পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র নবম খণ্ড.pdf/২৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তেইশ বছর আগে পরে Sዒ ዒ জগদীশ গভীর মুখে শাস্তিকণ্ঠে বলে যায়, তোমার কথােব জবাব দিতেই এত কথা বলেছি। একটা মানুষের নিজের চেতনাতেই কত বিরোধ, একই ভাবেব কত বিপরীত ভূমিকা। তোমার আমার চিন্তায় কত অমিল আছে ভাবে তো ? বিজ্ঞান ধর্মকে মানে বলছি ভেবেই তুমি গেলে চটে ! কেন চটলে শুনবে ? মানা কথাটা মানে তুমি বুঝছ এক রকম, আমি বুঝি অন্য রকম। আমি কোন অর্থে বলেছি বিজ্ঞান ধর্মবিশ্বাস মানে, ভগবান মানে ? যে অর্থে বলা যায় বিজ্ঞান কুসংস্কার মানে, পাপকেও মানে ! ধৰ্মবিশ্বাস আছে, বিপাকে পড়ে মানুষ ভগবানকে ডাকছে-এই বাস্তব সত্যটাকে বিজ্ঞান উড়িযে দেবে কেন ? - বিরোনের মুখে হাসি ফোটে। এবার বুঝেছি। ! কুঁড়েতে ফিরতে সন্ধ্যা পার হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু নেশা শুরু করার জন্য আজ যেন তেমন ব্যাকুলতা নেই। ধীরে সুস্থে সে নেশা শুরু করে। তাগ্নি এটা-ওটা জোগান দিয়ে যায়, তাকে জিজ্ঞাসা করে রাত্রের খাবার তৈরি করে। রাত্রে জগদীশ খাবে কি খাবে না কিছুই ঠিক নেই-আধিকাংশ রাত্রেই সে কিছু খায় না। তাপ্লির পরিপুষ্ট সুগঠিত দেহটার দিকে চেয়ে আজ একটি প্রশ্ন জাগে জগদীশের মনে : নারীদেহের কামনা যে তার একেবারে শেষ হয়ে গেছে, কোনো নারীদেহ স্পর্শ করার কথা কল্পনা কবলেও গভীৰ শিল্প সঞ্চায় সর্বাঙ্গ যে তাব কুঁকড়ে যেতে চায়, চিত্রার জন্য মনোবেদনাই কি তার একমাত্র কারণ ? এই যে কড়া বিষ সে পান করে চলেছে দিনের পর দিন, খাদ্যের জন্য খিদে পর্যন্ত যা নিস্তেজ করে দেয়।--তার কি কোনো প্রভাব নেই তার কামনা ঝিমিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ? টের পাওযা যায় তাপ্লি আজ একটু অস্বস্তিবোধ করেছে। ঠিক বটে, বাত হযে গেছে। সকাল থেকে তাপ্লি তাব সেবা করে সন্ধ্যাব পাব পর্যন্ত--ততক্ষণে নেশা চড়ে যায়। তাপ্লিকে সে সুকুম দেয়, এবার যা, ভাগ । তাগ্নি চলে যেতে একটু দেরি করলে গর্জন করে ওঠে। আজ রাত হয়ে গেছে বলেই কি তাগ্নি অস্বস্তিবোধ করছে ! 5: 263 ? অথবা তার মরদের ভয়ে ? তাপ্লির মরদ কিরাপা অন্যের পরামর্শে শহরের মিউনিসিপ্যালিটিতে কাজ করতে চলে গিয়েছিল। তাপ্লিকেও সঙ্গে নিতে চেযেছিল, তাপ্লি যায়নি। নোংরা বীভৎস কাজ, কঠিন খাটনি। কিন্তু জীবন সেখানে বড়ো মজাদার। ধাঙড় মহল্লায় সবাই মিলে নেশা করা, মাঝে মাঝে পোষা শুয়োর পুড়িয়ে হাইকুন্নেড় করা-এ সব মজা কি আর ময়লা ঘাঁটার খাটুনি না খেটে মেলে ! স্বভাব বিগড়ে গেছে কিরাপার। উপজাতীয় মরদের জীবনযাত্রার রীতিনীতি মেনে চলা তার পোষায় না । তারা মেয়ে-পুরুষ খেটে খায়, খুশি হলে মরদ মেয়েমানুষকে মারধোর করবে। আর সে নিরুপায়ের মতো তা সয়ে যাবে, এ অনিয়মের ধার তারা ধারে না। শহর থেকে কিরাপা নেশার বেঁকে তাপ্লিকে গালাগালি করার, চড়াচাপড় মারার স্বভাব নিয়ে q乙H夜目