অষ্টম অধ্যায় দিনের হিসাব চব্বিশ ঘণ্টা। তার মধ্যে সাত-আট ঘণ্টা সে স্রেফ ফাঁকি দেয়, কড়া বিষাক্ত নেশায় মজে থেকে। সত্যই কি ফাঁকি দেয় ? চিত্রাতে এসে সমাপ্তি হল মদ আর মেযে নিয়ে তার বিকারের চরম ধিক্কারময় যৌবনের। সে বিকার কি উত্তরাধিকার ? সে বিকার কি জন্মগত না নিজের অর্জন করা ? প্ৰথম শীতের বাতাস বইছে। মাঠ-বনের চেহারা বদলের সঙ্গে বাতাসে নতুন একটা জীবন্ময় গন্ধ মিশেছে। আজকাল মাঝে মাঝে দিনের বেলাতেও জগদীশের মধ্যে মরিয়া ভাব জাগে। একটা হেস্তনেস্ত করে ফেলার প্রচণ্ড কেঁয়াক চাপে। রাত্রে নেশা চড়িয়ে সে মারিয়া হয় রোজ-তাকে অনায়াসে সামলে দেয় তাগ্নি আর জিরাইয়া, পায়ে ধরে আরেক চুমুক নেশা গিলিয়ে তার মরিয়া হবার ঝোকটাকে ঝিমিয়ে শাস্ত করে ঘুম পাড়িয়ে দেয় সে রাতেব মতো। জগদীশকে আজকাল দিবারাত্রি চিন্তা করতে হয়। তার জীবনটা কেন এমন বিশ্ৰী হয়েছিল, কেন আবার শুকনো গাছের ডালপালায় সরস সতেজ হয়ে উঠে নতুন পাতা গজানোর মতো সুশ্ৰী হয়ে উঠছে জীবনটা ? কেন শহর আর গ্রামের এত লোক জীবনটা সুশ্ৰী করার জন্য তার কাছে হত্যা দেয় ? জীবন তো তবে বিশ্ৰী হতে পারে না ! ❖፧ অসুখ-বিসুখ ডাক্তার কবিরাজ হাসপাতাল নাসিংহােম রাঁচি শহরে চেঞ্জে আসা তো আসল खैीवन न्य। চিত্রা জীবনকে অমান্য করে তাকে বশ করতে চেয়েছিল। জীবনকে অমান্য করে সে চেয়েছিল চিত্রাকে বশ করতে। একটা ছেলে, একটা মেয়ে। পবশম্পরকে বশ করার জন্য তারা পাগল । এ ব্যাপার তুচ্ছ নয় জগৎ-সংসারের হিসাবি মানুষদের কাছে। মেয়ে যদি ছেলেকে না চায় আর ছেলে যদি মেয়েকে না চায়। তবে তো ফুরিয়েই গেল জীবনের কারবার ! বাপে-মায়ে এক রকম পিরিত হয়েছিল, পিরিত হয়েছিল। ঠাকুর্দা-ঠাকুমায়। সে পিরিত ভালো লাগেনি, ভালো লেগেছিল। লিওনারার তদ্ধিত প্ৰত্যয়ের প্ৰেম আর আত্মরক্ষার দুর্গ গড়া। লিওনারার প্রশ্নটা নানাভাবে নানাবৃপে এলেও প্রশ্নটা ছিল একই ; তুমি কি পারলে আমার বাকি জীবনটার দায় বইতে ? তোমার মতো পয়সাওলা এ দেশের কোনো জোয়ান আমার দায় ঘাড়ে নিয়ে আমার সাথে পিরিত করতে চাইছে না।--তাদের সে ক্ষমতা নেই। তুমি পারবে কি বিলাতি বউকে সারাজীবন সামলাতে ? সুদৰ্শনা আর রত্নাকরের মধ্যে তর্ক যুদ্ধ রাগারগি, মান-অভিমান লক্ষ করতে করতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছিল। জগদীশ । তার কেবলি মনে হচ্ছিল চিত্রার সঙ্গে এই রকম ছ্যাবলামি করতে গিয়ে সে চিত্রার এবং তার নিজের জীবনটা কীভাবে শেষ করে দিয়েছে, মহাপুরুষ তাকে পুরোধা রেখে ওরাও সেই একই বিরোধ সৃষ্টি করছে নিজেদের মধ্যে।