পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র নবম খণ্ড.pdf/৩৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○Qbr মানিক রচনাসমগ্ৰ কিন্তু মুখে হতাশার কথা বললে কী হবে। বিপিনেরও উৎসাহ জেগেছে। সে যেচে গিয়ে হরেনকে বলে আসে, আমি তোমার সাথে আছি ভাই। ইউনিয়নের সভায় সরাসরি তাদের ইউনিয়ন ভেঙে দিয়ে গোকুলদের ইউনিয়নে যোগ দেবার প্ৰস্তাবটা দীনেশ ঠেকাতে পারে। কিন্তু হারেনের সংশোধিত প্ৰস্তাবটা ঠেকাবার ক্ষমতা তার হয় না। ংশোধিত প্ৰস্তাবে বলা হয় যে তাদের দুটি বেসরকারি ইউনিয়ন একসাথে পাঁচশো কর্মীর সভা ডেকে নতুন ইউনিয়ন গড়বে যে ইউনিয়ন বর্তমান আইনসম্মত ইউনিয়নের স্থান দাবি করবে এবং দাবি নিয়ে লড়াই চালাবে। এ প্রচেষ্টাকে নষ্ট করার অপচেষ্টা যথাসাধ্য চলতে থাকে। সে তো চলবেই। কিছু গড়তে গেলে লড়তে হবেই। ভেঙে দেবার এই প্ৰাণপণ চেষ্টার ফলে যদি শেষ পর্যন্ত ভেস্তেও যায় গড়ে তোলার চেষ্টা, সে হবে আলাদা কথা। লড়য়ে হারজিত আছে। কিন্তু বিপদ যে এল সম্পূৰ্ণ অন্যদিক থেকে ! একটা মেয়েলি কেঁাদল খাটুয়েদের নিজস্ব নতুন ইউনিয়ন গড়ার আশা নির্মূল করে দিল-দিল একেবারে শেষ মুহূর্তে। সকালবেলাই রাঁধতে রাঁধতে প্ৰচণ্ড ঝগড়া বেঁধে গেল। রত্না আর রাণীর মধ্যে-অসাবধানে রাণীর গরম হাতায় রত্নার গায়ে ছেকা লেগে যাবার ফলে। কুৎসিত গালাগালি করেই গায়ের জ্বালা মিটাল না রত্নার-তার তো শুধু গরম হাতা থেকে গায়ে একটু ছাকা লাগার জ্বালা নয় ! পেটের ছেলের বোঝাটাও দিন দিন তার ক্ষীণ দুর্বল শরীরটার পক্ষে অসহ্য হয়ে উঠেছিল। দিশেহারা হয়ে রাণীর উপর বঁাপিয়ে পড়ে সে আঁচড়ে তার গাযে রক্ত বার করে দেয়। রাণী ठंब्ज न ब्लि (दक्ष श्या क्रांभाळु७ ऊि । রাণীরও ভিতরের দুর্বলতা আর অস্থিরতাবোধ বেড়ে চলেছিল প্রতিদিন । ঠেলাটা সেও একটু দিশেহারা হয়েই দিয়ে বসে। উনানে ডালের কড়াইয়ের উপর পড়ে যায় রত্না, গরম ফুটন্তু ডালে গায়ের অনেকটা জায়গা তার ঝলসে পুড়ে যায়। তাদের চোঁচামেচি শুনে দু-চারজন ব্যাপার দেখতে এসেছিল, রত্নার আর্তনাদ শুনে আরও কয়েকজন ছুটে আসে। ধরাধরি করে রত্নাকে তারা তার ঘরে নিয়ে যায়। রাণী ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ে। কোনোদিকে তাকাবার বা কী ঘটেছে দাঁড়িয়ে দেখবার সাধ্য তার ছিল না। বুকের মধ্যে ধড়ফড়ানির সঙ্গে মাথার মধ্যে ঝিমঝিম করে জগৎটা অন্ধকার হয়ে আসছিল। ব্যাপারটা শুধু এ পর্যন্ত গড়ালে ভাবনা ছিল না। কিন্তু বাজার করে ফিরে রত্নার অবস্থা দেখে আর তার মুখে ব্যাপার শুনেই মাথায় যেন আগুন ধরে যায় রগচটা হারেনের। প্ৰচণ্ড আক্লোশে গোকুলের ঘরে গিয়ে গলা ফাটিয়ে সে গালাগালি দিতে আরম্ভ করে রাণীকে। রত্নাকে দেখতে যাবে বলেই রাণী প্রাণপণ চেষ্টায় কোনো রকমে উঠে বসেছিল। কিন্তু উঠে দাঁড়াবার জোর পায়নি। হঠাৎ ভয় পেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। গোকুল যখন ফিরে এল, ডাওগার তাকে পরীক্ষা করছে। বাড়ির অন্য ভাড়াটেরা ডাক্তার এনেছিল। ডাক্তার বিদেয় নেওয়া পর্যন্ত গোকুল চুপ করে রইল। তারপর সোজা গিয়ে হরোনের গালে বসিয়ে দিল এক চড়। অসভ্য জানোয়ার ! মেয়েদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে, তুই পুরুষ হয়ে মেয়েছেলেকে মারতে যাস ! তোকে আমি খুন করব। ঘটনাটা মঙ্গলবারের। সভা ডাকা হয়েছিল শনিবার বিকালে।