স্বাভাবিক। কেশবের পেটে যন্ত্রণা আরম্ভ হওয়ায় সেই কাছে বসে তার পেটে খালি হাত মালিশ করে দিতে লাগল। ঘরে তেল ছিল না।
পেটের ব্যথা কমতে রাত হয়ে গেল, কেশবের তখন মানসিক সংস্কারগুলি ব্যথায় টনটন করছে। কালাচাঁদ এল অনেক পরে, রাত্রি তখন গভীর। পাড়ার খানিক তফাতে নির্জনে গাড়ি রেখে সে একজন লোক সঙ্গে করে এসেছে। শুধু এ পাড়া নয়, সমস্ত গ্রাম ঘুমে নিঝুম। কেবল কেশবের মনে হচ্ছিল অনেক দূরে সদয় ডাক্তারের বাড়িতে যেন তখনও অস্পষ্ট সুরে সানাই বাজছে।
কেশব কেঁদে বলল, ও বাবা কালাচাঁদ।
আজ্ঞে?
এমনিভাবে মেয়েকে আমার কেমন করে যেতে দেব, আমার বিয়ের যুগ্যি মেয়ে?
এই তো দোষ আপনাদের। আমাকে বিশ্বাস হয় না? বলুন তবে কী করব। মালপত্র গাড়িতে আছে। তিন বস্তা চাল—
কেশব চুপ করে থাকে। টর্চের আলোয় কালাচাঁদ একবার তার মুখ দেখে নেয়। চােখ দেখে নেয়। চোখ ঝলসানো আলোয় বুনো পশুর চোখের মতো কেশবের জলভরা চোখ জ্বলজ্বল করতে থাকে, পলক পড়ে না।
খানিক অপেক্ষা করে কালাচাঁদ বলে, চটপট করাই ভালো। এই কাপড় জমা এনেছি, শৈলকে পরে নিতে বলুন। মালপত্র আনতে পাঠাই চক্কোত্তি মশায়?
কেশব অস্ফুটস্বরে সায় দেয় না বারণ করে স্পষ্ট বুঝা যায় না। শৈলর মা আরেকটু স্পষ্টভাবে বিনায়।
কালাচাঁদ সঙ্গের লোকটিকে হুকুম দেয়, মালগুলো সব আনাগে যা বদ্যি ওদের নিয়ে। ড্রাইভারকে বলিস যেন গাড়িতে বসে থাকে।
মেঝে লক্ষ করে কালাচাঁদ টর্চটা জ্বেলে রাখে। অন্ধকারে তার গা ছমছম করছিল। বিচ্ছুরিত আলোয় ঘরে রঙ্গমঞ্চের নাটকীয় স্তব্ধতার থমথমে বিকার সৃষ্টি হয়। কেশব উবু হয়ে বসেছে, তার হাতে শৈলর জন্য আনা রঙিন, শাড়ি, শায়া ও ব্লাউজ। ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে আছে শৈল।
একটা তবে অনুমতি করো বাবা।
কেশবের গলা অনেকটা শান্ত মনে হয়।
বলুন।
শৈলিকে তুমি বিয়ে করে নিয়ে যাও।
বিয়ে? আপনি পাগল নাকি?
শৈলর হাতে জামা কাপড় দিয়ে কেশব গিয়ে কালাচাঁদের হাত ধরে। মিনতি করে বলে যে বিয়ে সে বিয়ে নয়। দশজনের সামনে পুরুত যে বিয়ে দেয়, সাক্ষীসাবুদ থাকে, বরের দায়িত্ব আইনে সিদ্ধ হয়, সে বিয়ে নয়। এ কেবল কেশবের মনের শান্তির জন্য।
আমি শুধু নারায়ণ সাক্ষী করে শৈলকে তোমার হাতে সঁপে দেব। তারপর ওকে নিয়ে তুমি যা খুশি কোরো, সে তোমার ধম্মো। আমার ধম্মো রাখো। এটুকু করতে দাও।
দুজন জোয়ান লোকের মাথায় শৈলর মূল্য এসে পড়েছিল। গাঁ উজাড় হয়ে যাক, তবু বেশি লোক সঙ্গে না করে মাঝরাত্রে গাঁয়ের একটা মেয়েকে নিতে আসবার মতো বোকা কালাচাঁদ নয়। একা পেয়ে তাকে কেটে পুঁতে ফেলতে কতক্ষণ।
কেশবের ন্যাকামিতে বিরক্ত হয়ে সে বলল, যা করবার করুন চটপট।
কালাচাঁদের কাছ হতেই দেশলাই চেয়ে নিয়ে কেশব ঘরের এক কোণে শিলারূপী নারায়ণের আসনের কাছে প্রদীপটি জ্বালল। ঘরের বাইরে জ্যোৎস্নায় গিয়ে শৈল নতুন ও রঙিন শায়া ব্লাউজ