পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in SNt মানিক রচনাসমগ্ৰ জন্মাবে না ! শুনে আমি থ বনে গেলাম। সে বললে, ভড়কে গেলে দেখছি। দুর্ভাবনার কারণ নেই। দেশের অপদার্থ ধনীর ঘরে ? শহরের বিষপান করে যে কটি মানুষ জ্ঞান হারিয়েছে তাদের বাড়িতে? কলকাতাতেই অগুনতি ডালিম বেদনা,-আইন করে তাদের সকলকে হত্যা করলে কলকাতার নারী-সমাজের কী আসবে যাবে? বরং লাভ হবে-ক্ষতি নয়। আমার মতো মায়েরা মা হতে অস্বীকার করলে সূতিকাঘরের অনাবশ্যক ভিড় কমবে, দেশের উপকার হবে। গান্ধারীর সংযমে কুরুক্ষেত্রের কলঙ্ক রদ হবে। ঘরের মানুষের সঙ্গে লড়াই করে ধর্মকর্মের শক্তিক্ষয় হবে না,- জগতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ধর্ম জগতে ছড়িয়ে পড়ার সময় পাবে, জগতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কর্মী জগতের স্বাধীনতা মুহূর্তে অর্জন করবে। দুৰ্যোধনকে সজুত রাখতেই যুধিষ্ঠির আর অৰ্জ্জুনের সময় ও শক্তি ব্যয়িত হলে গান্ধারীর কী লজ্জা ভাই ? সহজ লজায় কি মা হয়ে ছেলেকে বলেছিল, তোমার নয়, ধর্মের জয় হোক । আমি বললাম, তবে বললে কেন-দেশ জন্মাবে না ? কথােব সুরে মনে হল দেশ না জন্মালে ক্ষতি নেই। সে বললে, ও যদির কথা। আমরা মা না হলে যদি দেশের সূতিকাঘরের সাড়ে তিনদিকে দেয়াল সত্যি ভেঙে পড়ে। জন্মানোটাই কি দেশের চরম সৌভাগ্য? না জন্মানোটা দুৰ্ভাগ্য ? কত দেশ গেছে সমুদ্রের তলে, কত জাতির চিহ্ন লুপ্ত হয়েছে। সে জন্য কে তাদের দোষ দেয় ? অবসানের দুঃখ কী ? মৃত্যু যদি মানুষের লজ্জা না হয়, মানুষে-গড়া জাতির মৃত্যুতেও লজ্জা নেই। ক্ৰমাগত রোগে ভোগার চেয়ে বরং মরণ ভালো । আমি বললাম, এ সব হতাশার বাণী, ভুল কথা। মৃত্যুতে মানুষের লজ্জা নেই, কারণ মৃত্যু যবনিকা নয়, পটপবিবর্তন। নিজের জীবন মানুষ পৃথিবীর মানুষের মধ্যে জমা করে রেখে যায়, স্বৰ্গে নিয়ে যায় না । জমা করা জীবন যখন পচে যায় ? একমাত্র নোয়া-কে বাঁচিয়ে প্রলয়ের মধ্য দিয়ে যখন ভগবান ভ্ৰম সংশোধন করতে বাধ্য হন ? তখন ভগবান অত্যাচারী খেয়ালি। প্ৰলয় যে এনে দিতে পারে সে সংস্কারে অক্ষম হবে কেন ? জীবনের রোগ আছে, ফঁাসি ছাড়া আরোগ্য নেই? ক্ৰমাগত রোগে ভোগার চেয়ে মরণ ভালো, কিন্তু রোগ সরিযে বেঁচে থাকা আরও ভালো। সে মৃদু হাসল, তোমার হল কী? আমি পুবে পা বাড়াচ্ছি, তুমি হাঁকিছ পশ্চিমে যাত্রা নাস্তি। সুস্থ সবল হয়ে বাঁচা মন্দ আমি তা বলিনি। বলেছি, লয় অপরাধ নয়, লয়ে লজ্জা নেই। এটা আমাদের আলোচনা-গণ্ডির বাইরের অতিরিক্ত সত্য। আমার সমস্যার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে গিয়ে ব্যাকুল হয়ো না। পাগল! হাজার হাজার মানুষের দেহের রক্ত আর জীবনের দিন দিয়ে অসুস্থ দেশের জন্যে ওষুধ তৈরি হচ্ছে, আমি করব তার প্রতিবাদ ? অতিরিক্ত দার্শনিক তত্ত্বকথা থাক, আমার কথাটা নিয়ে আলোচনা চলুক। আমি বলেছি, অসুস্থ দেশের ওষুধের উপযুক্ত জীবন সৃষ্টি হােক, কিন্তু কুপথ্য আর বিষের সৃষ্টি যেন না হয়। তুমি প্রতিবাদ করা? আমি বললাম, ঠিক প্রতিবাদ নয়। বলতে চাই, সে তো তোমাদের হাতে। Gr মানে, সব শিশুই আরম্ভ-পরিণতি নয়। জীবনের ভিত্তির মিস্ত্ৰিও তোমরা। তুমি ছেলে দুটিকে মানুষ করে গড়ে তুললে না কেন? স্বামীর মঙ্গল করতে পারলে না, তার কারণ বুঝতে পারি তার