পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র নবম খণ্ড.pdf/৪৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 মানিক রচনাসমগ্ৰ আবার তুমি কেন এলে কালাচান্দ ? বাবুর স্পষ্ট হুকুম তোমায় এক মাস প্রেসে ঢুকতে দেওয়া হবে না। ছোঁয়াচে রোগ। কিনা !-ওনাব ভয়ানক আতঙ্ক, তোমার দূরে থাকাই ভালো কিছুদিন। স্তিরি। আজ মারা গেছে। বাবু ! ভোরবেলা। (62, ? \33 - উমাকাস্ত স্তব্ধ হয়ে থাকে। কিছু টাকা নিতে এসেছিলাম। বাবু ! স্তিরির সৎকাবে লাগবে। ও মাসে কেটে নেবেন। আর ছুটিফুটি দেবেন না। বাবু, ছুটি চাইনে !! ছুটি নিলে কি মোদেব চলে ? কী করা যায় ! কী করে একে বুঝানো যায় যে, বাড়িতে এ সব রোগ হলে বরখাস্ত করার বদলে বিনা বেতনে এক মাস ছুটি দেওয়া ধনদাস বিশেষ অনুগ্রহ বলে মনে করে ! গভীর বিতৃষ্ণায় উমাকাস্তের দেহমানে কেমন একটা অস্থিরতা ঘনিযে আসে। ধনদাস হুকুম দিযেই খালাস-এদের সঙ্গে সরাসরি খারাপ ব্যবহার করার দায়টা চাপিযে দেওয়া হয় তার ঘাড়ে। যার স্ত্রী আজ সকালে মারা গেছে, অমানুষ দানবের মতো কী কবে তাকে বলা যায যে, আব আগাম টাকা হবে না, অবিলম্বে তুমি প্রেস থেকে বেরিযে যাও ! অথচ না বলেও উপায় নেই। খেদেব সঙ্গে সে বলে, টাকা তো হবে না। কালচাদ । ঘবে মড়া পচবে বাবু ? উমাকােস্ত চোখ বোজে। বলে, ধার-টার করে জোগাড় করে নাও। কে আর ধার দেবে বাবু ? কালাচাঁদ যেন হন্যে কুকুরের মতো ঘেউঘেউ করে কথা বলে, যদিও কথাগুলি বলে অতি সাধারণ-স্তিরি, আর পিসিকে ধরেছেন শেতলা ! অ্যাদিন চিকিৎসে হল কীসে ? ধার করতে বাকি বেখেছি কোথাও ? আপনিই তবে ধার দেন। বাবু ক-টা টাকা । ও মাসে ঘটিবাটি বেচে শোধ কবে দেব। উমাকাস্ত ধাব দেবে ? টাকা কই তার কাছে ! পুতুলোেব আপনজনদের আবামের ব্যবস্থা কবতে নিজেকেই তাব টাকা ধার করতে হয়েছে মাসেব মাঝামাঝি-বেতনেব টাকাব্য কুলায়নি। তবে সামনেব। মাস থেকে ওদের খবচ হবে আলাদা । আমার হাত একেবাবে খালি। জানি বাবু, জানি ! কালাচাঁদ খোঁকিয়ে ওঠে। নিরীহ গোবেচাবি কালাচাঁদ যেন সব জানে তাই তার আব্ব কিছু বলবার নেই ! সে যেন জানে যে, উমাকান্তরা নিজেদের স্ত্রীদের খুন হতেও দেয়। আবার কালাচাদের স্ত্রীরা মরে গেলেও দশটা টাকা ধার দেওয়া কর্তব্য মনে কবে না। ব্লটিংয়ে আঁচড় কাটে উমাকান্ত। নিজেকে সত্যই তার অপরাধী মনে হয়-বউ মরে গেলে তাকে পোড়াবার জন্য টাকার খোজে হন্যে হয়ে বার হতে হয়। কালাচাদের-এ অবস্থার জন্য 6भ- (यन्नं प्रलॉग् ि। মুখ তুলে সে ধীরে ধীরে বলে, আমার কাছে টাকা থাকে না জানো তো ? একটু অপেক্ষা করো, বাবু আসুন। উনি অবশ্য স্পষ্টই বলে দিয়েছেন তোমায় আব্ব আগাম টাকা দেওয়া হবে না। তবু একবার বলে-কয়ে চেষ্টা করে দেখি । কালাচাঁদ সহকমীদের কাছে যায়। সকলেই কাজ বন্ধ করে তাদের কথা শুনছিল। সে গলা চড়িয়ে সকলকে শুনিয়ে বলে, তা হবে না। ক-টা টাকার অভাবে কালাদার বউ মরে গিয়ে ঘরে পচবে-আমরা তা হতে দেব না।