পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in SV8 মানিক রচনাসমগ্র আমি বললাম, ঠিক জানি না। ইচ্ছা হয় সমর্থন করি, কিন্তু বাধা পাই। তোমার সিদ্ধান্তে অনেক জটিলতা, সহজে মেনে নেওয়া কঠিন । তোমায় আমি চোখ বুজে সমর্থন করতাম। যদি--- যদি ? যদি তোমার দেশপ্রেম নিজের তেজে স্বামী-পুত্রের প্রেমকে ছাপিয়ে যেত, যদি রাগ আব অভিমানের ভেজাল না থাকতু । সে হাসল। বললে, তাপসী নই, মন নির্বিকার নয। ভেজাল হয়তো আছে। কিন্তু তুমি যে রাগ আর অভিমানের কথা ভাবিছ তার ভেজাল নেই। তুমি ভাবিছ আমি ঝগড়া করে কেঁকোব মাথায় চলে এসেছি। তা সত্যি নয়। সে ভয় আমারও ছিল। কতদিন ধরে চেষ্টা করে আমি বাড়ি ছাড়তে পেবেছি জান ? ছ-সাত মাসের বেশি। রাগের মাথায় চলে এসেছি ভেবে পরে পাছে আমার অনুতাপ হয়। এই ভয়ে যখনি সে বেশি রকম খারাপ ব্যবহাব করত। আমি গৃহত্যাগের সময় পনেরো দিন পিছিয়ে দিতাম। প্ৰতিজ্ঞা করেছিলাম যে অন্তত পনেরোটা দিন যখন রাগের কোনো কারণ উপস্থিত হবে না। তখন বাডি ছাড়ব, তার আগে নয়। এই প্ৰতিজ্ঞা বজায় রাখতে গিযে, আসবার জন্য পা বাড়িয়ে থেকেও ছ-সাত মাস আসতে পাবিনি। শেষের দিকে হতাশ হয়েই পড়েছিলাম যে একবারও খিটমিটি বাধবে না। এমন পনেরোটা দিন এ জীবনে আসবে না।” কিন্তু হঠাৎ তার কঠিন অসুখ হল সেই সুযোগে চলে এলে! সে হাসল।--শোনোই আগে, পরে মন্তব্য প্রকাশ করবে। তার তো অসুখ হল, আমি নাওয়া খাওয়া ঘুম সব ছেড়ে দিযে এমন সেবাটািই করলাম যে অসুখ ভালো হওযার সঙ্গে সেও কিছুকালোব জন্য ভালো হয়ে গেল। ঠিক বিয়ের দিনগুলি যেন ফিরে এল—এত আদব, এত সোহাগ, এত ভালোবাসী! পনেবো দিন হঠাৎ সদয় অদৃষ্টের দান ভোগ করে নিজেকে ছিনিযে নিয়ে আমি চলে এলাম। রাগ করে এসেছি আমি ? ঝগড়া করে এসেছি? তা আব্ব বলতে হয় না। . তবে এলে কোন ? না এসে চলল না। তাই। তার মানেই তুমি হার মেনেছ।। নগেনবাবুর সঙ্গে যে বাজি রেখেছিলে তাতে তোমাব হাব হয়েছে। কীসের বাজি ? মনে নেই? একদিন বলেছিলে সে নিছক স্বামী, বিধাতা নয়। চোখ বোজার আগে তোমায বাড়িছাড়া করব সাধ্য তাব নেই, নেই, নেই। নেই তো! আমায় কেউ বাড়ি-ছাড়া করেনি, আমি নিজে এসেছি। শুধু স্বামীকে সইতে না পেরে চলে আসব আমি কী তেমন মেয়ে ? নই, নই, নই। এগারো বছর ধরে তার অবিচার অত্যাচার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল—সে জন্য নালিশ করতেও আমি ভুলে গিয়েছিলাম। তা ছাড়া স্বামী কি সারাদিন অত্যাচার করে ? চব্বিশ ঘণ্টায় দিন, ক ঘণ্টা মানুষের নিষ্ঠুরতায় ধৈর্য থাকে? যদি কোনো বইয়ে পড়ে থাক অত্যাচারী স্বামীর কথা, জানবে লেখক শুধু চব্বিশ ঘণ্টার গোটা একটা দিনের আধঘণ্টার হিসেব দিয়েছে, বাকি সময়টা চালাকি করে রেখে দিয়েছে নেপথ্যে ! ওই বাকি সময়টা স্নেহ-ভালোবাসায় বোঝাই না হয়ে একদম ফঁাকা হতে পারে---কিন্তু ও সব ফাক সংসারী মেয়েমানুষের সয়। শুধু স্বামী যার অবলম্বন, সপ্তাহে একটিও মিষ্টি কথা না শুনলে তার অসহ্য ঠেকতে পারে, আমার তো একমাত্র স্বামীই ছিল না জীবনে অবলম্বন! শুধু স্বামীর হিসাবে অভাগিনি হলে অভাগিনি হয়েই আমি থাকতাম ভাই । তার হীনতা যদি শুধু আমার প্রতি অন্যায় করে নিরস্ত থাকত, যদি আমাব বর্তমান জীবন এবং ভবিষ্যতে যে জীবন পৃথিবীতে রেখে সাব সমস্ত গ্রাস না করত, আমি মুখ