পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র নবম খণ্ড.pdf/১৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SSo মানিক রচনাসমগ্ৰ ডাক্তার অবশ্য রোগীর সব গোপন কথা শোনে শুধু চিকিৎসার জন্য, ভালোমন্দ বিচারও করে না, ও সব কথা মনে করেও রাখে না। কথাটা ভালো করে ভেবে দ্যাখে। খোলাখুলি সব বলতে পারবে না। যদি মনে করো, তাহলে আর না এগোনেই ভালো। তোমার কতগুলি টাকা আর আমার সময় শুধু নষ্ট হবে। তার চেয়ে বরং টাকাগুলো সব আমায় দিয়ে চলে যাও।-এককথাই দাঁড়াবে। গোপনীয় কী আছে তার জীবনে ডাক্তার দত্তকে যা জানানো যাবে না ? এমন কোনো পাপ তো সে করেনি কখনও ডাক্তারকেও যা বলা যায় না। শুধু এক মায়ার কথা! মায়ার কথা জানাতে তার আপত্তি কী ? মায়ার নাম-ধাম-পরিচয় নিশ্চয় ডাক্তার দত্তের দরকার হবে না ! সে সরলভাবে বলে, দেখুন, একজনের সঙ্গে আমার গোপন ভালোবাসা আছে-একটি বিধবার সঙ্গে। নাম-ঠিকানা বলতে হবে না তো ? না না, নাম-ঠিকানা আমার দরকার নেই। ভালোবাসাটা কী রকমের পরে সেটা একটু জানালেই হবে-আমি প্রশ্ন করব তুমি জবাব দেবে। আরও অনেক কথা জানতে হবে। কেশব বিব্রতভাবে বলে, গোপনীয় আর কিছু নেই। কিন্তু আর একটা কথা বলি। এই ভালোবাসার ব্যাপারটার জন্য কিন্তু আমার অসুখ নয়। এটা অনেক পরে ঘটেছে। ডাক্তার দত্ত সায় দিয়ে বলে, আমিও তাই বলছি। আগে অসুখ, পরে ভালোবাসা। কাজেই তোমার ভালোবাসাটা কী বিকম তাই থেকে রোগের লক্ষণ জানা যাবে। কেশব ভাবে, কী সর্বনাশ ! মায়ার সঙ্গে তার ভালোবাসা তার রোগেরই একটা লক্ষণ নাকি ? একবার ভাবে সোজাসুজি কথাটা জিজ্ঞাসা করে। আবার ভাবে, এ রকম প্রশ্ন কি করা চলে ডাক্তারকে ? ডাক্তার দত্ত বলে, কথাটা গোলমেলে লাগছে ? আচ্ছা এই পয়েন্টটা নিয়েই আমাদের কাজ শুরু করা যাক। ভালোবাসা থেকে অসুখের লক্ষণ, কীভাবে বার করা যায় ? ভালোবাসার ওপরেও অসুখটার প্রভাব থাকায় কতগুলি পিকুল্যারিটিজ এনে দেয়। কাজেই ওগুলি অসুখেরই লক্ষণ। ওইগুলি বিচার করলে সেদিন দুটি চিন্তা মাথা জুড়ে থাকে কেশবের। টাকার চিস্তা আর প্রেমের রহস্যের চিস্তা। একটি পয়সা কখনও জমাবার চেষ্টা করেনি, নিজের খরচ বাদে সব টাকা বাড়ির লোকের পিছনে খরচ করেছে। আজ এত দরকারি চিকিৎসার টাকা তার হাতে নেই ! বাড়িটা বঁধা রাখতে হবে কিংবা বেচে দিতে হবে। কে জানে। কী হাঙ্গামা সৃষ্টি করবে বাড়ির সকলে। এমন একজন বন্ধু পর্যন্ত তার নেই। যার কাছে কিছু টাকা ধার করতে পারে। বন্ধু তার শুধু কানু, ধার দেবার মতো টাকা কানুর নেই। ভালো হয়ে যাবার আশা আরও জোরদার হয়ে উঠেছে আজ। মনে এসেছে দ্বিধাহীন সংকল্প, চিকিৎসা শেষ পর্যন্ত সে চালিয়ে যাবেই। বাড়ির সকলে যতই রাগ করুক যতই চেঁচাক, দরকার হলে বাড়ি সে বিক্লিক করবে। নিজের প্রতিজ্ঞার দৃঢ়তায় কেশব আশ্চর্য হয়ে যায়। এমন গুরুতর বিষয়ে এমন অনায়াসে মনস্থির করে ফেলা তো তার নিয়ম নয় !