পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র পঞ্চম খণ্ড.pdf/৪০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8○8 r. মানিক রচনাসমগ্ৰ অবসন্ন মনে হয়। সাড়ে ছটা বেজে গেছে কিন্তু গভীর আলস্যে উঠতে ইচ্ছা করছে না। আজ। হেমন্ত ফিরে এলে হয়তো আলস্যটা কেটে যেত, জোর মিলত উঠে গিয়ে ছড়া বলার গলা বা সুরজ্ঞান পর্যন্ত নেই যে মেয়ের, নিজের গলার আওয়াজ শুনেই ভাব লেগে যে মেয়ের খেয়াল থাকে না সুর কোথা গেল, তাদের গান শিখিয়ে আসতে ! এই রকম সময়ে, ছেলে বা মেয়ে যখন কাছে থাকে না কেউ, কেমন আর কীসের অজানা সব শঙ্কার ছায়াপাতে হৃদয় মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে অনুরূপার। নিরাপত্তার জন্য নিজেকে একরকম ছোেট ফেলেছেন, সহজ ও সীমাবদ্ধ করে এনেছেন জীবন ও জীবনের পরিধি, যেমন চেয়েছেন তেমনি দিন চলছে শাস্তিতে, ছেলেমেয়েরা মানুষ হয়ে উঠছে মনের মতো। কোথা থেকে তবে এত সংকেত আসে। বিপর্যােয়র, বিভ্রাটের, বিপদের ? কেন কেঁপে কেঁপে ওঠে অনুকৃপাের ভীরু বুক ? পৃথিবী জোড়া যুদ্ধ তাকে বিচলিত করেনি। সে যুদ্ধের যত ধাক্কা এসে লাণুক তার ঘরে, সে অসুবিধা, শুধু টানাটানি, কষ্ট করার ব্যাপার।--বোমার ভয়ের দিনগুলিও তাকে এমন সচকিত করে তুলতে পারেনি। মনে হয়েছে ওসব দূরের বিপদ—বহু দূরের। তাদের চারটি প্রাণীর ছোটাে নীড়টিতে ও বিপদের ছোঁয়াচ লাগবে না। কিন্তু এ বিপদ যেন বাতাসের গুমোটের মতো, মাথার উপরের আকাশে ঘন কালেমেঘের মতো ঘনিয়ে আসছে। অনুভব করা যায়। খবরের কাগজ পড়তে গিয়ে মনে হয়, সব খবরের আড়ালে যেন দুরন্ত ক্ষোভ গামরাচ্ছে মানুষের, পথে ঘাটে লোকের কথা শুনলে মনে হয় সব চিন্তা একদিকে গতি পেয়েছে মানুষের, চারিদিকে সভা আর শোভাযাত্রায় সেই চিন্তা ফেটে পড়ছে হাজার কণ্ঠের গর্জনে। প্রতি মুহুর্তে ঘরে বাইরে চেতনায় যা ঘা দিচ্ছে, জীবনের খুঁটিনাটি সব কিছুর সঙ্গে যা। জড়িয়ে গেছে, তা কি ঠেকিয়ে রাখা যাবে ঘরের নিরাপদ সুখশান্তি অব্যাহত রাখতে চেয়ে ? রামা ফিরে আসে প্রচুর উত্তেজনা নিয়ে। বেরোও নি তো ? বেশ করেছ। ট্রাম বন্ধ হয়ে গেছে। জানো মা, ট্রাম চলছে না। ওদিকে খুব হাঙ্গামা চলছে, পুলিশ নাকি গুলি চালিয়েছে-কী ভাবছ মা ? কিছু না। হেমা ফেরেনি এখনও। ও 1 দাদার জন্য ভাবিছ ? রমা হালকা সুরে বলে, দাদা কস্মিনকালে ও সবের মধ্যে যায় না, যাবেও না! কোথায় গেছে, এখুনি এসে পড়বে। দাদার জন্য ভেবো না। রামার কথা আর কথার সুর আঁচড় কাটে অনুরূপার কানের পর্দায়। রামার গলায় তার দাদার সম্বন্ধে অবজ্ঞার সুর শোনা যাবে, এই বিপদের আশঙ্কাও বুঝি তার ছিল ! না, ভাবনার কী আছে। গানটা ভালো করে শিখবি রামা ? কাপড় ছেড়ে আয়। রামাকে বিপন্ন দেখায়। তার মুখে দারুণ অনিচ্ছা। আজ থাক গে। গানটান শিখতে আজ ইচ্ছে করছে না। মা । তবে থাক । জয়ন্ত ফিরে আসে আরও বেশি উত্তেজনা নিয়ে। যত কিছু সে শূনে এসেছে বাইরে থেকে সব অনুরূপাকে শোনায়। তারপর এক মারাত্মক প্রস্তাব করে। একটু দেখে আসব মা ? একটুখানি ? দূর থেকে একটু দেখেই চলে আসব। যাব ? r কী হয় গেলে ? এসে পড়তে বসব। আজ পড়তে হবে না। আজ তোর ছুটি। মুখহাত ধুয়ে আয়, গল্প বলব একটা । BDB Y DBDD D DD DS বানানো গল্প ভালো লাগে না ! এতটুকু ছেলে তার আজ সে রকম গল্প চাই, যা ধরাছোঁয়া দেখাশোনা যায়।