পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in অতসী মামি Տ Գ Տ উৎসবের পরের বাত্রেই বক্তকরবী অভিনয় হবে। সে পর্যন্ত দুটােবই রিহার্সেল চলবে একসঙ্গে উৎসব ও অভিনযেব ; ভালোবাসা ও নাটকের । অনিন্দিতা। তবু কিছু বলে না। সকলের হা-হুতাশ তার কানে আসে। পবাশবেব এমন কুমতি হবে, তার চেয়ে বয়সে বড়ো একটা বেহায়া মাস্টারনিকে শেষ পর্যন্ত সে বিয়ে করার জন্য খেপে উঠবে এ কথা কেউ যে স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি, অনিন্দিতাকে বারবার তা না শুনিয়ে কেউ তৃপ্তি পায় না। অনিন্দিতা হোসে বলে, আমি তার কী করব ? তাকে কেউ কিছু করতে বলেনি। কিন্তু শিপ্রাকে কোকিনদের বোস-বাডিবা বউ মনে করতে গিয়ে সকলোব মন খুঁতখুঁত করে। তারা বিশেষ কবে অনিন্দিতাকেই মনেব দুঃখ নিবেদন করে। শিপ্রাকে গ্রামে আনার দায়িত্ব সকলের বিরুদ্ধ সমালোচনা ও নালিশেব সমবেত বোঝা হয়ে অনিন্দিতার কঁধে চেপে থাকে। শৈশবের শেষে গ্রামে অনিন্দিতার নিন্দা নেই, দােষ তাকে কেউ দেয় না। কিন্তু সকলের ক্ষুন্ন ও কুদ্ধ অভিযোগ শিপ্রা ও পরাশরের নাগাল না পেয়ে অনিন্দিতার চারিদিকে এসেই ভিড় করে। অনিন্দিতাব মধ্যস্থতায্য তাদেব নালিশ যেন যুগল অপরাধীদের বিচ্ছিন্ন করে দেবে। অনিন্দিতার সামনে পড়ে গেলে শিপ্রা একটু হাসে। তাকে এত সুন্দর দেখায় যে তাকে আব তার হাসিকে চেনা যায় না। মুখ থেকে সে যেন এক পাবত মরা চামড়া তুলে ফেলেছে, লাবণ্যের একটা অজ্ঞাত মাজন ক্ৰিমে দেহ মার্জন করেছে। কোকিনদে এসে এই কদিনের মধ্যে তার স্বাস্থ্য অসাধারণ উন্নতি লাভ করেছে, তার দেহের কঠোর শুভ্রতা রঙে ভিজে কোমল হয়ে এসেছে। মাথাব চুলগুলি পর্যন্ত যেন খোলস বদলে হয়েছে উজ্জ্বলতাব। তবে মুখে চােখে যে অশান্ত উদবেগ ও গ্লানিকর বিবিক্তির অভিব্যঞ্জনা অনিন্দিতা চিরকাল দেখে এসেছে এখন তার চিহ্ন নেই। তার দৃষ্টি গভীব ও গভীর, মাঝে মাঝে অন্যমনস্ক অবস্থায্য অনিন্দিতাব দিকে চেয়ে একটু কেবল শঙ্কা তাৰ চোখে দেখা দেয় । অনিন্দিতা লক্ষ কবে, শিপ্ৰা প্রতিদিন নিজেকে সংহত ও অখণ্ড করে এনে পরাশরেব কাছে আত্মসমৰ্পণ করেছে। ভোজবাজিব মতো তাব জাদুনির্মিত শহরটি ধীরে ধীরে লোপ পেযে আসছে, অকস্মাৎ সমস্ত বিষয়ে সে যে-সব বাতুল্য আমদানি করেছিল একে একে তাদের পবিত্যাগ কবে সে স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। একটি পুরুষের সঙ্গে স্থায়ী সম্পর্ক স্থাপনের জন্য যে সব সুপ্রাচীন ও অপরিবর্তনীয় বাঁধনে তাকে বেঁধে ফেলা জগতেব সব চেযে আধুনিক মেয়েটিব পক্ষেও এখন পর্যন্ত অপরিহার্য হয়ে আছে, অনিবাৰ্য অধ্যবসায়ে পবাশরকে শিপ্রা সেই সব বাধনেই ক্ৰমে ক্ৰমে নিজস্ব করে ফেলছে। পরাশবকে সে যতখানি আকর্ষণ করে, নিজেকে ততখানি ভালো লাগায়। মুখে যখন সে ঘোষণা কবে যে জগতেব মানুষ। শুধু সেইদিনই সুখী হতে পারবে একজনের জীবনে আবেক জনের যেদিন কোনো কর্তৃত্ব থাকবে না, যার যেভাবে খুশি নিজের জীবনটা কাজে লাগবে অথবা অপব্যয় করবে। —দুটি চােখেব দৃষ্টি দিয়ে সে তখন এই নিয়ম থেকে পরাশবকে অব্যাহতি দেয়, মানুষের চােখের আডালে এই কোকানন্দ গ্রামের অনেক গেয়াে-বউয়ের মতো পবাশরের কাছে প্রেমেব মোহে সে দাসী হয়ে থাকে। অনিন্দিতা তাকে বলতে শুনেছে, বনিবনা না হলে আমরা কিন্তু পৃথক হয়ে যাব। একটা দিনও গায়ের জোরে কাছাকাছি থাকবার চেষ্টা করব না। এবং এটুকু জানতেও অনিন্দিতার বাকি থাকেনি যে পরাশরকে এ কথা বলার আগে শিপ্ৰা তিনদিন চেষ্টা কবে পরাশরেব মনে বিশ্বাস জন্মিযে দিয়েছে বনিবন্যার অভাব তাদের এ জীবনে কখনও হবে না। কারণ, এতকাল শিপ্রা যে নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করেছে সে শুধু পরাশরের মতো এমন একজনের দেখা সে এতদিন পায়নি বলে, যার সঙ্গে কোনোদিন মনোমালিন্য না হবার সম্ভাবনায় প্রথম থেকে সে বিশ্বাস করতে পারে।