পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র পঞ্চম খণ্ড.pdf/৪২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চিহ্ন 8决@ ওসমান বলে, খুন না কি জমা থাকে বোতলে, গায়ে ঢুকিয়ে দেয় ? তাই দিত। ওকে, ও নিজে নিতে চায়নি। শুনলাম। বোতলের খুন কম ছিল, অনেকের দরকার ছিল জাবুরি, তাইতে । शै। আচমকা স্পষ্টতর প্রবলতর হয়ে রসূলকে জামাই করার সাধটা আছড়ে পড়ে ওসমানের মনে। -হাসপাতালে যাই একবার, দেখে আসি ওকে। এখন ও সব কথা তোলার সময় নয়, আমিনা শূনে হয়তো কী ভাববেন, এ সব জেনেও ওসমান হ্রদায়ের তাগিদটা বুখতে পারে না, বলে, এক আরজ আছে আপনার কাছে, জানিয়ে রাখি। মেয়েটা বড়ো হয়ে গেছে, পরীবাণু। ওকে তো দেখেছেন। আপনি ? কতবার দেখেছি। পরীবাণুর কথা কোথা থেকে আসে ভেবে আমিনা আশ্চর্য হয়ে যান। ওর জন্য ছেলে খুঁজছি। তা আমার আরজ রইল আপনার কাছে, রসুল ফিরলে আমার মেয়েকে আপনার নিতে হবে। আমি মজুর বটে, লড়ি হাঁকাই, আমার মেয়ে নিলে ঠকবেন না। এ তো খুশির কথা। আমিনা বলেন আন্তরিকতার সঙ্গে তবে কি জানেন, রসুলের মত থাকা চাই। তা চাই না ? রসূলের মত চাই আগে। আপনার সাথে হাসপাতালে যাব ? আমিনা যেন নিছক প্রশ্ন করেন তার ব্যাকুল আগ্রহ চেপে রেখে । যাবেন ? ওসমান চিন্তিত ভাবে বলে, হেঁটে যেতে হবে। রাস্তায় হাঙ্গামা চলছে। পরে নয় যাবেন। সেই ভালো। আমি দেখে আসি, ঘরে ফিরবার আগে আপনাকে জানিয়ে যাব কেমন আছে। সেই ভালো। তবে ! দেশসেবার পথ নিয়ে কন্দেরের সঙ্গে তার মতান্তর ছিল বরাবর। বড়ো তেজি ছিল ছেলেটা। মানত যা, করত তাই। খান বাহাদুরের শেষবারের নির্দেশ মানতে তার নাকি দ্বিধা হয়েছিল, ওসমান নিজেই বলেছে আমিনাকে । তারপর হাসপাতালে মরবার তিনদিন আগে বাপের কাছে সে মাপ চেয়েছিল, এস ডি ও-র গাড়িতে চেপে আমাদের ফেলে খান বাহাদুর পালালেন, গাড়ির পেছনের চাকা আমার ডান পাটা পিষে দিয়ে গেল, সে জন্য দোষ দিই না। প্রজাদের মারতে আমাদের পাঠিয়েছিলেন তা কি জানতাম ? আজি এসে প্রজাদের কজনের নাম করে বললেন কি, ওরা আমাদের মেরেছে বলতে হবে । তখন বুঝলাম ব্যাপারটা। প্রজারা কেউ আমাদের মারেনি। যাদের নাম করলেন, আমি জানি তারা ভিন্ন গাঁয়ে কিষাণ-সভা করছিলেন। তোমার কথাই ঠিক হল। এবার বেরিয়ে তোমার কথা, জিয়াউদ্দীন সাহেবের কথা শুনিব, নিজে তলিয়ে বুঝব, তবে কিছু করব। মরবার তিনদিন আগে যে ভাষায় যে ভাবে কথাগুলি সে বলেছিল, ওসমানের মুখে শূনে, হয়তো ছেলেহারা ওসমানের মুখে শোনার জন্যই, মনে আমিনার গাঁথা হয়ে আছে মুখস্থ করা ইস্তাহারের মতো। ছেলে বাঁচবে। এটাই জানা ছিল ওসমানের। ছেলে মরবো, তিনদিনের মধ্যে মরবো, জানা ছিল না তার। সমবেদনায় বুক ভরে গিয়ে আমিনার চোখের জল উপচে পড়তে চায়। তারা কথা বলছে, ওসমান উঠি উঠি করছে, রসূলের খবর জানাতে সীতা আসে। সমস্ত রাস্তা সীতা ভাবতে ভাবতে এসেছে ঠিক কী ভাবে মার কাছে হাসপাতালে ছেলের অবস্থার কথা বলে মার মনে ছেলের সম্বন্ধে কতখানি আশা আর কতটুকু ভয় জাগানো চলে, যা সঠিক। রসূল মোটামুটি ভালো আছে, এবং ভালো সে দুচার দিনের মধ্যে হয়ে উঠবে, এটাই হল প্রধান কথা। কিন্তু ভয়েরও