পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র নবম খণ্ড.pdf/৪৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8tro মানিক রচনাসমগ্ৰ ধনদাসকে খুন না করে উমাবাবু তাই ওকে ফাঁসিয়ে ফাঁসিয়ে ডুবিয়ে ডুবিয়ে সাজা দেবার সুযোগ হিসাবে চাকরিটা নিয়েছেন। খানিকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে থেকে একটা নিশ্বাস ফেলে কালাচাঁদ বলে, পারবেন না। উনি গায়ের জ্বালায় মিথ্যা প্রতিশোধের স্বপন দেখছেন। সবকিছু বড়োকত্তার হাতের মুঠোয়-ওনাকে গোলামের মতো চাকরিই করতে হবে। উনি কিছুই করতে পারবেন না। মানব খুশি হয়ে বলে, ঠিক ধরেছ। এভাবে চাকরি নিয়ে গোলাম হয়ে কি ধনদাসদের ফাসানো যায় ? নিজের মনের জ্বালায় শুধু জ্বলে মরা । তবু আমি উমাবাবুকে বারণ করিনি। পুতুলদির জন্য প্ৰাণের জ্বালা তো আছেই-ঘরেই থাকুন। আর জ্বালা জুড়েবার সুযোগ খুঁজে চাকরিই করুন-জুলা ওঁর নিভবে না। ছ-মাস এক বছর যদি পারেন তো করুন চাকরিটা-ছেলেমেয়েগুলো খেয়ে বাঁচবে। আত্তি আগের মতোই ঘরে আসে যায়, কথা বলতে বলতে যেন খেলার ছলেই টুকটাক কয়েকটা কাজ সেরে দেয় -সে না করলে যা মানবকেই করতে হত। কালাচাঁদের লেখার নমুনা এনে শোনায়। বলে, বাবাকে ধমকে দিয়েছি। মা ফিরে এসেছে, কুঞ্জর মা চোখ পেতে রেখেছে, সবাই দেখেছে-কেন আসিব না ? বদনাম মোদের দেবেই বদ লোকে- সে ভয়ে কি কুঁকড়ে থাকব ?-আত্তি হাসে। সবাইকে বলেছি।--বেতন নিয়ে তোমার ঘরে বি-র কাজ করি। একেবারে মিছে কথা হবেতাই তোমায় ঘরটা বেঁটিয়ে দিই, উনানটা ধরিয়ে দিই আমায় বলে কয়ে উনানটা ধরাতে তো হয় ? রাধব কি না খাব কি না ঠিক নেই-মিছিমিছি উনান ধরিয়ে কয়লা পুড়িয়ে ছাই করা ! আত্তি রেগে মাথা উচু করে দুচোখে অনুশাসন ফুটিয়ে বলে, রাধবে কি না ঠিক নেই মানে ? দুবেলা রাঁধবে, দুবেলা পেট ভরে খাবে। না খেয়ে মানুষ বঁচে ? না খেয়ে মানুষ খাটতে পাবে ? অমন ছাই লেখা দিয়ে কাজ নেই, লেখা চুলোয় দিয়ে সেই চুলোয় ভালো ভালো রান্না বেঁধে পেট ভরে খেলে অনেক ভালো হয়। আরশিতে একবারটি তাকিয়ে দ্যাখো না কী চেহীরা হয়েছে নিজের ? ভালো ভালো জিনিস রোধে খাবার পয়সা কে দেবে ? আদায় করবে। তোমার লেখা যাদের দরকার তারা পয়সা না দিলে লিখবে না ! আক্তির নির্ভয় নিশ্চিন্তু ভাব-আদায় করাটা যেন সংসারে এমনি সহজ ব্যাপার ! তবে হ্যা, লেখকের খামখেয়ালি করতে হওয়ার কুসংস্কারে কতগুলি বাজে ঝোকে মানব যে এত কষ্টে রোজগার করা পয়সা নষ্ট করত-আত্তি ও রকম কয়েকটা পাগলামি সামাল দিয়ে সে পয়সাটা দুবেলা পেটে অন্ন দেবার ভেঁাতা বিশ্ৰী একঘেয়ে দরকারে লাগাতে তাকে বাধ্য করেছে। ধোঁয়ার চেয়ে খাদ্য যে ঢের বেশি দামি এই সহজ সত্যটা তার মাথায় ঢোকাবার চেষ্টা করে চলেছে। অবিরাম। হয়তো লিখতে লিখতে মুখ না তুলেই মানব বলে, বেশি বকবক না করে এক প্যাকেট সিগ্রেট আনিয়ে দিলে সত্যিকারের কাজ হত আত্তি। বালিশের নীচে পয়সা আছে। সিগারেট, এক বান্ডিল বিড়ি আর একজোড়া ডিম নিয়ে আসে ! গনগন করে উনান জুলছে। চটপট অল্প তেলে একটা ডিমের মামলেট ভেজে চা করে এনে দিয়ে বলে, বুদ্ধির গোড়ায় খালি ধোঁয়া দিলেই হয় না-পেটের পূজা না করলে বুদ্ধি ভেঁাতা হয়ে यः । বেশি খেলে লিখতে পারি না যে ! আত্তি গালে হাত দেয়।