পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র নবম খণ্ড.pdf/৪৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হরফ 3やが、 এলে খিল দেওয়ামাত্র আগের মতো আর দুহাতে আমাকে বুকে জড়িয়ে হাজার খানেক চুমু খান না, বেশ ভদ্রভাবে সস্তপণে আদর করেন। কোনো রকম ঝগড়াঝাটি বা সামান্য মনাস্তবও কখনও হত না। আগের মতো দরকারের চেয়ে বেশি শাড়ি-ব্লাউজ, সাবান পাউডার-মো-ক্রিম এনে দিচ্ছেন, বেড়াতে আর সিনেমা দেখাতে নিয়ে যাচ্ছেন, হাসিমুখে কথা বলছেন, তবু যেন আমার মনে হত। মানুষটা কেমন ঝিমিয়ে যাচ্ছে, তফাতে সরে যাচ্ছে। তাছাড়া বাইরে সময় কাটানোর স্বভাবাটাও তার বাড়তে লাগল। শেষে একদিন রাত্রে বাড়িই ফিরলেন না। কৈফিয়ত দিলেন যে বন্ধুর বাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। দোকান থেকে একেবারে চুল ছটিয়ে, দাড়ি কামিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন, তবু মুখখানা বড়ো বেশি শুকনো দেখাতে লাগল। আমার মনটা খুঁতখুঁত করতে লাগল। কয়েক দিন পরেই আবার রাতে বাড়ি ফিবলেন না। তারপর দু-চারদিন পরে-পরেই, রাত্রিটা বাইবে কাটিযে আসতে লাগলেন। আমার যে তখন কী অবস্থা হল বুঝতেই পাবছি ! একেবারে যেন হতভম্ব হয়ে গেলাম। কেন এমন হল কিছুই বুঝতে পাবলাম না। আমার মুখের দিকে চেয়ে যিনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিতেন, একটা রাত আমায় ছেড়ে থাকতে হলে যার প্রাণ ছটফট করত, তিনি আমায় ফেলে সরারাত বাইরে হইচই করে কাটাতে আবিস্তু করেছেন। দাম বাড়ার বদলে এতই দাম কমে গেল আমাব ! প্রথম কিছুদিন রাত্রিটা বাইরে কাটিয়ে সকালে অথবা বিকালে একেবারে আপিস থেকে বাড়ি ফেববার সময় নিজেকে ভালো করে মেজেঘষে আসতেন, আমি যাতে চেহাবা দেখে কিছু টের না। পাই। কিন্তু একদিন রাত প্ৰায় তিনটার সময় মাতাল অবস্থায বাড়ি ফিরলেন। ধরাধবি কবে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আমি কঁদতে লাগলাম। হঠাৎ দেখি, তিনিও উঠে বসে দুহাতে মুখ ঢেকে কঁদিতে আবস্তু কবেছেন। দেখেই আমার কান্না বন্ধ হয়ে গেল!! আমি ভাবলাম, মাতাল অবস্থায় আমার কান্না দেখে বুঝি বাঙ্গ করছেন। ধমক দিয়ে বললাম, কী মাতলামি আবিস্ত করেছ ? তখন তিনি কত কথাই যে বললেন। অবশ্য নেশার ঘোরে জড়িয়ে জড়িয়েই কথাগুলি বললেন, মাতাল অবস্থায় সে রাত্রে বাড়ি না ফিরলে হয়তো কোনোদিন আমায় বলতেন না। সব কথা তোমাদের শুনে কােজ নেই, আসল কথাটা শোনো। তিনি বললেন, আমি সত্যি পশু, অপর্ণা। কিছুতে নিজের পশু প্ৰবৃত্তি চেপে রাখতে পারি না। কিন্তু তুমি তো আমার বউ, আমার সস্তানের জননী হবে তুমি, তোমায় কী করে নীচে নামাই ? তাই বাইবে একটু হইচই কবে আসি, আমায় তুমি মাপ করে । আরও অনেক কথা বলতে বলতে তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। বাকি রাতটা আমি জেগেই কাটিয়ে দিলাম। কত কথাই যে ভাবতে লাগলাম তার ঠিকানা নেই। ওঁর এই অবস্থার জন্য কে দায়ি বুঝতে আমার আর বাকি রইল না। সকালে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে প্রথম খেয়াল হল, এতদিন ওঁর ওপর কী অত্যাচারই করেছি। বেঁধে মারার একটা কথা আছে না ? এত তেমনিভাবে মেরেছি ওঁকে। মনের জোর ওঁর কম নয়, আমি যদি তফগতে থাকতাম বা অসুখ হয়ে পড়ে থাকতাম তাহলে কোনো কথা ছিল না, কিন্তু প্ৰথম যৌবনের লাবণ্যে ঢলঢল শরীর নিয়ে সর্বদা চোখের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছি, কত রকম ভালোবাসার খেলা খেলছি, পাশাপাশি শুয়ে রাত কাঁটাচ্ছি, সবসময় ওঁকে উত্তেজিত করে তুলছি, অথচ ধরা দেওয়ার বেলায় আমার আসছে পাগলামি ! ভাবতে ভাবতে এ কথাটাও বুঝতে পারলাম, তিনি যাকে নিজের পশুবৃত্তি ভেবে নিজেকে অশ্রদ্ধা করছেন, সেটা এ রকম অবস্থায় এমন প্ৰচণ্ড না হয়ে উঠলেই বরং ওঁকে অসুস্থ মনে করা চলত। একজন সুস্থ সবল জোয়ান মানুষ, সে যে একটি মেয়েকে ভালোবেসে তাকে বিয়ে করে এনে