচার-নিয়ম যা শিথিল হবার হয়ে গেছে। কিন্তু সে মাছ-মাংস খায় না। নিয়মিতভাবে সন্ধ্যা আহিব্রুক করে।