পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র নবম খণ্ড.pdf/২৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় অধ্যায় কী দ্রুতগতিতেই যে চারিদিকে ছড়িযে গেছে। সাধুবাবা জগদীশের নাম। জগদীশ নামটা নয়। সাধুবাবা নাম। জোয়ান বয়স, এমন টকটকে গাযেল ব্যং।। মুখ দেখলেই বুঝতে পারা যায় বৃক্ষতাটা গায়ের জোরে টেনে আনা হয়েছে, বোধ হয় তার যোগসাধনার প্রক্রিয়া দিয়েই। ছাই-চাপা আগুনের মতোই তার মুখে উকি-কুঁকি মারে রাজপুত্রেব বৃপ। নেশা আর উচ্ছঙ্খলতার এত বাড়াবাড়ি এতকাল ধবে চালিয়ে এসেও একেবাবে ধ্বংস করে। ফেলতে পারেনি বসুপুৰুষ ধরে গড়া তার দেহের বুনিযাদি বনোদ । তাব বাপের বেলা পর্যন্ত চলে এসেছে শুদ্ধ সাত্ত্বিক কঠোর নিযামতান্ত্রিক আত্ম-অপচয-মদ বেশ্যা বাইজি পার্ষদ তাবা বরাবর কনট্রোল করে এসেছে শাস্ত্রীয় সংযমে। শোষণটা ঠিক রাখাব জন্যই এই সংযম। শোষণের এই সংযমী গরিয়াসীতাই কত শতাব্দী ধরে ভাবুক শাস্ত সাধারণ শোষিতকে মোহিত দমিত আর ভীৰু-কাপুরুষ করে রেখে এসেছে। জগদীশ ভুলে যায়নি। একটা শোচনীয় দুর্ঘটনায় চিত্ৰ জলপ্রপাতে আছড়ে পড়ে তলিযে গিয়ে হারিয়ে গেছে বলেই কি আর নিeেrর ৩৩ত জীবনকে জগদীশ ভুলতে পারে ? মা কে জড়িয়ে ধরে শশুতো জগদীশ। মা-ও তাকে জড়িয়ে ধরে শূতো। রাত একটা দুটোয় বাবা বাড়ি ফিবলে মা কিন্তু কত যত্নে কত সন্তৰ্পণে মা-ছেলে তাদের দুজনের জড়ােজড়ি কবে ঘুমানোতে ছেদ টেনে উঠে যেত । মন ভাবত, তার বুঝি ঘুমাই ভাঙেনি। মা-ব জন্য তাকে কবতে হত য়ুম ভেঙেও ঘুমিয়ে থাকার ভান ! ঘুমের ভান করা মাথাটা বাগে দুঃখে অপমানে জুলে যেত জগদীশের। মা জিজ্ঞাসাও করত না : বেশ্যা-পার্ষদ-বাইজিদের জন্য ফিরতে রাত হল কি ? মা শুধু বলত, কিছু খাবে কি ? মাছ মাংস ডিম পরোটা সব তৈরি আছে। মাছ খাব। কী মাছ আছে ? খাণ্ডা আছে, ইলিশ আছে, গলদা চিংড়ি আছে। ঝাল আর ঝোল দুৰ্ব্বকমই আছে। আর তুমি যে পুঁটিমাছ ক-টা ধরেছিলে, সেগুলো ভাজা করা আছে। জগুকে দাওনি পুঁটি কটা ? ওর ছিপে ধরা মাছ ! এক একটা মাছ তুলি, ওর কী ফুর্তি । ওকে না দিয়ে মাছগুলি আমার জন্য রেখে দিয়েছ ? ছিছি। ! আমি কী জানি ? বললে ওকেই দিতাম। পরশু এইটুকু একটা মিরগেল ধবেছিলে, কঁটায় ভর্তি। তিন রকমের ভালো মাছ রাঁধা হয়েছে, কঁাটা-ভর্তি ওফন্টিকু মাছ তুমি কি আর খাবে ভেবে ওইটুকু মাছ ? আধাসেরের চেয়ে ছােটাে মাছ তুললে সে মাছ আমি আনি ? জলে ছুড়ে ফেলে 衍目 আধাসেরি মাছ মস্ত মাছ ! তাও আবার মিরগেল। কঁাটা বাছতে বাছতে পিত্তি পড়ে খিদে নষ্ট হয়ে যায়। কানুর মা প্ৰসাদ দিতে এসেছিল, মাছটা আমি তাই ওকে দিয়ে দিলাম, পুঁটি মীেরলা ছাড়া বেচারার একটু মাছ জোটে না। রাতে বাড়ি ফিবে তুমি এক ঘণ্টার বেশি আমায় বকলে। মানিক ৯ম ১৮