পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র নবম খণ্ড.pdf/২৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sዒዪe মানিক রচনাসমগ্ৰ ভাবিছ তো আমি মানুষের নিন্দা করছি ? দোষ দেখাচ্ছি ? না-বিদ্যা অল্পবিদ্যাওলাদের জ্ঞান-বিজ্ঞানের সব চেয়ে বড়ো শত্ৰু বলছি ? বরেনকে বুঝিয়ে দিচ্ছি। ওদের অল্পবিদ্যার চ্যাংড়ামিই জ্ঞান-বিজ্ঞানের সব চেয়ে বড়ো বিপদ ? তোমরা ভুল কথা ভাবছ-আমি যা বলতে চাই তার উলটো কথা ভাবছি ! কেউ কথা বলে না। মানুষের ধর্ম ভগবান জ্ঞান-বিজ্ঞানে সভ্যতা কীসের ওপর দাঁড়িয়েছিল, এখনও দাঁড়িয়ে আছে ? সত্যের ভিত্তি ছাড়া দাঁড়াবার কোনো অবলম্বন ছিল না মানুষের, আজও নেই। সত্যকে ধরেই মানুষ এতদূর এগিয়েছে, আরও এগোবে। তোমার আমার মুশকিলটা কী জানো ? সত্য কী তার নানারকম ব্যাখ্যা শুনি, নিজেরাও নানারকম মনগড়া ভাবাৰ্থ করে নিই। তবে এ বিভ্ৰান্তি কেটে যাচ্ছে। সত্য কী তাই নিয়ে যে নানারকম ধারণা, এ যুগে আমরা এটাকেও সত্য বলে জানতে পেরেছি, মানতেও পেরেছি। সকলে নয়-কিছু লোকে পেরেছি। সত্য সম্পর্কে ধর্ম আর বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গির তফাৎটা এবার ধরবার চেষ্টা করো। বিজ্ঞান বলে আমরা যতটা জেনেছি ততটাই সত্য, - অনেক সত্য আমরা জানি না। নতুন সত্য জানার পর হয়তো এখন যেটা সত্য বলে জানি সেটা মিথ্যা হয়ে যাবে কিন্তু যতদিন বিজ্ঞানের বিচারে এটা সত্য বলে প্রমাণিত হয়ে থাকবে ততদিন এটাই আমাদের কাছে সত্য। বরেন প্রশ্ন করে, কিন্তু কতগুলি মূলনীতিকে বিজ্ঞান কি চিরদিনের জন্য অভ্রাস্ত বলে না ? নতুন আবিষ্কারের ফলে আজকের একটা থিয়োরির বদলে নতুন থিয়োরি হতে পারে—এটা বিজ্ঞান মানে। কিন্তু বিজ্ঞান কী বলে না, চিরকাল দুভাগ হাইড্রোজেন আর একভাগ অক্সিজেন মিলে জল হবে, অন্য কিছু হবে না? 祭, না। বিজ্ঞান অমন একগুয়ে নয়। বরেন আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। জগদীশ বলে, চিরদিন সীমাহীন অনন্ত এ সব কথার মানেটাই বিজ্ঞানে গ্রাহ্য-সীমাহীনকে মগজে একটা ধারণার বুপ দেবার চেষ্টা বিজ্ঞান করে না। পদার্থের রূপান্তর বিজ্ঞানের একটা সত্য। কাজেই বিজ্ঞান কী করে চিরদিনের কথা বলবে ? একদিন হয়তো হাইড্রোজেন বা অক্সিজেন বলে কিছু পৃথিবীতেই থাকবে না, অন্য কিছু হয়ে দাঁড়াবে। বিজ্ঞান তাই বলে, এখনকার অবস্থা যতদিন থাকবে দুভাগ এই হাইড্রোজেন আর এই অক্সিজেন মিলে জলই হবে, অন্যকিছু হবে না। সুদৰ্শনা বলে, এবার ধর্মের সত্য আর বিজ্ঞানের সত্যের তফাতের কথা বলুন। জগদীশের মুখে হাসি দেখা দেয়।-সত্য আবার ধর্মের বা বিজ্ঞানের হয় নাকি ? সত্যকে একভাবে জানা আর মানা হল ধর্ম, অন্যভাবে জানা আর মানা হল বিজ্ঞান। বিজ্ঞান কীভাবে সত্যকে নেয় বলেছি-নতুন সত্য অথবা সত্যের নতুন রূপ আবিষ্কৃত হতে পারে এটা বিজ্ঞান মানে কিন্তু অনাবিষ্কৃত অপ্রমাণিত সত্য বিজ্ঞানের কাছে সত্য নয়। ধর্ম বলে, আমি সমগ্ৰ সত্য জানি, চিরস্তন সত্য জানি। ভগবান বা ভগবানের মতো কোনো সত্যকে মূল ধরে নিয়ে ধর্ম বাস্তব জগতের সত্যকে বিচার আর ব্যাখ্যা করে। সমস্ত ধর্মেই যে অন্য সবকিছুর সঙ্গে মানুষের সামাজিকভাবে বাঁচার নিয়মনীতির বিধান রাখতে হয়, এটা কখনও খেয়াল করেছ বরেন ? বরেন। মৃদু ও কাতরস্বরে বলে, আপনার বুঝিয়ে দেবার প্রসেসটা আমি ঠিক বুঝতে পারিনি। 丐一 আমি তো রাগ করিনি ভাই। खरे ! প্ৰতাপেরা যাকে বাবা বলে ডাকে, কলেজের একটা চ্যাংড়া ছোঁড়াকে সে বলছে ভাই !