হরফ (? :\3 এ কথাও কেউ ভাবতে পারেনি যে প্ৰিযনাথের বাড়িতে না উঠে সে মহেশের বাড়িতে এসে আশ্রয় নেবে। এই শহরেই তার ভাইয়ের বাসা আছে। ভাইয়ের বউয়ের খুব অসুখ-,-আজি মবে কাল মরে অবস্থা । দিল্লি থেকে এসে সরাসরি ওখানে উঠলে লোকে অনায়াসে মনে করতে পারত যে গন্ডগোল কিছুই হয়নি-ভাইয়ের বিপদের সময় বোন সরাসরি ভাইয়ের কাছে গেছে। কোনো খবর না দিয়ে মালপত্র নিয়ে একেবারে মহেশের বাড়িতে এসে ডেরা বাঁধা ! বলে কয়েই অবশ্য উঠেছে। কিন্তু বলা কওয়ার কী ধরন । মালপত্র সমেত ট্যাক্সি বাড়ির সামনে থামিয়ে নিজে নেমে ভেতরে এসে বলে, কয়েকদিন থাকব। ভেবে এলাম। আপনাদের আবস্থাও সুবিধের নয় জানি-দু-একদিনের বেশি বিনা খরচায় রাখতে চাইলে কিন্তু কেটে পড়ব। ছাঁটাই হয়েই এসেছি। কিন্তু হাতে কিছু জমেছে-খরচপত্র নিতে হবে। মন্দ্ৰা রেগে বলে, গেট আউট-এ-খুনি আপনি গেট আউট অপর্ণাদি। আপনি জানেন না। যদিন ইচ্ছা এ বাড়িতে থাকতে পারেন, আমরা খুশিই হব ? বাড়িতে ঢুকে এভাবে কথা কইছেন ! কী ভাগ্য যে মানব সে সময় হাজির ছিল ! মহেশের কোমরে চোট লাগার ব্যথাটা বাতের বেদনায় পরিণত হয়েছে, মাঝে মাঝে দু-একদিন সে বিছানা ছেড়ে উঠতে পারে না এবং হরফের কাজের জন্য মানবকে তার বাড়িতে এসে অনেকক্ষণ কাটাতে হয়। মানব না থাকলে মন্দ্ৰই হয়তো অপৰ্ণাকে অপমান করে রাগিয়ে হােটেলে চালান করে দিত। মানব প্রায় ধমকের সুরে বলে, সব ব্যাপারে ছেলেমানুষের ছ্যাবলামি করা উচিত নয় মন্দ্ৰা। উনি তো ঠিক কথাই বলেছেন ! সে সব দিনকাল কি আর আছে ! এ রকম সেকেলে ছেলেমানুষি করার জন্যই আজকাল আত্মীয়বন্ধুর মধ্যে ক্ৰমাগত বিচ্ছেদ ঘটছে দেখতে পাও না ? অপর্ণা যেন প্ৰাণ ফিরে পায়। খুশি হয়ে “লে, শুনুন তো মেয়ের কথা ! আমি তিন-চারমাস থাকিব বলে এসেছি, মহেশবাবুর এতকালেব চাকরিটা গেছে জানি, খবচ নেবেন কি না স্পষ্টস্পষ্ট কথা না কয়ে আমি উঠতে পারি। ওনার বাড়িতে ? খরচ নেবার কথা বলে আমি যেন ওদের অপমান করেছি। ! মন্দ্ৰা কেঁদে ফেলতেই অপর্ণ তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে- পদিস নে। তিন মাস কেন, হয়তো ছ-মাস এক বছরও থেকে যেতে পারি। পথের বেশ ছেড়ে একেবারে নেয়ে এসে মলয়ার নিরামিষ সস্তা ঘিয়ে ভাজা গরম গরম লুচি বেগুন ভাজা দিয়ে খেতে খেতে অপর্ণা নিজে থেকেই তার ব্যাপার বলে, পার্মানেন্ট পোস্ট, ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল ! একবার অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিলে কাজ থেকে তাড়ানো কঠিন ব্যাপার ? বড়ো বড়ো কয়েকজনের কথার ভাবে বুঝলাম, আমার মতো শিক্ষিতা নামকরা লেখিকা পাওয়াই যায় না-ঠিকমতো কাজ করে গেলে হয়তো একদিন আমার হাজার টাকা মাইনে হবে, ডিপার্টমেন্টটা আমিই চালাব। কয়েকটা মিথ্যে অজুহাত দেখিয়ে পট করে খেদিয়ে দিলে ! মানব বেগুন ভাজা বাতিল করে কয়েক চামচ ডাল দিয়ে মোটে দুখানা লুচি খেয়ে হাত গুটিয়ে বসেছিল। অপর্ণার বলার ভঙ্গিতে সে সশব্দে হেসে ওঠে।