পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in S SO মানিক রচনাসমগ্র শ্যামা মণিকে বলিল, যা তো মণি, তোর বউদিকে ঘরে নিয়ে গিয়ে বসা গে।...কী সব কাণ্ড বাবা এদের!!! রাতদুপুরে ফুট করে নতুন বউকে এনে হাজির-কীসে কী ব্যবস্থা হবে এখন ? বিধান ভয়ে বলিল, বাইরে তোমার বেয়াই বসে আছেন মা। তাকেও এনেছিস ? আমি পাবিব না। বাবু রাতদুপুরে রাজ্যের লোকের আদর-আপোন করতে, মাথা বলে ছিড়ে যাচ্ছে আমার, গা-হাত যা চিবুচ্ছে যেন মুচড়ে যাচ্ছে, --কী বলে ওদের তুই নিয়ে এলি খোকা ? একফোটা বুদ্ধি কি তোর নেই ? কী বাগ শ্যামাব! ছেলেবেলা যাকে সে ধমক দিতে ভয় পাইত সেই ছেলেকে কী তার শাসন ! বেশ গা-ঝাডা দিয়া উঠিযাই সে রাঁধিতে আসিয়াছিল। সুবৰ্ণকে দেখিয়াই তার মাথা ধরিয়া গেল, গা-হাত চিবাইতে আরম্ভ করিল, শ্যামার অন্ত পাওয়া ভার। কী শোচনীয়ভাবে তার মনের জোর কমিয়া গিযাছে। তারই সেবার্থে পবিণীতা পত্নীকে তারই সেবার জন্য অসময়ে বিধান টানিয়া লইয়া আসিয়াছে- শুধু অনুমতি নেযা নাই, আগে ছেলের এই কাণ্ডে শামা কত কৌতুক বোধ করিত, কত খুশি হইত, আজ শুধু বিরক্ত হওযা নয়, বিরক্তিটুকু চাপিয়া পর্যন্ত রাখিতে পারিতেছে না। এ আবার কী রোগ ধরিল শামাকে ? ছেলে একটি যৌবনোচ্ছিলা মেয়েকে বাছিয়া বিবাহ করিয়াছে বলিয়া জননীর কী এমন অবুঝ হওয়া সাজে। ছেলে তো এখনও পর হইযা যায় নাই ? মেনকা-উৰ্ব্বশী-তিলোত্তমার মোহিনী মায়াতেও পর হইযা যাওয়াবা ছেলে তো সে নয় ? শ্যামা কি তা জানে না ? এমন অন্ধ জ্বালাবোধ কেন তার ? বোধ হয়। হঠাৎ বলিয়া, ওবা খবৰ দিযা আসিলে এতটা হয়তো হাইত না। ক্ৰমে ক্ৰমে শ্যামা শান্ত হইল। একবাব পবনেব কাপড়খানার দিকে চাহিল, —না, হলুদ-কালি-মাখা এ কাপডে কুটুমের সামনে যাওযা যায না। —যা তো খোকা, চট করে ওপোর থেকে একটা সাফ কাপড এনে দে তো আমাধ। কাপড় বদলাইয়া শ্যামা বাহিরের ঘবে গেল। হারাধন বিধানের বিছানাযা বসিয়াছিল, শীর্ণদেহ, লিঙ্গাকৃতি লোক, হাতের ছতিটার মতো জরাজীর্ণ, দেখিতে অনেকটা সেই হারাণ ডাক্তারেন মতে । শ্যামকে দেখিকা হত বাধীন বুঝি একটু অবাক হইল। বলিল, আহা, আপনি কেন উঠে এলেন ? কেমন আছেলো এখন ঠা শ্যামা বলিল, খোকা বুঝি বলেছে আমার খুব অসুখ ? হারাধন বলিল, তাই তো বললে, গিয়ে একদণ্ড বসলে না, তাড়াহুডো করে সবাইকে নিয়ে বেরিযে পডল,---কাপড় কখানা গুছিযে আনার সময়ও মেয়েটা পায়নি। মেযোেব মাসি কেঁদে মরছে, আমন করে কেউ মেয়ে পাঠাতে পারে বেযান ? বোঝা গেল, শ্যামাকে সুস্থ দেখিয়া হারাধন অসন্তুষ্ট হইয়াছে। হারাধনের অসন্তোষে শ্যামা কিন্তু খুশি হইল। মধুব কণ্ঠে বলিল, ওমনি পাগল ছেলে আমার বেয়াই, আমার একটু কিছু হলে কী করবে: দিশে পায় না। সকলে উলুনের ধাব থেকে বাইবে এসে মাথাটা কেমন ঘুরে উঠল, পড়ে গেলাম উঠানে, তাইতে ভড়কে গেছে ছেলে। -- বডো তো কষ্ট হল আপনাদের ? শ্যামা মিষ্টি আনাইল, খাইতে পীড়াপীড়ি করিল, হারাধন কিছু খাইল না। খাইতে নাই। বলিয়া গেল, নাতি হইলে যাচিয়া পাত পাড়িবে। হারাধনকে বিদায় করিয়া শ্যামা সুবর্ণের খোজে গেল। কোথায় গেল সুবর্ণ? সে তো একতলায় নাই! সিঁড়ি ভাঙিয়া শ্যামা উপরে গেল। শীতলের পায়ের কাছে মাথা নত করিয়া সুবৰ্ণ বসিয়া আছে, তাল কোলে শ্যামার অন্ধ মেয়েটি। থাবা পাতিয়া বসিয়া ফণী হাঁ করিয়া বউদিদির মুখখানা