পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in SObr মানিক রচনাসমগ্ৰ অন্যে না বুকুক আমি তো যতীন মামাকে চিনি, আমি জানি, অতসী মামিও জানে ওই কথা কটির পেছনে কতখানি জোর আছে! বাঁশি বাজাবার জন্য মন উন্মাদ হয়ে উঠলেও যতীন মামা আর বাঁশি ছোবেন না। শেষ পর্যন্ত মামি ভালো হয়ে উঠল। যতীন মামার মুখে হাসি ফুটল। মামি যেদিন পথ্য পেল সেদিন হেসে মামা বললেন, কী গো, বাঁচবে না বলে? আমনি মুখের কথা কি না! যে চাঁড়াল খুড়োব কাছ থেকেই তোমায় ছিনিয়ে এনেছি, যম ব্যাটা তো ভালোমানুষ। আমি বললাম, চাঁড়াল খুড়ো আবার কী মামা ? মামা বললেন, তুমি জান না বুঝি ? সে এক দ্বিতীয় মহাভারত। মামি বললে, গুরুনিন্দ কোরো না। মামা বললেন, গুরুনিন্দ কী? গুরুতর নিন্দ করব। ভাগনেকে দেখাও না। অতসী তোমার পিঠের দাগটা । মামির বাধা দেওয়া সত্ত্বেও মামা ইতিহাসটা শুনিয়ে দিলেন। নিজের খুড়ো নয়, বাপের পিসতুতো ভাই। মা বাবাকে হারিয়ে সতেরো বছর বয়স পর্যন্ত ওই খুড়োর কাছেই অতসী মামি ছিল। অত বড়ো মেয়ে, তাকে কিলচড় লাগাতে খুড়োটির বাধত না, আনুষঙ্গিক অন্য সব তো ছিলই। খুড়োর মেজাজের একটি অক্ষয় চিহ্ন আজ পর্যন্ত মামির পিঠে আছে। পাশের বাড়িতেই যতীন মামা বাঁশি বাজাতেন আর আকণ্ঠ মদ খেতেন। প্রায়ই খুড়োর গর্জন আর অনেক রাতে মামির চাপা কান্নার শব্দে তীর নেশা ছুটে যেত। নিতান্ত চটে একদিন মেয়েটাকে নিয়ে পলায়ন করলেন এবং বিয়ে করে ফেললেন। মামার ইতিহাস বলা শেষ হলে অতসী মামি ক্ষীণ হাসি হেসে বললে, তখন কি জানি মদ খায়! তাহলে ককখনো আসতাম না। মামা বললেন, তখন কী জানি তুমি মাথার রতন হয়ে আঠার মতো লেপটে থাকবে! তাহলে ককখনো উদ্ধার করতাম না। আর মন্দ না খেলে কি এক ভদ্রলোকের বাড়ি থেকে মেযে চুরি করার মতো বিশ্ৰী কাজটা করতে পারতাম গো! আমি ভেবেছিলাম, বছরখানেক— মামি বললে, যাও, চুপ করো। ভাগনের সামনে যা তা বাকো না। মামা হেসে চুপ করলেন। মাস দুই পরের কথা। r কলেজ থেকে সটান যতীন মামার ওখানে হাজির হলাম। দেখি, জিনিসপত্র যা ছিল বাঁধাৰ্ছিদা হয়ে পড়ে আছে। অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম, এ সব কী মামা ? যতীন মামা সংক্ষেপে বললেন, দেশে যাচ্ছি। দেশে? দেশ আবার আপনার কোথায় ? যতীন মামা বললেন, আমার কী একটা দেশও নেই ভাগনে ? পাঁচশো টাকা আয়ের জমিদারি আছে দেশে, খবর রাখি ? অতসী মামি বললে, হয়তো জন্মের মতোই তোমাদের ছেড়ে চললাম ভাগনে। আমার অসুখের छन३ cों9ों श्ल। বললাম, তোমার অসুখের জন্য? তার মানে ? মাঝখানের প্রাচীরটা ভেঙে দুটাে বাড়ি এক করে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।