পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র নবম খণ্ড.pdf/২৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

obr মানিক রচনাসমগ্ৰܓ পড়েছে, আর একটু নামলেই সাগরের জলে ডুবে যাবে। পড়ন্ত সূর্যের সোনালি আভা তার মুখে এসে পড়েছে। চোখে আমার কী ভালোই যে লাগল। পলক পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেল। আমার সমগ্র সত্তা মুগ্ধ হয়ে অপরিচিত মেয়েটির অপরূপ সৌন্দর্যের দিকে চেয়ে রইল। বুপ ? বুপ বইকী ! দৃষ্টিকে সম্মোহিত করে মনের ভেতরে যে জিনিস আমন আলোড়ন জাগিয়ে তুলতে পারে তাই তো বুপ ! সে বছর সৌন্দৰ্য-প্রতিযোগিতায় পৃথিবীর সেরা বুপসি বলে যে স্বীকৃত হয়েছিল, তাকে দেখে এসেছিলাম ; তার বৃপের সঙ্গে এ বুপের এতটুকুও নৈকট্য নেই। সে বুপ দেখে বিস্মিত হয়েছিলাম, মুগ্ধ হয়েছিলাম এবং চোখের আড়াল হতেই একঘণ্টার ভেতরে ভুলেও গিয়েছিলাম। কিন্তু সেদিন সেই বাঙালি তরুণীর রূপ দেখে মনে হয়েছিল, সে যেন আমারই অস্তরের আনন্দ-প্ৰদীপের বিচ্ছিন্ন শিখা। এতকাল পরে হঠাৎ দেখা দিয়ে আনন্দের আলোকচ্ছটায় আমার অন্ধকার অন্তর উদ্ভাসিত করে তুলেছে ! সূর্যদেব অস্ত গেলেন। পশ্চিমের আকাশের গাঢ় রক্তবর্ণের শেষ চিহ্নটুকু ঘনায়মান কালোর মাঝে লুপ্ত হয়ে গেল। জাহাজে আলো জুলে উঠল। ধীরে ধীরে সে চলে গেল ।

  • द्रग्न् िऊळ्नॉ॰ शन ! প্রথম দিন একাই দেখেছিলাম, পরদিন বিকেলে ডেকে এল এক প্রৌঢ় ভদ্রলোকের সঙ্গে। ডেকে আর বাঙালি ছিল না, ভদ্রলোক বারবার আমার দিকে তাকাতে লাগলেন। নিচু গলায় তরুণীকে কী বলায় স্পষ্ট বোঝা গেল সে আপত্তি করছে। কিন্তু তার আপত্তি করার মর্যাদা না রেখেই ভদ্রলোক আমার সামনে এসে বললেন, নিশ্চয় বাঙালি ? বাংলাতে বললাম, সন্দেহ আছে ! ভদ্রলোক ভারী খুশি । মাথা দুলিয়ে বললেন, ঠিক, সন্দেহ থাকতেই পারে না, বাঙালির বৈশিষ্ট্য যাবে কোথা । হা হা হা ! সেই জন্যই তো যেচে আলাপ করা। বাঙালি বলে চিনতে কি আর পারিনি ? ও হল যাহােক কিছু বলে কথা আরম্ভ করা। আপনি বিরক্ত হবেন ভেবে আমার মেয়ে তো আপুক্তিই করছিল।

বিরক্ত হব ? আপনারা বিরক্ত হবেন ভয়েই তো আমিও যেচে আলাপ করবার চেষ্টা করিনি ! ভদ্রলোক আরও খুশি। হাসতে হাসতে বললেন, ভাগ্যে আপনার বিরক্ত হবার রিস্কটুকু নিয়েছিলাম। নাহলে এক জাহাজে থেকে বাঙালি হয়েও পরস্পরের পরিচিত না হওয়ার কলঙ্ক থেকে CRVE আমিও হাসলাম। নাম শুনলাম, অনন্তলাল। কলকাতার অ্যাটর্নি। পরিচয় ছিল না, নাম আগেই শুনেছিলাম। বাবাকে চিনতেন, বিষয়সূত্রে পরিচয়। বাবার নাম শুনেই আপনি থেকে একেবারে তুমিতে নেমে গেলেন। দশ বছরের ছেলের মতো আমার পিঠ চাপড়ে সম্মিত মুখে বললেন, খাসা লোক তোমার বাবা। তার ছেলেও যে তারই মতো খাসা হবে সন্দেহ নেই। মনে মনে হাসলাম। না থাকে ভালোই। মি. সেন দেখলাম মনে-প্ৰাণে নিতাস্তই বাঙালি। সাহেবের সঙ্গে হয়তো সাহেবি এটিকেট বজায় রেখেই আলাপ করেন, আমার সঙ্গে আলাপ করলেন একেবারে বাঙালি প্রথায়। তখন আমি ভীষণ সাহেব, নকল কি না, আসলকে ছাড়িয়ে উঠবার চেষ্টা করছি। কিন্তু তাঁর আন্তরিকতাপূর্ণ ব্যবহারে এটিকেটের অভাব থাকলেও রাগ করতে পারলাম না। খুশিই হলাম। চিত্রার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন, ওর জন্যই এবার বিলাত-ভ্ৰমণটা হয়ে গেল। মিউজিক শিখছিল, এইবার ডিগ্রি পেয়েছে। আমার ছেলে শরৎ আইন পড়ছে, দুজনে একসঙ্গেই গিয়েছিল। তার পড়া শেষ হয়নি,