পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র পঞ্চম খণ্ড.pdf/৩৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিস্থিতি W খা ! খা ! খা ! মোকে খা ! পাঁজার-ভাঙা মরণ কান্না ঠেলে ওঠে। বুকের মধ্যে। বুড়ো বেঁচে থাক, পচা সুখে থাক, তার কেন মরণ হয় না ভগবান। দিনে রাতে সাপের ছোবল আর সয় না। হেথায় কেন গোল করা শুনুর মা। পচা পড়ছে। ইংরেজি পড় পচা। চেচিয়ে পড়। উচু বাঁধের উপর দিয়ে ট্রেন চলে যায় ঝমােঝমিয়ে। গলগল করে। উগলানো ধোঁয়া পিছনে পড়ে থাকছে গুমোট মরার মতো এলিয়ে। দখিন কোণে দূরের ওই লোহার চােঙা থেকে ধোঁয়া সোজা উপরে উঠছে আকাশের নাগাল পেতে। ওর কাছে স্টেশনটাতে থেমে এসে বেরিয়ে গেল ট্রেনটা । কোঠাবাড়ির মনাবাবুর বউটা কলেরায় মারা গেছে। পরশু, ট্রেনে কি মনাবাবু আজ এলো ? এতদিন আসেনি, বউ মরেছে। খবর শুনে আসবে নিশ্চয়। ছেলেটা হল দেড় বছরের, গা-ভরা ঘায়ে কী কষ্ট ওইটুকু কচি ছেলের। শূনুর বাপিও যদি আসে এই গাড়িতে ! বউটা তার মরেনি, জলজ্যান্ত বেঁচে আছে মরে যাওয়া উচিত হলেও, তবু যদি এখনই আসে, হঠাৎ কোনো মনের খেয়ালে আসে চার-ছমাস আসেনি বলে। যদি নিয়ে আসে রেশনের একজোড়া নতুন শাড়ি, রঙিন একটি শায়া, টুকটুকে লাল কি বেগুনি রঙের। আর সস্তা সাদা গোছের ঘি, পাঁপর, চানাচুর লেবেঞ্জস ট্রাক চলে গেল মাটি কঁাপিয়ে। একটা দুটাে তিনটে। ছিড়ে দিয়ে গেল সব স্বপ্ন, মাড়িয়ে দিয়ে গেল সাধ। বুক দুরু দুরু করে ফুলুর। এখানে উনুনের সামনে বসে সে দেখতে পায় বড়ো প্ৰকাণ্ড জোড়া চাকা রাস্তায় খাদগুলির জল কাদা ছিটিয়ে দিচ্ছে। কানাই। আর নিধুর দুটাে ঘর ডিঙিয়ে জল খাদা ধন ছিটকে এসে তার গায়ে লাগবে এখানে । গলা ফাটিয়ে চেচিয়ে পড়ছে পচা বুড়োকে শুনিয়ে। একটা পাখি শিস দিল। এই ঘর-ছোঁয়া আমগাছটার ডালে। আমের সোয়াদ এবারও জিভে লাগল না, এবারও তিনটে গাছই বুড়ে জমা দিয়েছিল রামশরণকে ! একটা গাছ রাখি নিজেদের জন্যে, ওই বৰ্ণচোরার গাছটা, সবুজ-কালো আমগুলিতে যেন মধু পোরা, কী রং আর কী মিষ্টি গন্ধ। তা নয়, সবগুলি গাছ বুড়ে জমা দিয়েছিল। নাতিকে পড়াবে, ইস্কুলে পড়াবে। মরণ হয় না। কাঠ কুড়িয়ে ফিরাল বুঝি পিসি, ভিজে কাঠপাতা আজ আর জুলছে না। এখনও বেলা আছে, আর খানিকক্ষণ খুঁজে পেতে আর কাটা বেশি শূকনো ডাল, ঝোপটােপ আনা পোষাল না পিসির, দুবেলা খাবার মুখটা আছে। পদী আবার চেচাচ্ছে। আবেলায় কঁাপিয়ে বঁাপিয়ে জুরটা বাড়ছে আবার। আর কঁথা নেই চাপা। দেবার। যেমন বুদ্ধি বুড়োর, এত বড়ো মেয়েকে পার না করে ঘরে রেখে পুষছে। শূনুর বাপেরও যেন কোনো চাড় নেই বোনটাকে পার করবার। পইপই করে সে বলেছে শুনুর বােপকে, ফের এ বর্ষায় জুরে পড়লে যা ছিরি হবে মেয়ের, পায়ের বুড়ো আঙুলের ডগা দিয়ে কেউ আর ছোবে না। তখন। সেরে উঠে ফের একটু মানষের মতো দেখাতে আরও ছমাস এক বচ্ছর। তা কে শোনে কার কথা ! মরে যদি যায় তো অবিশ্যি আর-সেই আশায় আছে নাকি বুড়ো আর শূনুর বাপ ? যাকগে বাবা যাক, তার অত ভাবনায় দরকার কী। নিজের জুলাই বলে তার সয় না। দিনরাত শত বিছায় কামড়ায় আর ছোবল দেয় সাপে । DS DLDS DS BB KB BBS DS DDDS LE S ওকে ভোলানো গেল না এক কোয়া কঁঠাল দিয়ে দুদণ্ডের বেশি। ভুতুড়ি তোলা আছে সকালে সিদ্ধ করা হবে বলে, তাই হাতড়ে কোয়াটা মিলেছিল। আর নেই, আর একটি কোয়াও নেই। এই যে ভাত নামবে যাদু, খাবে। একটু সবুর, সোনা আমার। হল বলে, এই হল বলে।