পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র নবম খণ্ড.pdf/৩৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মীমাংসা রাত নটার সময় গভীর চিস্তিত মুখে পঙ্কজ বাড়ি ফেরে। আজ আর কাগজের আপিসে বসে থাকতে ইচ্ছা হল না। এত আশা করে বেরিয়েছিল যে টাকার ব্যবস্থা বোধ হয় হয়ে যাবে, সম্ভব হবে সংকট কাটিয়ে উঠে কাগজটা চালু রাখা। ভূদেবের মুখ দেখেই সে অনুমান করেছিল, আশা তার পূর্ণ হবে না। টাকার জন্য ভুদেবের যে চেষ্টা সফল হবে মনে হচ্ছিল, সেটা নিশ্চয় ভেস্তে গেছে ! ভূদেব অবশ্য প্রথমেই বলেছিল, এ পার্টি টাকা দিতে রাজি আছে। ভূদেবের মুখ আর বলার ভঙ্গি দেখে তবু পঙ্কজ আশা করতে ভরসা পায়নি। ভূদেবের পরের কথায় জানা গেল যে তার আশঙ্কাই সত্য। ঈশ্বরলাল টাকা দিতে রাজি আছে, কিন্তু কেবল তাদের শর্তে নয়, আবও একটা শর্ত সে চাপাতে চায়। কাগজের পলিসি সে খানিকটা নিয়ন্ত্রণ করবে। এই শ৩ে এর টাকা নেওয়া যায় কী করে। আজ তিন বছর যে নীতি অনুসরণ করে, তারা দুই বন্ধু প্ৰাণপণ চেষ্টায় কাগজটা চালিয়ে এসেছে, সেই নীতিই যদি বদল করতে হয়, তার চেয়ে কাগজ বন্ধ করে দেওয়াই ভালো। তাব মুখ দেখে ছোটােবোন কল্যাণী একটু ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করে, টাকার ব্যবস্থা হল না। प्रॉनों ? না। দেশের স্বার্থের বদলে ওদের স্বাৰ্থ দেখবার পলিসি নিলে টাকা দেবে। জামাকাপড় ছেড়ে স্নান করে পঙ্কজ সবে বাথরুম থেকে বেরিয়েছে, কল্যাণী বলে, বিভাদি একটা চিঠি দিয়ে গাড়ি পাঠিয়েছে দাদা। পঙ্কজ খাম খুলে চিঠি পড়ে। দুলাইন চিঠি-বিভার বড়ো বিপদ পঙ্কজ যেন এখুনি একবার যায় । বিভাদি কী লিখেছে ? পঙ্কজ চিঠিখানা তার হাতে দেয়। চিঠি পড়ে কল্যাণী বলে, নিশ্চয় গুরুতর কিছু ঘটেছে। নইলে এমনভাবে ডেকে পাঠায় ? খোড়া মেয়েটার কথা ভাবলে এমন কষ্ট হয় ! পঙ্কজ বাইরের ঘরে গিয়ে বিভার বাবা নগেনের ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করে, কী হয়েছে ? বিপিন বলে, কিছু তো হযনি। আমায় চিঠি দিয়ে আপনার কাছে আসতে বললেন। আমি কাগজের আপিস হয়ে আসছি। দিদিমণি আপনাকে নিয়ে যেতে বলেছেন। পঙ্কজ বলে, আজ আমি যেতে পারছি না। দিদিমণিকে গিয়ে বোলো, কাল সময় করে যাব। কল্যাণী যেন স্তম্ভিত হয়ে যায। একটা খোঁড়া মেয়ে এমন করে বিপদের কথা লিখে যেতে বলেছে, তুমি যাবে না। দাদা ? কাল গেলেও চলবে। তেমন জরুরি ব্যাপার হলে কী বিপদ, সেটা খুলে লিখত। চিঠিতে লেখা যায় না, এমন হতে পারে তো ! মেয়েদের কত কী হয়। পঙ্কজ বােনের মুখের ভাব দেখে একটু হেসে বলে, মেয়েরা আবার সামান্য কারণে পাগলও