পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র পঞ্চম খণ্ড.pdf/৪২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 Sb. মানিক রচনাসমগ্ৰ কোথায় গেছে, এখুনি আসবে। এতে আবার শাসন কীসের ? তুই কিছু বুঝিাস না হেমা। এমনি না বলে একটু এদিক ওদিক যায়, সে আলাদা কথা। ছোটাে ছেলে আমন করেই। কাল হইচই করতে যেতে চাইছিল, আমি যেতে দিইনি। সকাল হতে না হতে তাই ইচ্ছে করে কিছু না জানিয়ে চুপিচুপি পালিয়েছে। বেশি আটকালে এ রকম হয়। পাড়ার সব ছেলে রাস্তায় বেরিয়েছে, খোকা বন্দী হয়ে থাকবে ? वळ (पठ श्र:ठ । কেন বলেনি জানো ? যদি মানা করো এই ভয়ে। তা হলে তো তুমি আরও বেশি রাগ করতে, মানা করলাম, তবু চলে গেল ! তোমার মনে কষ্ট দিতে চায়নি খোকা, বুঝতে পারছি না ? আমারও তো ভয় হচ্ছিল কাল, তুমি যদি বারণ করো, কী করে তোমার মনে কষ্ট দেব। বুঝেছি। কোনো কথা শুনবে না। ঠিক করাই থাকে তোমাদের, আমার সঙ্গে শুধু একটু ভদ্রতা করে । মার সঙ্গে অভদ্রতা করতে হয় না কি ? হেমন্ত হাসে। অনুবৃপাও এতক্ষণে খানিকটা ধাতস্থ হয়েছেন মনে হয়। যাকগে, যা খুশি করো। আমি তো এবার পেনশন নেব সংসার থেকে। তোমাদের ঘাড়েই চাপবে ভাইবোনের ভার। তোমাদের ? তোমাদের কে কে মা ? ও ! আমি আর তোমার ছেলের বউ ; তুমি এত হিসেব জানো মা ? কতদিন এ ভাবে এড়িয়ে যাওয়া চলবে, ঠেকিয়ে রাখা যাবে ? হেমন্ত ভাবে পথে নেমে। এই তো সবে সূচনা, শেষ পর্যন্ত কোথায় গড়াবে এই মায়ার লড়াই কে জানে ! অথবা ক্ৰমে ক্ৰমে ঠিক হয়ে যাবে সব, সময় পেলে সম্ভব হবে মানিয়ে নেওয়া, শাস্তি পাওয়া মারি পক্ষে-তার পক্ষেও ? বুঝে উঠতে পারে না হেমন্ত। পরিবেশ গড়ে মানুষকে, পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলাই সহজ মানুষের পক্ষে, অতি দরকারি লড়াইও এড়িয়ে চলতে মানুষ তাই এত ব্যাকুল, পলাতক মনোভাব তাই এত প্ৰবল। পালিয়ে পালিয়ে এড়িয়ে চলার দিন তার পক্ষে ফুরিয়ে গেছে। কিন্তু কী করতে হবে তাকে আগামী দিনগুলিতে, ঠিকমতো তার জানা নেই। বিশেষ অবস্থায় আজকের দু-চার দশদিনের বিশেষ কর্তব্য হয়তো তার জানা আছে, কিন্তু তারপর যখন দৈনন্দিন জীবনকে গড়তে হবে নতুন করে তার নিজের, মার, রমা ও খোকনের, চেনা ও অচেনা সব মানুষের জীবন গঠনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, খাপ খাইয়ে, সম্মুখের দিকে গতি বজায় রেখে, শত শত গ্ৰহণ বর্জন নিয়ন্ত্রণ পরিমার্জনের মধ্যে ভীরুতা ও দুর্বলতা, হাসি-কান্না সুখ-দুঃখ মান-অভিমানের খেলা ও লড়াই-এ বঁচা ও বাঁচানোর সংগ্রামে, তখন কী ভাবে কী করবে ভেবেও পাচ্ছে না সে। আজ অবশ্য ভাবার সময় নয় ও সব কেন নয় ? সীতা আশ্চর্য হয়ে যায় তার কথা শুনে, ভাববার যা আজ থেকে তা ভাবতে শুরু করলে দোষটা কি ? ওই ভাবনায় মশগুল হয়ে তুমি তো আর সব ভুলে যােচ্ছ না ? একদিনে সব ভাবনা শেষ করে দেবার জন্য পাগল হয়ে উঠছি না ? সেটা তাহলে ভাবা হবে না, কাব্য হবে। একদিনে মানুষ বদলায় না হঠাৎ বিবাগী হয়ে যে ঘর ছাড়ে, তারাও ওই ঘর ছাড়াটাই ঘটে। হঠাৎ, বৈরাগ্যটা নয়। আর তুমি তো সংসারে থেকে কাজ করবে। ভাবো, মাথা গুলিয়ে ফেলো না। একদিনে সব ভাবনা মিটিয়ে দিতে চেয়ে না। রোজাকার ভাবনা রোজ ভাবলে, রোজাকার কাজ রোজ করলে, দেখবে সব ঠিক ঠিক হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ ধীর স্থির শাস্ত ভাবেনিশ্চয় । ওটা দরকার। বিশেষ করে তোমার পক্ষে। মনকে একটু বশে না আনলে কেউ ভাবতে পারে না, সে এলোমেলো ভাবনার শেষ আছে ? রাগ কোরো না, নিজেকে তুমি একা বলে জানো। তুমি