পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র নবম খণ্ড.pdf/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

28 মানিক রচনাসমগ্ৰ হেমেন শচীনকে জিজ্ঞাসা করে, সারবে ? শচীন বলে, সব নির্ভর করছে চিকিৎসা চালিয়ে যাবার ওপর। অনেকদিন টানতে হবে। বিষম २ट्रb } হেমেন বলে, তা হচ্ছে। ভদ্রলোক সত্যি ভাগ্যবান---এমন চালাক চতুর স্ত্রী পেয়েছিলেন। রমা। বলে, আগে মোটেই এ রকম ছিল না। হারাণবাবুর অসুখটা ধরা পড়বার পর কেমন অদ্ভুত রকম পালটে গেছে। রীতিমতো বিস্ময়ের সঙ্গেই সকলে এটা লক্ষ করেছিল। সমস্ত দায়িত্ব লতা একা নিয়েছে, একা সব পালন করে চলেছে। বাইরে গিযে ওষুধ-পথ্য কিনে আনা থেকে হারাণের সেবাশুশ্রুষা সব কিছু দায়িত্ব। চিকিৎসা আর আনুষঙ্গিক ব্যবস্থাগুলি যে সত্যই কী বাজসিক ব্যাপাব সেটা কারও অজানা নেই। মেয়েরা কৌতুহলের বশে একে একে সকলেই লতাব কাছ থেকে খুটিয়ে খুঁটিযে জেনে নিয়েছে কী দিয়ে কী হয় এবং কীসে কী লাগে। লতা কিছুই গোপন করেনি। বরং যারা গোড়ায় আতঙ্কগ্ৰস্ত হয়ে বাডি থেকে তাদেব তাড়াতে ব্যাকুল হযেছিল, জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যে তাদের যে সমবেদনা প্ৰকাশ পায় তাতে সে খুশিই হয়। কিন্তু লোকের মনে প্রশ্ন জাগে, কতদিন এভাবে চালাবে লতা ? কী করে চালাবে ? তাব অবস্থাও তো কারও অজানা নয় ! তাই মাস দুই পরে লতার মুখে দুশ্চিস্তার কালচে ছায়া পড়েছে দেখে বামা হেমেনকে বলে, আর বুঝি টানতে পারছে না বেচারা। হেমেন বলে, কী করে টানবে ? এ তো জানা কথাই। øy অনেকক্ষণ ইতস্তত করে সেদিন প্রথম রমা ছাদে যায়-স্নান কবার আগে যায নীচে নেমেই সাবান মেখে নেয়ে সব ছোঁয়াছুয়ি ধুয়ে ফেলবে। রামা বলে, কী করে খরচ চালােচ্ছ ? লতা বলে, যা ছিল ফুরিয়ে এল, এবাব কিছু করতে হবে। কী করবে ? দেখা যাক। একটা উপায় করতেই হবে। রমা দারুণ অস্বস্তির সঙ্গে ভাবে কে জানে কী উপায়ের কথা ভাবছে লতা। নিরূপায় মেয়েমানুষ, ভেবে সে কী উপায় বার করবে ! কয়েক দিন পরে বাড়ির সকলে লক্ষ করে যে সকালে ঘরের রান্নাবান্না কাজকর্ম সেরে সাড়ে-দশটা এগারেটার সময় লতা বেরিয়ে যায়। " ফিরে আসে সন্ধ্যার সময়। কী ব্যাপার ? রামাই তাকে জিজ্ঞাসা করে সকলের আগে । লতা বলে, একটা কাজ পেয়েছি। কী কাজ ? লতা একটু ইতস্তত করে বলে, একজনের বাড়িতে নার্সিংয়ের কাজ। এরপর বেশি সে আর কিছু বলে না।