পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র পঞ্চম খণ্ড.pdf/২৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&\ova মানিক রচনাসমগ্র বারবার প্রমথ চিঠিখানা পড়ে, তার ধাঁধা ঘুচতে চায় না। শিক্ষাসদন ? এমন শিক্ষাসদন কোথায় আছে যেখানে স্ত্রীদের গড়েপিটে স্বামীর উপযুক্ত করে তুলবার ব্যবস্থা আছে ? সাধন-ভজন জপতপ করে নিজেকে শোধরাবার জন্য কোনো সাধু-সন্ন্যাসীর আশ্রমে যাবার বুদ্ধি করেনি তো গীতা ? অথবা মাথাটা তার খারাপ হয়ে গেছে। একেবারে, পাগলামির ঝোকে একখানা চিঠি লিখে ফেলেছে আবোল-তাবোেল। নিজের দোষ যদি বুঝে থাকে। গীতা, তাই যথেষ্ট ছিল। আদর্শহীন জীবনের ব্যর্থতা টের পেলে, দায়িত্ববোধ জন্মালে প্রমথ নিজেই তাকে সহজ সাধারণভাবে শুধরে मिठ । মনের মধ্যে নানা ভাবনা পাক খায়, কিন্তু নতুন একটা আনন্দ ও উৎসাহও প্রমথ অনুভব করে। তার আশা। তবে একেবারে ব্যর্থ হয়নি। গীতা অন্তত এটুকু ভাবতে শিখেছে যে মনের মিল না হলে তারা সুখী হতে পারবে না ! গীতা কোনো ঠিকানা দেয়নি। প্রমথ ঢাকায় তার বাবার ঠিকানায় জবাব দেয়। লেখে যে গীতা যেন মনে না করে সে তাকে একেবারে তারই মনের মতো ছাঁচে ঢালতে চায়। গীতার ওপর কোনোদিন সে জোর খাটায়নি, কোনোদিন খাটাবার ইচ্ছেও রাখে না। তাদের বিরোধিতার অবসান হলেই তারা সুখী হতে পারবে ইত্যাদি অনেক কথা। একেবারে শেষে সে লেখে : শিক্ষায়তনের নামটা কী, গীতা কোন শিক্ষায়তনে যোগ দিযেছে ? এ চিঠির কোনো জবাব আসে না। কয়েকদিন পরে সুমথ দেখা করতে এলে তাকে সে এ বিষয়ে প্রশ্ন করে। কিন্তু সুমথ গীতার কোনো খবরই বলতে পারে না। গীতা তাদের কাছে চিঠিপত্র লেখেনি একখানাও । খবর নেব ? প্রথম ভেবেচিন্তে বলে, না, থাক । মাস চারেক পরে হঠাৎ একদিন প্রমথ জেল থেকে ছাড়া পায় —আরও কয়েকজন রাজনৈতিক বন্দীর সঙ্গে। বাড়ি পৌঁছে সে দুদিন বিশ্রাম করে, তারপর ঢাকা রওনা হয়ে যায়। গীতার রায়বাহাদুর বাবা অত্যন্ত গভীর মুখে জামাইকে অভ্যর্থনা করেন, এসো। বসে। গীতা ফেরেনি শিক্ষাসদন থেকে ? কোন শিক্ষাসদন ? ও আমায় লিখেছিল শিক্ষাসদনে যাচ্ছে। নাম ঠিকানা জানায়নি কিছু। রায়বাহাদুর ভুবু কুঁচকে তাকান।--শিক্ষাসদন ? ও তো জেলে। (StG ও মেয়ের কথা বোলো না। পাগলের মতো যাতা বক্তৃতা দিয়ে সিডিশনের চার্জে ছমাস জেলে গেছে। ফাইনের ওপর দিয়ে কাটিয়ে দিতে পারতাম, তা কোর্টে ম্যাজিষ্ট্রেটের সামনে এমন সব কথা বলতে লাগল-রায়বাহাদুর মুখে অদ্ভুত আওয়াজ করেন, প্রমথ বুঝতে পারে ওটা আপশোশের আওয়াজ, আগে অনেকবার শুনেছে।--বেশ মিলেছ তোমরা দু জনে। আবার রেলে স্টিমারে পাড়ি দিতে হয়। এবার প্রমথের মনে হতে থাকে মুহূর্তগুলি বড়ো বেশি। দীর্ঘ স্টিমার ও রেল বড়ো আস্তে চলে, সময় কাটতে চায় না। জেলে গীতাকে দেখেই সে বুঝতে পারে তার চেহারার অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। সে চিরদিনই ছিপছিপে, এখন বড়ো বেশি রোগা দেখাচ্ছে। তার চােখে চপল দৃষ্টির বদলে কেমন বিষন্ন হাসিভরা গাম্ভীৰ্য। প্রমথ অনুযোগ দিয়ে বলে, মিছিমিছি জেলে আসবার তোমার কী দরকার ছিল বলে তো গীতু ? প্ৰতিশোধ নিতে ?