পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র নবম খণ্ড.pdf/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8 মানিক রচনাসমগ্ৰ অনিমেষ তো তাকে বলেই খালাস। তার বিশেষ বন্ধু হলেও চারিদিকে কানু মিন্ত্রিকে নিয়ে কী রকম টানাটানি, আগে থেকে বলে না রাখলে সেও যে কানু মিস্ত্রির পাত্ত পাবে না, এ খবর তো আর ভদ্রলোক রাখে না। ওয়ার্কশপের মধ্যে একটা শূন্যে তোলা গাড়ির তলায় আধশোয়ার মতো বঁকা হয়ে বসে কানু গাড়িটার হৃৎপিণ্ডে কী একটা চিকিৎসা চালাচ্ছিল। নিশ্চয় কঠিন আর গুরুতর চিকিৎসা। কেশব ডাকে, কানু ? কানু বলে, দাঁড়া। বলে প্ৰায় আধঘণ্টা নিঃশব্দে একমনে ইঞ্জিনটার চিকিৎসা চালিয়ে যেন চটেমটেই বেরিয়ে ए5ा6न । গায়ের তেলকালি-মাখা কভারটা খুলে ফেলতে ফেলতে বঁটাঝের সঙ্গে বলে, ব্যাটারা যত সব ধ্যাধোরে পচা-মরা গাড়ি এনে দেবে-আর আমায় সুকুম করবে। কানু সারিয়ে দাও। কেন, গাড়িটা তো নতুন লাগছে ? গাড়ি তো নতুন, ইঞ্জিনটা ঠাকুর্দার চেয়ে বুড়ো। ঠাকুর্দার হাড়ের চেয়ে রদ্দিমাল দিয়ে ইঞ্জিনটা করেছে। শুধু বাইরেটা দেখে এ গাড়িটা কেউ কেনে ? ওয়ার্কশপের মালিক হারেনের পরনে মিলিটারির পরিত্যক্ত ফুলপ্যান্ট আর শার্টে সিভিলিয়ানি সামঞ্জস্য করা বেশ। মুখের চামড়া যেন শুকনো আমসির ছাল দিয়ে গড়া। কাল কিন্তু গাড়িটা ছাড়তেই হবে কানু। রসিকবাবুর ভাগনের গাড়ি। রসিকবাবুর ককাই কিন্তু গাড়ি-টাড়ির ব্যাপারে কর্তা । কানু বলে, গাড়িটার শ্ৰাদ্ধ করতে বলে দিন। হরেন চটে বলে, কী রকম ? কানু বিড়ি ধরিয়ে বলে, চটছেন কেন ? মানুষ মরে গেলে ডাক্তার বাঁচাতে পারে ? মারা একটা ইঞ্জিন পাঠিয়ে আপনাকে বলছে বঁচিয়ে দাও। মুরা ইঞ্জিন বাঁচাতে শিখিনি বাবু। আমার দ্বারা হবে না। ইঞ্জিনিয়ারবাবু যদি বলেন কিছু করা যায়, আমাকে যা করতে বলেন করব। মুখ্যসুখ্য মিস্ত্রি বাবু আমি, ভাঙা-পচা ইঞ্জিন সারাবার বিদ্যে পাব কোথা ? হিরেন বলে, সেরেছে ! শেষে আমার ঘাড়েই চাপাল ? কানু মৃদুস্বরে বলে, কাল হণ্ডা পাইনি, আজ আমার চাই। পাঁচ রোজ ওভারটাইম আছে। হরেন। কয়েক মুহুর্ত পাথরের মূর্তির মতো অপলক চোখে চেয়ে থাকে। তারপর খেদ আর অনুযোগের সুরে বলে, আমার সঙ্গে এ রকম করিস কেন রে ? আমার অবস্থােটা বুঝবি না। তুই ? না। যাকগে বাবু, হগুপ্তােটা দিয়ে দিন। কেশব লক্ষ করে, ওয়ার্কশপের একত্রিশজন কারিগর খানিক তফাতে এলোমেলোভাবে দাঁড়িয়ে আছে। চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। একেবারেই যেন স্বাৰ্থ বলতে তাদের কিছুই নেই। সারা সপ্তাহ খেটেছে কিন্তু হগুপ্ত পাবার জন্য ব্যগ্রতা উগ্ৰতা নেই। চারিদিকে চেয়ে দেখে হরেন বেঁটে রোগা এম এ পাস সুধীরকে হুকুম দেয়, এদের হগুপ্ত দিয়ে հN3 | সুধীর আমতা আমতা করে বলে, একটু মুশকিল হয়েছে। হগুপ্তা দেবার ক্যাশ টাকা নেই। বঙ্গসদন ব্যাংকের চেকটা ক্যাশ হয়নি। ' কেন হয়নি ?