পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র পঞ্চম খণ্ড.pdf/৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

G8 মানিক রচনাসমগ্ৰ कों ! মোহন যে জিদের কথা বলিয়া অনুযোগ দিয়াছিল তারই স্পষ্ট প্রমাণের মতো এমন স্পষ্ট জবাব দিলে আর কী বলা যায় ? ভালোবাসায় বিশ্বাস করে না। বাস্তব জীবনে যেসব চলতি এবং সর্বজন স্বীকৃত ফাকি আছে সেগুলিকে ফাঁকি বলিয়া মানিতে চায় না। সব ফাঁকি নয়-যেগুলি না মানিলে তার নিজের সুবিধা হয়, কেবল সেইগুলি। যেমন বিবাহের আগে প্রেমের উন্মাদনায় চিন্ময় যেসব আবোল-তাবোল কথা বলিয়াছিল প্রতিজ্ঞার মতো, চুক্তির মতো ওই কথাগুলি চিন্ময়াকে সারা জীবন মানিয়া চলিতেই হইবে। এ বিষয়ে আর আলোচনা হইল না। ভবিষ্যতে হইবার আর কোনো সম্ভাবনাও রহিল না। মোহনের একবার ইচ্ছা হইল সন্ধ্যাকে জিজ্ঞাসা করে, চিন্ময় টাকা দিতে অস্বীকার করিলে সে কী করিবে ? কিন্তু ইচ্ছাটা সে চাপিয়া গেল। কারণ তার মনে পড়িয়া গেল, সোজাসুজি ওদের ঝগড়া হয় নাই। এভাবে চিরকাল চলিতে পারে না, ঝগড়া একদিন ওদের হইবেই। সন্ধ্যার পক্ষেও আজ বলা সম্ভব নয় যে হয় আপস করা অথবা সব রকম সম্পর্ক ছিন্ন করার ওই বাস্তব সমস্যা দেখা দিলে সে কী করিবে ! মোহনকে সন্ধ্যা তখন ছাড়িয়া দিল না। এ বেলা তাকে এখানে খাইতে হইবে। খাওয়া-দাওয়ার পর দুজনে একসঙ্গে বাহির হইবে। আজ শনিবার, কলিকাতায় রেস আছে। মনসুন কাপে একটা ঘোড়ায় সন্ধ্যা অনেকগুলি টাকা রিস্কা করিবে ঠিক করিয়াছে। ঘোড়াটা জিতিবে,--জিতিবেই। এখন ফেভারিট না হইয়া যায় ঘোড়াটা, তা হইলে বেশি টাকা °ऽ3म श्रे न ! রেসে কখনও জিতেছি সন্ধ্যা ? উহঁ। রেসে কেউ জেতে ? তবে খেল কেন ? জিততে পারবে না জেনেও টাকা নষ্ট কর কেন ? খেলে মজা পাই তাই খেলি।। ট্রেনে যাওয়া ছাড়া উপায় নাই, গাড়িটাকে অসুখ সারাইতে হাসপাতালে দেওয়া হইয়াছে। সন্ধ্যার এমন বিশ্ৰী লাগে ট্রেনে যাইতে ! ফোন করিয়া দিলে শহর হইতে গাড়ি নিয়া আসার বন্ধু অবশ্য আছে কয়েকজন, কিন্তু আজ যখন মোহন আসিয়াছে, দু-চার-ছ। মাসের মধ্যে সে যখন আর আসিবে না, আজ আর কাউকে ডাকিয়া কাজ নাই। সন্ধ্যা হাসে। ভাবপ্রবণতা নাই বলে, তবু যে সন্ধ্যা এমনভাবে কী করিয়া হাসে মোহন বুঝিতে পারে না। আমি একটা গাড়ি কিনেছি। সন্ধ্যা। কিনেছ ? বলো কী! বাড়িতে ফোন করে দাও না, ড্রাইভার গাড়িটা নিয়ে আসুক ? এগারোটায় সময় মুষলধারে বৃষ্টি নামিল। বেলা একটার সময় তারা যখন বাহির হইল, তখনও বৃষ্টি পড়িতেছে।