পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র নবম খণ্ড.pdf/৩৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Vod S. মানিক রচনাসমগ্ৰ বিমল ফেল করে শুধু তাকে দমিয়ে রাখেনি এতক্ষণ, কেমন হতাশায় প্ৰাণ ভরে দিয়েছিল। আশা আর স্বপ্নে আবার উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। ভবিষ্যৎ । কিন্তু প্ৰাণেশ কিছু বলে না কেন ? প্ৰাণের হাসি ও গর্বে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে না কেন ? বিমল পাস করতে পারেনি বাবা । প্ৰাণেশ আপশোশ করে না, সংক্ষেপে বলে, পারেনি ? পাস করেই বা কী করত। বাপের মন্তব্য শূনে নীরেন থ বনে যায়। যে ছেলে সদ্য সদ্য ভালোভাবে পরীক্ষা পাসের সুসংবাদ নিয়ে এসেছে তাকে এমন কথা শোনানো ! বিমলের ফেল করা আর ছেলের পাস করা ব্যাপারটাই যেন বিশেষ কোনো মূল্য নেই প্ৰাণেশের কাছে। অথচ তাকে পাস করানোর জন্য সে গায়ের রক্ত জল করেছে। সুজনের কাছে পেলেও বাপের কাছে ঠিকমতো অভিনন্দন না পেয়ে নীরেন একটু ক্ষুন্ন হয়েই ভিতরে যায়। সেখানে অবশ্য ত'র অভ্যর্থনা জোটে দিগ বিজয়ীর মতোই-ছোটাে ভাইবোনেদের কাছে। সকলে তারা হইহই চেঁচামেচি শুরু করে দেয়। তেরো বছরের বোন রেখা উঠানে গিয়ে চেচিয়ে উপর তলায় খবর পাঠিয়ে দেয়, বকুলদি ! ও বকুলদি ! দাদা পাস করেছে ! এক মিনিটের মধ্যে উপরিতলার ভাড়াটে দীনেশের মেয়ে বকুল নেমে আসে। এবার সে ম্যাট্রিক দিয়েছে। হাসিমুখে হাতটা নীরেনের দিকে বাড়িয়ে বলে, ছুঁযে দাও, পাসের ছোঁযাচ লাগিয়ে দাও। ছোঁয়া লেগে আমিও যদি উতরে যাই। মা এতক্ষণ কথা বলেনি ! তার মুখের হাসি আর চােখের গর্বভরা চাউনিতেই নীবেনের প্রাণ ভরে গিয়েছিল। তবু সে অনুযোগ দিয়ে বলে, তুমি তো কিছু বললে না মা ? কী আবার বলব ? আমি জানতাম তুই পাস করবি। আমার গয়না ধার নিয়েছিস, পাস করে। gक्ष ििव न ! সকলের সামনে তার গয়না বিক্রির কথা বলায় নীরেন ক্ষুব্ধ হয়। সত্য সত্যই একদিন সে কি শোধ দেবে না। মায়ের গয়না, নিজের ভবিষ্যৎ গড়ে নিতে পারলে মায়ের সুখের ব্যবস্থা করবে: না। সকলের আগে ? আজকের বিশেষ দিনটিতেও গয়না দিতে হওয়ার কথাটা মা পর্যন্ত ভুলতে পারে না । যেটুকু আনন্দ আর উত্তেজনা জেগেছিল বাড়িতে তার পাস করার খবরে, এত কষ্টে তাকে পাস করানোর জন্যে, কত তাড়াতাড়িই সেটা ঝিমিয়ে নিস্তেজ হয়ে এসে একেবারে ফুবিয়ে যায় ! নীরেন ভেবেছিল, প্ৰাণেশ ভেতরে এলে তার ভবিষ্যৎ নিয়ে একচেটি জল্পনা-কল্পনা চলবে। কিন্তু প্ৰাণেশ ঘরে এসে সটান বিছানায় শূয়ে পড়ে, ছেলের সম্পর্কে তার কথা বলবার উৎসােহই আর দেখা যায় না। তার মা বলে, সুজনবাবু কী বলল ? মইনে বাড়িয়ে দেবে ? প্ৰাণেশ বলে, আজ তো শুধু টােকেন স্ট্রইক হল। এরপর কী হয় দেখা যাক। তাই বটে ! পাসফেলের চিস্তায় মশগুল হয়ে থেকে নীরেন ভুলেই গিয়েছিল যে তার রেজাল্ট জানার আগ্রহে প্ৰাণেশ আপিস কামাই করেনি, আজ তাদের আপিসে স্ট্রাইক। কিন্তু তাই বলে তার বিষয়ে কথা বলা কি বারণ ? আজও শুধু দেনা আর সংসারের অভাব অনটনের কথাই হবে দুজনের মধ্যে ? রেখা আজ সকালেও কান্নাকাটি করেছে, তার একটাও আস্ত জামা নেই। মুদি দোকানে কিছু টাকা না দিলে এবার স্বয়তো গলায় গামছা দিয়ে অপমান করবে,