পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র নবম খণ্ড.pdf/৪৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8sto মানিক রচনাসমগ্ৰ বড়ো স্নেহ করি মেয়েটাকে। পাত্র খুঁজছি-আমি সেকেলে মানুষ, মেয়েদের অল্পবয়সেই পাব করা ভালো মনে কবি। পাণ-টন বিশেষ দেব না।--তবে নাতজামাযের উন্নতি করিয়ে দেব। ওটা কবতেই হবে, ওটা কর্তব্য, কী বলুন ? তা বইকী। অল্প মোটা শ্যামবর্ণ ব্ৰতচারিণী মেয়েটি তাদের দুজনকে পরিবেশন করে। মেয়ে দেখানো নয, এ নিমন্ত্রণ। ধনদাস কি মেয়ের দালাল না ঘটক যে তাকে বাড়িতে ডেকে মেয়ে দেখাবে ? কিন্তু লজ্জায়, ভয়ে, ঘামে ও অকাল যৌবনের অসীম কৌতুহলে আত্মহারা বেচারি মেযেটিকে একবার দেখে ঘাড় হােঁট করে উমাকান্ত ভাববার চেষ্টা করে যে ধনদাসের কাছে না জানি সে কত বড়ো অর্থলোভী ভিক্ষুক, লম্পট এবং ছোটােলোক। নতুবা তাকে এভাবে এই বেশে মেযেটিকে দেখানোর কথা ধনদাস কী কবে ভাবতে পারল ? মেয়েটির গাযে শেমিজ নেই, ব্লাউজ নেই, পরনের শাড়িখানা প্ৰায মশাবির কাপড়ের মতো স্বচ্ছ ! এ কী সত্যই ধনদাসের পরিকল্পনা ? ধনদাস বোকা নয়। সে নিশ্চয় জানে এভাবে মানুষকে উত্তেজিত করা যায় কিছুক্ষণের জন্য, কিন্তু সে উত্তেজনা থেকে সামাজিকভাবে বিযে করে কোনো মেযেকে জীবনসঙ্গিনী করাব সুস্থ কামনা মানুষেব জাগে না । ব্যাপাব সে বুঝতে পারে, খাওয়ার পর বৈঠকখানার বদলে দোতলার একটি সুন্দব সুসজ্জিত ঘরে বিশ্রামের অনুরোধ পেযে। গড়গড়ায় তামাক আসে-সুগন্ধি তামাক। দু-চাবটা টান দিয়ে ধনদাস নলটা তাব দিকে এগিযে দিয়ে বলে, বিশ্রাম কবুন। প্রেসে যান তো যাবেন, নইলে ছুটি নিন। আজকের দিনটা। আমিও শুইগো একটু। তারপর আসে মেয়েটি, তাব হাতে পানের রেকবি। ইতিমধ্যে তার বেশ কিন্তু বদল হযে গেছে। শায়া-ব্লাউজ গায়ে উঠেছে, তঁাতের একখানা ডুরে শাড়ি পবেছে । পান নিন। e উমাকাস্তের কেমন ভয় করতে থাকে। মেয়েটিকে তাব ঘাড়ে চালান করে দিতে এমন মবিষা হযে উঠেছে কেন ধনদাস যে সাধাবণ কাণ্ডজ্ঞান পর্যন্ত তার লোপ পেয়েছে ? কিন্তু কাণ্ডজ্ঞান কি কখনও লোপ পায়, ধীর-স্থিবি চালাক-চতুর পূড়িবাজ ধনদাসের ? মতলব না ছকে সে কোনো কাজ করে না। সস্তায় দূর সম্পর্কেব আশ্রিতা মেয়েটির একটি পাত্র জোটানোর মতলবটা সহজেই বোঝা যায়, উমাকাস্ত শুধু বুঝতে পারে না তাকে ফঁাদে ফেলবার জন্য বিশেষ কী ফন্দিটা সে এঁটেছে। শুধু মেয়েটিকে এভাবে সামনে ধরার মতো স্কুল উদ্ভট উপায়েব উপরে ধনদাস নির্ভর করেছে। এ কথা বিশ্বাস হয় না। অত কঁাচা মানুষ ধনদাস নয। তাছাড়া মেয়েটিকে পাব। কবার কীসের এত তাগিদ যে, খেলিয়ে তোলার বদলে বর্শায গাথবার মতো এই স্পষ্ট অভদ্র উপায়টা তাকে অবলম্বন করতে হযেছে। তোমাব নাম কী ? সুধা। আচ্ছা সুধা, এবার তুমি যাও। আমার আর কিছু দরকার নেই। আমায় গল্প করতে বলেছে আপনার সঙ্গে । আর কী বলেছে ? বলেছে-সুধা এক মুহূর্ত ইতস্তত করে, তারপর সোজা তার চােখের দিকে চেয়ে বলে, বলেছে আপনি আমার হােত-টাত ধরলে যেন