পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in অতসী মমি ンやう○ বুজে তার সংসার ঘাডে করে মারতাম। সুখ শান্তির অভাব আমায় কাতর করত না, অনাহার, অনিদ্রা, প্রহার, নির্যাতন উপেক্ষা কিছুই মুছে নিতে পারত না মুখের হাসি। জীবনের আংশিক সফলতা পেলেই আমি তুষ্ট থাকতাম। কিন্তু তা হল না। কতক স্বামীর জন্যে কতক পারিপার্শিক অবস্থার অভিশাপে সমগ্রভাবে আমি ব্যর্থ হয়ে গেলাম-সম্পূর্ণভাবে আমার জীবন হল অকারণ অর্থহীন। স্বামী নয়, দুঃখদুর্দশা নয়—ব্যর্থ বেঁচে থাকাটা আমার সাইল না। আমার আত্মা আর্তনাদ আরম্ভ করে দিল । সতিনের ভয়ে ?-—বলে আমি খোচা দিলাম। সে চমকে উঠল। সতিনেবা ভয়ে আত্মার আর্তনাদ ? সতিন দ্য সতিন হয়েছে না কি এর মধ্যে ? স্ত্রী ছাড়া তার চলবে না জানতাম, কিন্তু এত শিগগির! আমার পায়ের আলতার দাগ এখনও বোধ হয। ঘরের মেঝে থেকে মুছে যায়নি। আমি কি তার ঘরের এতখানি স্থান জুড়ে ছিলাম যে বিশাল ফাকটা সইল না, তাড়াতাডি পূৰ্ণ করতে হল ? নালিশ ; ক্ষুন্ন ক্ষুব্ধ অভিযোেগ! মনে হল, অভিমানও জেগেছে——ঈর্ষার বসন পরা অবুঝ অভিমান। মুখে একটা কালো ছযা ভেসে এসেছে, দুচোখে ঘনিয়েছে ব্যথা। দেখে আমার বিশেষ ভালো লাগল। না। মুখে সমর্থনা করি আর না করি মনে মনে তার মানবীত্ব ঘুচিয়ে তাকে দেবীর মতো জ্যোতির্ময়ী করে তুলেছিলাম - দধীচি থেকে আরম্ভ করে আজ পর্যন্ত সংখ্যাহীন জ্যোতিষ্ক যে-জ্যোতির সঙ্গে পরিচয্য করিয়েছে মানষের। মানবতার ছায়াপাতে মমতাদির সে ভাস্বর মূর্তি কল্পনাব নেপথ্যে হঠাৎ যেন মনে হয়ে গেল । বললাম, এবার আমাব পুবে অসমর্থন মমতাদি! ছলনা করেছ নিজেকে। ভেবেছ কর্তব্য ত্যাগ বুঝি সত্যি ৩্যাগ। দুঃখের কাছে হার মেনে তুমি পালিযেছ কর্তব্য পিছনে ফেলে! সে বললে, কর্তব্য মানে ? স্বামীসেবা ? তনুমন দিয়ে তনু পরিচর্যা ? শিক্ষা তোমায়। উদার কবেনি দেখছি । এই নারী-বিদ্রোহের যুগে ও কী কথা বলছি তরুণ ? কোন যুগের মানুষ তুমি ? --- এ যুগের। আমায টেনো না। আমার শিক্ষা অতি অনুদার। উদার শিক্ষা কোথায পাব ? নচিকেতার মতো যমের বাড়ি না গেলে আর সে শিক্ষা জুটিছে না। দুঃখ এই যে যম আমায় বাড়ি ফেরার জন্য ছেড়ে দেবে না। কিন্তু তনু-পরিচর্যার নালিশ পুরোনো, পচা , নিজেই বলেছ ও জন্য বাডি ছাড়িনি। একটা অমানুষের মঙ্গল যে করতে পাবল না, নিজের লোকের অত্যাচার সইতে পারল না, লক্ষ মানুষের মঙ্গল করার শক্তি সে কোথায় পাবে, পরের অত্যাচার সয়ে কী করে ব্ৰতবক্ষা করবে ? —লাখো মানুষের আশীর্বাদের জোরে। কিন্তু তোমার যুক্তিটা বেশ! লজিকেব। এই ফ্যালাসির মতো-মানুষ অমর নয়, বানর অমর নয়, অতএব মানুষ বানর। একের সঙ্গে লাখের তুলনা চলে ? যে বক আকিতে পাবল না, সাহিত্যিক হয়ে সে মানুষের সৃষ্টি করতে পারবে না। এ কথা বলা যায় ? একটিমাত্র রত্নাকরের মঙ্গল করে গেলে সে একদিন বাল্মীকি হয়ে উঠবে এমন আশা করা বোকামি। কিন্তু এ আশা অনাযাসেই কবা যায় লাখের মধ্যে হাজাব বাল্মীকি ঘুমিয়ে আছে! গণ্ডি ছােটাে হলেই যে ভালো কাজ করা যাবে তার মানে নেই! বাডিবা বউ সমস্ত বাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে পারে—কিন্তু বাড়ির সবচেয়ে ছােটাে ঘরটি পরিষ্কার করার জন্য ডাকতে হয় মেথরকে। আমি চেষ্টা করিনি ভেবেছ? এগারো বছর চেষ্টা করেছি। কিন্তু ঘরের পাকা মেঝেতে আমার চেষ্টার লাঙল আঁচড় ধকাটতে পারেনি-ফসল ফলাব কী! তাই এসে দাঁড়িয়েছি। এই বিস্তীৰ্ণ মাঠে। যত আগাছা থাক মাটি যত শক্ত হােক, অল্প একটু স্থান পরিষ্কার করে আবাদ করতে পারব না? বাকি জীবনের চেষ্টায় একটু সোনা ফলবে না? পারব।--ফলবে। সে থামল। একটু ভেবে বললে, এই কথাটা আমি ভাবতাম।