পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in জননী Y &\S) দিয়ে যাক।-কোথায় যে যায়, ফাক পেয়েছে কী ছেলের সঙ্গে ফুসফাস গুজগাজ করতে চলল--- কী মন্ত্র দিচ্ছে কানে কে জানে। সুবৰ্ণ ওষুধ মালিশ করিতে বসে। শ্যামা বলে, দাখ তো মণি ও বাড়ির ছাদে কে ? নকুড়বাবুর বঁশিবাজানে ভাইটে বুঝি? দে তো দবাজােটা ভেজিয়ে,--বউমা, আরেকটু সামলো-সুমলেই না হয় বসতে বাছা, একটু বেশি লজ্জা থাকলে ক্ষতি নেই কাবাও । সুবৰ্ণ জড়সড় হইয়া যায়। রাঙা মুখ নত করে। শ্যামা যখন এমনিভাবে বলে কোনো উপায়ে মিশাইয়া যাওয়া যায না শূন্যে ? ভালো লাগে না বলিয়া শ্যামারও ভালো লাগে না! সুবর্ণের স্নান মুখখানা দেখিয়া কত কী সে ভাবে। ভাবে, সে যদি আজ আমনি বউ হইত এবং আর কেহ যদি আমনি করিয়া তাকে বলিত, কেমন লাগিত তাব ? বিধানেব কানে গেলে কত ব্যথা পাইবে সে! মণি বড়ো হইতেছে, কথাগুলি তার মনে না-জানি কীভাবে কাজ কবে! এ কী স্বভাব, এ কী জিহ্বা হইয়াছে তার ? কেন সে না বলিয়া থাকিতে পারে না ? শ্যামা বাহিবে যায। বর্ষার মেঘলা দিন। ধানকলের অঙ্গনে আর ধান মেলিয়া দেয় না, অতবড়ো অঙগানটা জনহীন, কুলিরমণী নাই, পায়রার ঝাক নাই। খুকিকে শ্যামা বুকের কাছে আরও উঁচুতে তুলিতে পােব। বিধানের বউকে কী কটু কথা শ্যামা বলিযাছে, কী বিষাদ শ্যামার মনে-দিগদিগন্ত চোখের জলে ঝাপসা হইয়া গেল । আশ্বিনেব গোড়ায হারাধন মেয়েকে লইয়া গেল। যাওযার সময় সুবৰ্ণ অবিকল মা-হারা মেয়ের মতোই ব্যবহার করিয়া গেল। শ্যামা ভালোবাসে না, শ্যামা কটু কথা বলে, তবু মনে হইল সুবর্ণ যাইতে চায় না, এখানে থাকিতে পারিলেই খুশি হইত। শ্যামা নির্বিবাদে ভাবিয়া বসিল, এ টান বিধানের জন্য—সে যা ব্যবহার করিয়াছে তার জন্য সুবর্ণের কীসেব মাথা ব্যথা ? পূজার পরেই আমায় আনবেন মা।--সুবর্ণ সজল চােখে বলিয়া গেল। শ্যামা শুধু বলিল, আনব। বিধানের বউ! সে বাপেৰ বাড়ি যাইতেছে। বুকে জড়াইয়া একটু তো শ্যামা কঁদিতে পারিত ? কিন্তু কী করিবে শ্যামা, যাওয়াব জন্য সুবৰ্ণ তখন সাজগোজ করিয়াছে, বউয়ের সে চোখ-কািলসানো মূর্তির দিকে শ্যামা চাহিতে পাবিতেছিল না, মনে হইতেছিল, যাক, ও চলিযা যাক, দুদিন চোখদুটা একটু জুড়াক শ্যামার। পূজাব সময় মন্দা আসিয়া কয়েকদিন রহিল। শীতলকে দেখিতে আসিয়াছে। মন্দার জন্য সুবৰ্ণকেও দুদিন আনিয়া রাখা হইল। সুবর্ণ ফিরিয়া গেলে একদিন মন্দা বলিল, হঁয়া বউ, একটা কথা বলি তোমায়, ভালো করে তাকিয়ে দেখেছ বাউমার দিকে ? আমার যেন সন্দেহ হল বউ । শ্যামা চমকাইয়া উঠিল। তারপর হাসিয়া বলিল, না ঠাকুরবি, ও তোমার চোখের ভুল। সুবৰ্ণকে আর মন্দার ইঙ্গিত। কী বলিয়া গেল মন্দা ? সত্য হইলে শ্যামা কী অন্ধ, তার চোখে পড়িত না? শ্যামা বড়ো অন্যমনস্ক হইয়া গেল। সংসারের কাজে বড়ো ভুল হইতে লাগিল শ্যামার। কী মন্ত্র মন্দা বলিয়া গিয়াছে, সুবৰ্ণকে দেখিবার জন্য শ্যামাব মন ছটফট করে, সে ধৈর্য ধরিয়া থাকিতে পারে না। একদিন মণিকে সঙ্গে করিয়া সে চলিয়া গেল বাগবাজারে। মন্দার মন্ত্র কী শ্যামার চোখে অঞ্জনও পরাইয়া দিয়াছে? কই, সুবর্ণের দিকে চাহিয়া এবার তো শ্যামার চোেখ পীড়িত হইয়া উঠিল না ?