পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/১৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOKS. in অতসী মামি S dS অনন্ত কেতকীর ঘরে ফিরিয়া গেল। শঙকর কি পাগল হয়ে গেছে কেতকী ? কেতকী জানালা ছাড়িযা নড়ে নাই——এই সুস্পষ্ট বিচলিতভাবে সে ঘুরিয়া দাঁড়াইল। তা তো জানি নে। আমার মনে হয় ওঁর রক্তে এই বিকাব ছিল, হঠাৎ একদিন প্ৰকাশ পেয়েছে। এখানে আসবার আগে আমি একটা পাটি দিয়েছিলাম। একটা কথা শোনো বলে আমায় তেতিলার সেই ছোটাে ঘবে ডেকে নিয়ে বাইরে থেকে শিকল তুলে দিল। সেই আমার প্রথম শাস্তি পরে আব কঁাদিনি, সেদিন কেঁদেছিলাম, আর ভেবেছিলাম জাপান কতদূর গ অনন্ত মৃদুস্বরে বলিল, বসো কেতকী। বসে বলে। কেতকী বসিয়া বলিল, তুমি তো ছিলে না, শেষ দু মাসের ইতিহাস শোনো। দুদিন তিনদিন অস্তব রাত্রে দুঃস্বপ্ন দেখে আতিকে জেগে উঠত। কঁাপিতে কঁাপিতে বলত, কেতকী ওঠে। আলো জ্বালো শিগগিব! বক্তে আমি নেয়ে উঠেছি। ধড়মড় করে উঠে আলো জ্বালতাম। দেখতাম, ঘামে ওর সর্বাঙ্গ ভেসে গেছে। স্বপ্নের কথা বলতে গিয়ে ও বারবার শিউরে উঠত। গগন-ছোঁয়া কালীমূর্তি, প্রকাণ্ড জিব বুকে এলিয়ে পড়েছে, দু কষ বেযে স্রোতের মতো বক্ত ঝরিছে—এর পায়ের কাছে স্বপ্নে ও দিত নববলি । কেতকী জালাল; ; "মাসছ সবিয়া গেল। তাহার চোখে জল আসিয়া পড়িতেছিল। বাহিরের দিকে দৃষ্টি রাখিয়া বলিল, সেই থেকে আমায এখানে এনে ফেলেছে। একটা ঝিকে পর্যন্ত কাছে থাকতে দেয না, এক-একদিন বাত্রে আমার এমন ভযা করে। --যে তাড়াতাডি মেঘ বাড়ছে রাত্রে না জানি কী ঝড়বৃষ্টিই হবে! অনন্ত বলিল, ঝড়বৃষ্টি হওয়া আর আশ্চর্য কী। আশ্বিনে ঝড কালবৈশাখীর চেয়ে ভয়ানক হতে পাবে, তা জানো ? আগামী ঝড়ের চিন্তা যে তাহাকে বিশেষ বিচলিত কবিয়াছে স্পষ্টই বুঝিতে পারা যায। অনন্ত সহজভাবে বলিল, তা নিশ্চয় পারে! কিন্তু তোমাদেব বাডিতে কি সন্ধ্যাদীপ জ্বলে না! অঙ্গীকাব হয়ে গেল যে ! কে জ্বালবে সন্ধ্যাদীপ ? আমি ? কােজ নেই সন্ধ্যাকে আমন লজ্জা দিয়ে! বলিয়া কেতকী হাসিল, চাকিব লণ্ঠন জ্বেলে আনছে। চাকর বোধ হয় এই কাজেই ব্যাপৃত ছিল, অল্পক্ষণ পরেই ঘবে আলো দিযা গেল। সঙ্গে সঙ্গে চারিদিকে কী পরিবর্তন যে ঘটিয়া গেল বলিবার নয়। ঘর আলো হওযমাত্র বাহিরের অন্ধকার গাঢ় হইয়া ধ্বংসপুরীকে নিজের মধ্যে যেন সম্পূর্ণ লুপ্ত করিয়া দিল। অনন্তর মনে হইল একটা বিশ্ৰী দুঃস্বপ্নের শেষে কেতকীর তিন বৎসর পূর্বেকার ঘরখানাতেই সে জাগিয়া উঠিয়াছে :- এ ঘরের চাবিদিকে ভাঙা ইটেব স্থািপ নাই, আগাছার জঙ্গল নাই, আছে ফুলের বাগান এবং বাগানের শেষ শহরের জনবহুল আলোকিত পথ। পাশের ঘরে বাসনপত্ৰ নাড়াচাডার শব্দ পাওয়া যাইতেছিল। কিছুক্ষণ পরে ঠাকুর ও চাকর দুয়ারে আসিয়া দাড়াইল । আমরা যাচ্ছি মা । কেতকী বলিল, সব ভালো করে ঢেকে রেখেছ ঠাকুর ? আচ্ছা, একটু দাড়াও। অনন্তর দিকে চাহিয়া বলিল, খেয়ে নিয়ে তুমিও এদের সঙ্গে চলে যাও। কাছারি-বাড়িতে এরা তোমার শোবার বাবস্থা করে দেবে।