পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র পঞ্চম খণ্ড.pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Gf Sq, মানিক রচনাসমগ্ৰ বোধ করিবে। চিন্ময় হয়তো শুধু জিজ্ঞাসা করিবে, কেমন আছে ? সে জবাব দিবে যে ভালোই আছে-এবং তার পর হয়তো চিন্ময় জোর করিয়া অন্য প্রসঙ্গ টানিয়া আনিবে। বাগানের গাছে গাছে তখন শেষরাত্রির বৃষ্টির জল রোদের তেজে শুকাইয়া যাইতেছে, ঘুমের বিছানা ছাড়িয়া সন্ধ্যা চোখ বুজিয়া শূইয়া ছিল বাথরুমে চিনামাটির পুকুরে মানের বিছানায়। বুক্মিণীর কাছে খবর শুনিয়া বলে, মোহন এসেছে, মোহন ! চুলে সাবান দেব ভাবছিলাম, মোহন এসেছে ! জানতাম আসবে। বাহিরের ঘরে মোহন ভাবে ; এতক্ষণ আমায় বসিয়ে রেখেছে সন্ধ্যা ? আর কেউ কি বাড়িতে নেই ? সকালে কেউ কি বাইরে আসে না ? আরও খানিক পাবে সন্ধ্যা আসিয়া বলিল, এই যে আমার মোহন। আমার অসময়ের মোহন। সামনে আসিয়া ডান হাতটি তুলিয়া দুহাতে মুঠা করিয়া ধরিল। ভিজা ভিজা ঠান্ডা হাত দুটি সন্ধ্যার, গায়ে সাবানের সুবাস। প্রসাধন না করিয়াই আসিয়াছে। --டி2 இ ஆ ? সন্ধ্যা খুশি হইয়াছে। সহজ হাসি, কথা আর দুর্লভ অন্তরঙ্গগত দিয়া সন্ধ্যা তাকে অভ্যর্থনা করিয়াছে। এর মধ্যে ফাকি কিছু নাই, সবটাই আন্তরিক। তবু মোহন যেন আশাভঙ্গের আঘাতে একেবারে নিভিয়া গেল। সন্ধ্যা আশ্চর্য হইয়া গেল না, এতটুকু তার উত্তেজনা জাগিল না, কী বলিয়া কথা আরম্ভ করিবে ভাবিয়া বিব্রত হইয়া পড়িল না, এমনভাবে তাকে গ্ৰহণ করিল যেন বহুকাল পরে জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটিবার পরে তাদের দেখা হয় নাই, যেন কালও সে আসিয়াছিল ! সন্ধ্যা তার সঙ্গে শুধু ভদ্রতা করিবে, শুধু জিজ্ঞাসা করিবে, কেমন আছে, কোথায় আছে, কী করিতেছে -- এসব ভাবিয়া আসিলে বিনা ভূমিকায় তাকে এভাবে কাছে টানিয়া নেওয়ার জন্য হয়তো সে কৃতাৰ্থ হইয়া যাইত। অনেক বিচিত্ৰ নাটকীয়া ব্যবহার কল্পনা করিয়া আসিয়া এমন আবেগহীন সহজ অভ্যর্থনা কি ভালো লাগে ? 6न् एष प्रश् ? সন্ধ্যা হাসিয়া ফেলিল-ও সব নয় মোহন। ভালো লাগে না। দেখতে পােচ্ছ না কেমন আছি ? তবু যেন মোহন হার মানিবে না, দীর্ঘ আদর্শনের ব্যবধানকে গায়ের জোরে খাড়া করিয়া রাখিয়া ধীরে ধীরে সে ব্যবধান অতিক্রম করার বৈচিত্ৰ্য উপভোগ করিবে। রোগা হয়ে গেছে। তখন সন্ধ্যার বোধ হয় মনে পড়িয়া যায় যে ঠিক এই রকম একগয়েমি করিয়া আগেও মোহন তাকে মাঝে মাঝে পাগল করিয়া তুলিত, আবদেরে ছোটােছেলেকে চকোলেট দেওয়ার মতো কিছু ভাবপ্রবণতার ব্যথা মোহনের মধ্যে তাকে সৃষ্টি করিয়া দিতে হইত। ব্যথা বোধ হয় আজ সে চায় না। একটু উচ্ছাস চায়, বিস্ময় আর আনন্দের ! সেই সঙ্গে এতদিন অবহেলা করার জন্য কিছু কিছু অভিমান মিশাইয়া দিলে মোহন আরও খুশি হইবে। কিন্তু কেন ? কেন সকলে তার কাছে। এ সব চায়, তবে যা নাই, সে যা ভালোবাসে না ? সমস্ত জগৎ যেন ধরিয়া রাখিয়াছে মেয়ে বলিয়াই সে রক্তমাংসের জীবন্ত কবিতা-পুরুষের মনের মতো কবিতা।