পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র পঞ্চম খণ্ড.pdf/৪৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ዪኃb” মানিক রচনাসমগ্ৰ তাকে একেবারে চুপ করিয়া যাইতে দেখিয়া চিন্ময় বিরক্ত হওয়ার জন্য লজ্জিত হয়, ধীরে ধীরে বলে, আসল নীতিটাই তুমি এড়িয়ে যােচ্ছ মোহন। কারও কারও বেলা সত্যিকারের অজুহাত থাকতে পারে- যেমন ধর, স্বাস্থ্যের জন্য যা দরকার হয়। কিন্তু খেতে পরতে দিতে পারবে না, স্বাধীন চলাফেরায় ব্যাঘাত ঘটবে-এ সব কি বার্থকষ্ট্রোলের অজুহাত ? নিতাই ছেলেপিলেকে খেতে দিতে পারে না, সেটা একেবারে আলাদা একটা অন্যায়। নিতাই অনায়াটা মানবে কেন সে ভগবানের দোহাই দেয়-জীব দিয়েছেন যিনি, আহার দেবেন। তিনি। কিন্তু আসল কথাটা তো ঠিক। আহারের ব্যবস্থা অনুসারে প্রকৃতির নিয়মেই মানুষ বাড়বে কমবে।-সে জন্য বার্থকস্ট্রোল দরকার হয় না। দুর্ভিক্ষে মানুষ মরে বলেই মানুষ মরতে মরতে দুৰ্ভিক্ষ ঠেকাবার ব্যবস্থা করবে, মানুষ জন্মানো বন্ধ করে কি দুৰ্ভিক্ষ ঠেকানো যায় ? গরিব সুখে থাকে ? হঠাৎ চিন্ময় হাসে। প্রায় বক্তৃতা দিয়ে ফেললাম ভাই। সন্ধ্যা গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দিয়ে এখন থেকে একটা উপকার করেছে। এসব কথা ভাবতে ভাবতে মাথা অনেক সাফ হয়ে এসেছে। আচমকা সে প্রশ্ন করে, তোমার কি তবে এই ব্যাপার ? শহরে আসবে স্বাধীনভাবে দু জনে স্মৃর্তি করবে, তাই GRIF CC 5NO3 : ? মোহন বলে, এবার আমার রাগ করা উচিত। লাবণ্যকে ডাক্তার দেখাতে কলকাতা এসেছিলাম মনে নেই ? সত্যি মনে ছিল না ভাই। তোমরা কি এ ঘরেই থাকবে দাদা ? মা রচনাসমগ্র-৫ পৃ ৩০ গ্রামে পুকুরঘাটে একটি স্ত্রীলোক গলা পর্যন্ত জলে ডুবাইয়া অকথ্য গালাগালি দিতেছে, এই রকম একটা কুৎসিত কাণ্ড যেন ঘটিয়া গেল। প্ৰ সিং পৃ ২৫ গ্রামের স্ত্রীলোক গলাগলি দেয়। এরা ক্ষমা করে। পরদিন চিন্ময় একটি বাড়ির খবর দিল। ॐ न5 श्रृं २७ সংযোজন গ্রামে পুকুরঘাটে একটি স্ত্রীলোক গলা পর্যন্ত জলে ডুবাইয়া অসভ্য অবিবেচক মানুষকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি দিতেছে, শহুরে ভাবে সেই রকম একটা কুৎসিত কাণ্ড যেন ঘটিয়া গেল । মা রচনাসমগ্র-৫ পৃ. ৩০ গ্রামের স্ত্রীলোক গলাগলি দেয়, ক্ষমাও করে নীরবেই। এরা চোখের দৃষ্টিতে শাসন করে আবার ক্ষমাও করে। দ্র সংযোজন পরে সে চিন্ময়কে ব্যাপারটা বলে। সরলভাবে প্ৰাণ খুলিয়া বলে, এমন লজ্জা পেলাম ভাই ! আমার মনে কিছু নেই, অবাক হয়ে দেখছিলাম যে কায়দা জানলে কত সিম্পল ভাবে ৰূপকে কী আশ্চর্যরকম ফুটিয়ে তোলা যায়। গোঁয়ো মানুষ, খেযাল ছিল না ও ভাবে তাকাতে নেই। তাকালে দোষটা কি ? এ হল ঝরণার ন্যাকমি। সবাই দেখবে বলেই তো সাজগোজ করেছে । সোজাসুজি খোলাখুলি স্পষ্টভাবে চেয়ে দেখলেই বুঝি দোষ হয়ে গেল ? একটু থামিয়া চিন্ময় নালিশের সুরে আবার বলে, তোমার কাছে প্রামের সব কিছুই খারাপ। কেউ অসভ্যতা করলে মেয়েরা সোজাসুজি গালাগালি দেবে- সেটাই তো উচিত। কিন্তু ও রকম কি সত্যি ঘটে ? আমি তো দেখেছি। এক ঘাটে মেয়েপুরুষ কয়েক হাত তফাতে নাইছে-পুরুষেরা আগাগোড়া মেয়েদের দিকে পিছন ফিরে থাকে, তাও দেখেছি। মোহন বলে, তা না হলে কি চলে ? সবাইকে পুকুরেই তো যেতে হবে। কাজেই ও রকম নিয়মনীতি দরকার। মেয়েরা নাইছে বলে তুমি এক ঘণ্টা হত্যা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি ? ওদের দিকে পিছন ফিরে একটু তফাতে তোমার নাওয়ার কাজ সেরে তুমি চলে যাও । চিন্ময় খুশি হইয়া বলে তবে ? দ্যাখো তো কি সহজ সুন্দর নিয়ম। বাপের বার্ষিক শ্রান্ধে মোহন খুব সমারোহ করিল। দেশে এই তার শেষ সামাজিক কাজ, সে গ্রাম ছাড়িয়া চলিয়া যাওয়ার পরেও বহুদিন যেন মানুষ তার প্রশংসা করে। আত্মীয়-কুটুম্বোরা আসিল, একটি বৃষ উৎসর্গ করা হইল, মা রচনাসমগ্র-৫ পৃ ৩১ বাপের বার্ষিক শ্রান্ধে মোহন খুব সমারোহ করিল। দেশে এই তার শেষ সামাজিক কাজ, সে গ্রাম ছাড়িয়া চলিয়া যাওয়ার পরেও বহুদিন যেন মানুষ তার প্রশংসা করে।