পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র পঞ্চম খণ্ড.pdf/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bやう মানিক রচনাসমগ্ৰ সেখানে অবশ্য অনেকদিন এমন অনেকের সঙ্গে মেলামেশা করিয়াছে, পীতাম্বরের অলৌকিক ক্ষমতায় যারা চোখ বুজিয়া বিশ্বাস করে। পরিবেশের প্রভাবও বোধ হয় মেয়েদের উপরেই কাজ করে বেশি। সন্ধ্যার পর হাঁটিতে হাঁটিতে সে জগদানন্দের বাড়ি গেল, হাসিতে হাসিতে জিজ্ঞাসা করিল, মন্ত্রতন্ত্র তুকতাক বিশ্বাস করেন ? টােটকা ? আপনি করেন না ? মোহন নীরবে একটু হাসিল। কেন করেন না ? অসম্ভব মনে হয় বলে ? নাকের কাছে ক্লোরোফর্ম ধরলে জ্যাস্ত মানুষ অজ্ঞান হয়ে যায়, গাজী আপিমের ধোঁয়া গিলে স্বপ্ন দেখা যায়, এমন তো লতাপাত, ওষুধপত্র থাকতে পারে যা খাওয়ালে বা পুড়িয়ে ধোঁয়া নাকে দিলে বিশেষ রকমের মোহ জাগতে পারে মানুষের ? একটা বশীকরণের গল্প শুনেছিলাম। ঠিক কোন দিকে বাতাস বইছে হিসেব করে একজন মাঝরাত্রে গ্রামের ধারে ফাঁকা মাঠে আগুন জালিয়ে লতাপাতা পোড়াতে লাগল, আধ মাইল দূরের এক বাড়ি থেকে একটি বউ ঘণ্টাখানেক পরে হাজির হল সেখানে। এটা হয়তো গল্প, কিন্তু সম্ভবপর গল্প তো ? ঘটনাটা অবিশ্বাস করতে পারেন, কিন্তু বাতাসে গন্ধ উড়ে গিয়ে বউটাকে মোহগ্ৰস্ত করে টেনে আনতে পারে, ঘুমের মধ্যে গন্ধটা তার মস্তিষ্কে প্রভাব বিস্তার করতে পারে, এটা খুব অসাধারণ হলেও অসম্ভব নয়। গাঁয়ে কি বউ ছিল একটি ? তা ছিল না। বাউটির শারীরিক মানসিক বৈশিষ্ট্য হিসাব করে হয়তো লতাপাতা বেছে নেওয়া হয়েছিল। ওসব শুধু কল্পনায় সম্ভব। ঘটতে পারে এইটুকু বলা যায়, কখনও ঘটে না। দ্রব্যগুণে তবু কতকটা বিশ্বাস করা চলে, মন্ত্রতন্ত্র তুকতাক তাতেও বিশ্বাস করা চলে। গানের সুর মনে কাজ করে। দূরে বাঁশি বাজছে, শুনে মনটা কেমন করতে লাগল। খুব কাছে গিয়ে শুনলে হয়তো বেসূরা আওয়াজে বিরক্তি বোধ হবে, কিন্তু দূর থেকে ভেসে আসছে বলে কোনো কারণে ক্লিয়াটা হচ্ছে অন্যরকম। তা এমন মন্ত্র তো থাকতে পারে কানে এসে লাগলেও শব্দটা ধরা যায় না, মনে কাজ হয় ? ওসব অনেক শুনেছি জগৎবাবু। এ সব বিশ্বাস অবিশ্বাসের তর্ক কখনও শেষ হয় না, তর্কই থেকে যায়। আমার একটা কথার জবাব দিন তো। আমি বিশ্বাস করি না, তর্কের খাতিরে না হয় ধরে নিলাম, সমস্তই সম্ভব। কিন্তু যার তার পক্ষে কি সম্ভব ? গানের কথা বললেন, গান শিখতেই মানুষকে কতকাল সাধনা করতে হয়। ওসব মন্ত্রতন্ত্র শেখা নিশ্চয় আরও কঠিন ? কিন্তু আপনি দেখবেন, যারা ও সব জানে বলে লোকে বিশ্বাস করে তারা অধিকাংশই অপদার্থ, হামবাগ। জগদানন্দ মাথা নাড়ে। আপনার স্ট্যান্ডার্ডে হয়তো তাই, আসলে হয়তো তারা উচুস্তরের মানুষ। স্তরটা ভিন্ন বলেই ওদের হয়তো হামবাগ মনে করি। আপনার লজিকটা এক পেশে, সবদিক বিবেচনা করছেন না। আপনি ভাবছেন অপদাৰ্থ কিন্তু তুকতাক খাটাবার বিশেষ ক্ষমতার জন্য হয়তো ওই রকম হতে হয়। আপনার আমার মতো মানুষ হলে ওই বিশেষ প্রতিভা থাকে না। ফুটপাতে ফোঁটা তিলক কাটা জ্যোতির্ষি দেখলেই আপনার গা জ্বালা করে, আমার করে না। আপনি ভাবেন ওরা ভণ্ড, লোক ঠকিয়ে খাচ্ছে, আমি তাও ভাবি না। আপনার মাপকাঠিতে বিচার করলে হয়তো সত্যসত্যই এক