পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র নবম খণ্ড.pdf/৪৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হরফ 8br> একটা ডিমের মামলেট আর এক কাপ চা তোমার বেশি খাওয়া ? না খেয়ে লিখে লিখে কী ছুচিবইটাই করেছ ! মোদের তুমি আবার ছুচিবইয়ের খোচা দাও ! মুখে যাই বলুক মানব সংগ্রহে মামলেট মুখে দিয়ে পরম আয়াসে চা খেতে শুরু করেছে দেখে আত্তি খুশি হয়ে বলে, মা-র ক-টা কাজ সেরে আসি। বাবার একটা লেখা শোনাব। কালাচাদি নতুন নিয়ম করেছে লেখার সাধনা চালাবার। সারাদিন খেটে এসে সে মানবের ঘরে বাতির আলোয় শুধু পড়ে --আধঘণ্টা পড়ে হাই তুলতে শুরু করে কিন্তু প্ৰাণপণ চেষ্টায় আরও আধঘণ্টা পড়া চালিয়ে যায়। অরপর কঁকার-ভরা চালের ভাত বা পচা আটার বৃটি এবং ডাল-তরকারি যা আত্তির মা দেয়। তাই গোগ্রাসে গিলে বিছানায় চিত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। রোজ একসময়ে না হলেও খানিকটা রাত্রি বাকি থাকতেই সে জাগে এবং আলসেমির অভ্যস্ত মোহ কাটিয়ে গায়ের জোরে উঠে পড়ে মুখে চোখে জল দিয়ে এক জামবাটি জল খেয়ে একটা বিড়ি ধরিয়ে লিখতে বসে যায়। লেখার জন্য মানবের জোর আলোর বড়ো ল্যাম্পের মতোই একটা ছোটো ল্যাম্প সে কিনেছে। মানবের ল্যাম্পটা সমস্ত ঘর আলোকিত করে- একেবারে লেখার কাগজের মাথার কাছাকাছি বসালে কালাচাদের ছোটো ল্যাম্পটা ঘরে আলো ছড়ায় সামান্য-কিন্তু তার লেখার কাগজে প্রায় মানবের বড়ো ল্যাম্পের মতোই আলোকপাত করে। একটা মানুষ খাটতে যাবে। খেটে যেমন হােক কিছু সে পয়সা আনবে। সারাদিন খাটতে যাওযার জন্য তাকে খাইয়ে পরিয়ে তৈরি করে দিতে হবে বইকী। কালাচাঁদ খেতে বসলে তার নতুন লেখার নমুনা নিয়ে আত্তি মানবের ঘরে আসে, বলে, শোনো দিকিনি বাবার এ লেখাটা কেমন হয়েছে ? লেখাটা পড়া চলতে চলতেই কোনোদিন কালচাদ খাওয়া শেষ করে এসে একপাশে বসে, কোনোদিন লেখা পড়ে শেষ হবার পর মানবের মাস্তব্য শুরু হওয়ার পর আসে। সেদিন বড়েই উৎফুল্ল মনে হয় আক্তিকে। ঘরে এসেই চাপা উত্তেজনার সুরে সোৎসাহে বলে, বাবা একটা কবিতা লিখেছে মানুবাবু ! মানব প্রফ দেখছিল। মুখ তুলে বলে, কবিতা লিখেছে ? হতেই পারে না। কালাচাঁদের কবিতা লেখার ক্ষমতা নেই আত্তি। কালাচাঁদ ছড়া লিখেছে। কবিতার মতো যা কিছু লিখবে, সব ছড়া হয়ে যাবে। আত্তি ফুসে উঠে, বটে নাকি ? তবে শুনে কােজ নেই। কবিতা লিখবে তোমরা আর মোর বাবা কবিতা লিখলে তা হবে শুধু ছড়া ! অত খায় না ! মানব হেসে বলে, ছড়া কি কবিতার চেয়ে ছোটো রে পাগলি ? একটা ছড়া মুখস্থ হয়ে যায় সব মানুষের-হাজার কবিতা শূন্যে মিশে যায়। আত্তি নম্র হয়ে বলে, তাই বলো- ও সব কী আমরা জানি বুঝি ? কথা শুনে ভাবলাম কবিতা না লিখে ছড়া লেখা মহাপাপ-মোর ব্যাপটা বুঝি পাপ করেছে। ছড়াটা শোনা না আত্তি, বেশি বকবক না করে ? ছড়া শুনে মানব অনেকক্ষণ চুপ করে থাকে। তার ভাব দেখে আত্তিও মুখ ফুটে তার মতামত জিজ্ঞাসা করতে সাহস পায় না। শেষে বিরক্ত হয়ে বলে, কী হল ? কিছু বলবে তো ? কিছু বলতে পারছি না যে ? একবার মনে হচ্ছে অদ্ভুত রকম ভালো হয়েছে-আবার মনে হচ্ছে সবটা ছেলেমানুষি ব্যাপার । মানিক ৯ম-৩২