পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র পঞ্চম খণ্ড.pdf/৪৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ዓbr পরদিন ঝরণাকে নূতন মোটর সাইকেলের ক্যারিয়ারে বসাইয়া বজবজ যাইতে গিয়া একশো গজ গিয়াই নগেন একটা অ্যাকসিডেন্ট ঘটাইয়া দিল। গাড়ি আন্তেই চলিতেছিল, এখানে ওখানে কাটা ছেড়া আর ঝরণার বা হাতটা একটু মাচকাইয়া যাওয়া ছাড়া দুজনের বিশেষ কিছু হইল না। মোহন বুঝিতে পারিল না। এই দুর্ঘটনায় মনে সে কেন খুন্সী হইয়াছে। ভয়ানক কিছু অনায়াসেই ঘটিতে পারিত, কিন্তু ঘটে নাই বলিয়া ? ॐ ञ६ || v> সংযোজন মানিক রচনাসমগ্ৰ পরদিন সকালে ঝরণাকে নূতন মোটর সাইকেলের ক্যারিয়ারে বসাইয়া বজবজ বেড়াইয়া আসিতে বাহির হইয়া একশো গজ পথ যাইতে না যাইতেই নগেন একটা उनकनिgने श्शों क्लि। গাড়ি আস্তেই চলিতেছিল, এখানে ওখানে কাটা ছেড়া আর ঝরণার বা হাতটা একটু মাচকাইয়া যাওয়া ছাড়া দুজনের বিশেষ কিছু হইল না। মোহন বুঝিতে পারিল না। এই দুর্ঘটনায় মনে মনে সে কেন খুশি হইয়াছে। ভয়ানক কিছু অনায়াসেই ঘটিতে পারিত কিন্তু ঘটে নাই বলিয়া ? দ্র সংযোজন দূরে গিয়া জোরে গাড়ি চলার সময় দুর্ঘটনা ঘটিয়া দুজনের মারাত্মক রকম আহত হওয়া, এমন কী মরিয়া যাওয়াও অসম্ভব ছিল না। সেটা ঘটে নাই বলিয়া সে খুশি হইয়াছে? অথবা ওদের দুজনের বজবজ গিয়া সারাটা দিন কাটাইয়া আসা সম্ভব হইল না বলিয়া ? এই দুর্ঘটনা উপলক্ষে ছেলের উপর মা আরেক চোট গায়ের ঝাল ঝাড়িলেন। বাড়ির শ খানেক গজ দূরে অ্যাকসিডেন্ট করিয়া দুজনে ফিরিয়া আসিলে নগেনের এখানে ওখানে সামান্য ছড়িয়া যাওয়া কাটিয়া যাওয়ার সামান্য রক্তপাত দেখিয়াই একেবারে যেন আর্তনাদ করিয়া উঠিয়া মোহনকে বলিলেন, কেন তুই এ সব কিনে দিস ওকে ? ভাইটকে মারতে চাস ? দুর্ঘটনায় নগেন ব্যথার চেয়ে লজ্জা পাইয়াছিল বেশি। সে তাড়াতাড়ি বলে, আমার কিছু হয়নি মা। একটু শুধু কেটে ছড়ে গেছে। মোহন গষ্ঠীর মুখে কঠোর সুরে বলে, তুমি অনেকদিন থেকে মোটর-বাইকের জন্য আবদার করছিলে--জন্মদিনে তাই ওটা প্রেজেন্ট দিয়েছিলাম। তোমায় মারবার জন্য দিইনি। ওটা আমি ফিরিয়ে নিলাম। মাচকানো হাতের ব্যথায় ঝরণা কাতরাইতেছিল- তার কাতরানি পর্যন্ত বন্ধ হইয়া যায়। মোহন আরও কঠোর সুরে বলে, এবার থেকে আর কোনো আবদার জানিয়ে আমাকে জ্বালাতন কোরো না। তোমার যা দরকার হবে মার কাছে চাইবে। মা বললে কিনে দেব। সকলে মুখ কালো করিয়া থাকে। সত্যই তো ? সকলেই জানে। নগেনের একটি মোটর সাইকেলের সাধ অনেকদিনের। বাপের কাছে অনেকবার চাহিয়া পায় নাই। বাপের মৃত্যুর পর মোহন ভাইয়ের জন্মদিনে উৎসব করিয়াছে এবং সেই উপলক্ষে ভাইয়ের পুরানো সাধটা মিটাইয়াছে। সে কি দুর্ঘটনার জন্য দায়ি ? মারা কি উচিত হইয়াছে ও রকম বিশ্ৰী মন্তব্য করা যে ভাইকে মারিয়া নিষ্কণ্টক হওয়ার জন্যই সে তাকে মোটর সাইকেলটা উপহার দিয়াছে ? ছেলের কাছে মা আরেকবার হরিয়া গেলেন। ডাক্তার এবং ডাক্তারখানা বাড়ির প্রায় পাশেই বলা যায়। ডাক্তার আসিয়া ঝরণার মাচকানো হাতে ওষুধের প্রলেপ দিয়া ব্যান্ডেজ বাঁধিয়া এবং দুজনের কাটাছড়ায় ওষুধ লােগাইয়া বলিয়া গেলেন, খুব অল্পের উপরেই গেছে। আর কিছু করতে হবে না। ঝরণাকে বলিলেন, দু-একদিন খুব ব্যথা হবে, বাস। ডাক্তার চলিয়া যাওয়ার পর ঝরণা। আবার কাতরাইতে আরম্ভ করিলে মোহন বলে, তোমার নিজেরই দোষ। ছেলেমানুষ নতুন গাড়িটা পেয়েছে, তোমায় ক্যারিয়ারে চাপিয়ে চালাতে পারে ? স্পিডে চলার সময় অ্যাকসিডেন্ট হলে কী হত বলো তো ? নগেনের হয়তো আজ প্ৰাণ যেত । বলিয়াই মোহন টের পায় এটা তার কঠোরতা নয়, নিষ্ঠুরতা নয়, স্রেফ গ্রাম্যতা। সামান্য আহত নগেনকে দেখিয়া মা যেমন আর্তনাদ করিয়া তার উপর গায়ের ঝাল ঝাড়িতে চাহিয়াছিলেন, ঝরণা ক্যারিয়ারে চাপিয়ছিল বলিয়াই অ্যাকসিডেন্ট ঘটিয়াছে ঘোষণা করিয়া সেও ঠিক একই রকম গায়ের ঝাল ঝাড়িতেছে । ঝরণা উঠিয়া দাঁড়ায়।