পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in Σ. Σ Νό মানিক রচনাসমগ্ৰ যেচে বিয়ে করতে চান শুনে প্রথমটা অবাক হয়ে গিয়েছিলাম মা, তাব।পর ভেবে দেখলাম কি জানেন- আপনাব শরীব ভালো নয, কাজকর্ম করতে কষ্ট হয় আপনার, ভেবেচিন্তে তাই সম্মত হয়েছেন। ও সব কিছু বললেন না অবিশি, বলবার মানুষ তো নন,— শামা জানে না! পড়া ছাড়িয়া বিধান একদিন হঠাৎ চাকুরি গ্রহণ করিয়াছিল, আজ বিবাহে মত দিয়াছে। সেদিন অভাবে-অনটনে শ্যামা পাগল হইতে বসিয়াছিল, আজ সংসারের কাজ করিতে তাহার কষ্ট হইতেছে। সেবার বিধান ত্যাগ করিয়াছিল বডো হওয়ার কামনা, এবার ত্যাগ করিয়াছে মত। শুধু মত হয়তো নয। মত আর শামুর স্মৃতি হয়তো আজও একাকার হইয়া আছে ছেলের মনে । তা হোক, ছেলেবা এমনি ভাবেই বিবাহে মত দিয়া থাকে, মায়ের জন্য। নাহিলে স্বপন দেখিবার বয়সে কেহ কী সাধা করিয়া বিবাহের ফঁাদে পড়িতে চায। তারপব সব ঠিক হইয়া যায়। বউয়ের দিকে টান পড়িলে তখন আব্ব মনেও থাকে না কীসের উপলক্ষে বউ আসিয়াছে, কাব্য জন্য। চোখেব জলেব মধ্যে শ্যামা হাসে। খুজিয়া-পাতিয়া ছেলের জন্য বউ সে আনিবে পরিব মতো বুপসি, মার জনা বিবাহ কবিতে হইযাছিল বলিয়া দুদিন পরে আর আপশোশ থাকিবে না ছেলের —মনে থাকিবে না শামুকে। শ্যামাব মনে আবাবা উৎসাহ ভরিয়া আসিল। জীবনে কাজ তো এখনও তার কম নয়!! আনন্দ উৎসবের পথ তো খোলা কম নয়! এত সে শ্ৰান্ত হইয়া গিয়াছিল। কেন ? কত বড়ো সংসার গডিয়া উঠিবে তাহাব, এখনি হইয়াছে কী! বিধানের বউ আসিবে, মণির বউ আসিলে, ফণীর বউ আসিবে, - যে ঘরে ওদেব সে প্রসব করি যাছিল। সেই ঘরে এক-একটি শুভদিনে আসিতে থাকিবে নাতিনাতনিব দল। দোতলায় সে আবও ঘর তুলিবে, পিছন দিকের উঠানে দালান তুলিযা আবও বড়ো করিবে বাডি। অত বডো বাডি তাহাব ভবিষযা যাইবে নবীন নবনারীতে-ও বাড়িব নকুড়বাবুব শাশুডির মতো মাথাব্য শনের নৃডি ঝুলাই যা কুঁজে হইয়া সে দ্রাডাইযা থাকিবে জীবনের সেই বিচিত্র উজ্জ্বল আবর্তেব মাঝখানে ? সবই তো এখনও তাহার বাকি ? কেবল একটা দুঃখ তাহাকে আজীবন দহন করিবে। তার অন্ধ মেয়েটা। ওর জন্য অনেক চোখেব জলে ফেলিতে হইবে তাহাকে। শ্যামা মেয়ে খুজিতে লাগিল। সুন্দরী, সদ্যবংশজাতা, স্বাস্থ্যবতী, গৃহকর্মনিপুণা, কিছু-কিছু গানবাজনা লেখাপড়া সেলাই-এবা কাজ জানা, চোদ্দো-পনেরো বছৰ বয়সের একটি মেয়ে। খানিকটা শামুর মতো, খানিকটা শ্যামাব ভাড়াটে সেই কনকের মতো আর খানিকটা শ্যামার কল্পনার মতো হইলেই ভালো হয়। টাকা শ্যামা বেশি চায় না, অসম্ভব দাবি তার নাই । কযেকটি মেয়ে দেখা হইল, পছন্দ হইল না। তারপর পাড়ার একবাড়ির গৃহিণী, শ্যামার সঙ্গে তার মোটামুটি আলাপ ছিল, একটি খুব ভালো মেয়েব সন্ধান দিলেন। শহরের অপরপ্রান্তে গিয়া মেয়েটিকে দেখিবামাত্র শ্যামা পছন্দ করিয়া ফেলিল। বড়ো সুন্দরী মেয়েটি, যেমন রং তেমনি নিখুঁত মুখচোখ। আব্ব কোমল আর ক্ষীণ আর ভীরু। শ্যামাকে যখন সে প্ৰণাম করিল মনে হইল দেহের ভার তুলিয়া সে উঠিয়া দাঁড়াইতে পরিবে না, এমন নরম সে মেয়ে, এত তার কোমলতা। মেয়ে পছন্দ করিযী শ্যামা বাড়ি ফিরিল। সে বড়ো খুশি হইয়াছে। এমন মেয়ে যে খুজিলেও মেলে না!! কী বৃপ, কী নম্রতা! ওর কাছে কোথায় লাগে শামু? মোহিনীর সঙ্গে বিধানকে সে একদিন জোর কবিয়া মেয়ে দেখিতে পাঠাইয়া দিল। ফিরিয়া আসিয়া মোহিনী বলিল, না মা, পছন্দ হল না মেয়ে।