পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in SS. O মানিক রচনাসমগ্ৰ পাঁচ বছরে পাঁচশো দিন তার জন্য মা যে কঁাদিয়াছেন এই সহজ অনুমানও আজ মুকুলের নাই। আজি মার কাছে তার যা পাওনা ছিল পাঁচ বছর ধরিয়া মা তাহা দিয়া আসিতেছেন। আজ যে স্নেহ ফুরাইয়া যায় নাই, অভ্যস্ত দুঃখের অন্তে মার চােখ দিয়া জলও যে পড়িয়াছে সে গৌরব মায়েরই, এবং সেই গৌরবই মার পরিচয়। মুকুল হিসাব করিতে শিখিয়াছে কিন্তু পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের মতো হিসােব শেখে নাই। অশিক্ষিতা মেয়ের মতো। ওরা অনেক দোষ। তবে সম্মান সে পাইল প্রচুর। আজ না চাহিতে শরবত আসিল, দাদাকে শরবত করিয়া দিতে পারিয়াই পটলি কৃতাৰ্থ। বসন্তী পাখা আনিয়া কখন বাতাস করিতে আরম্ভ করিয়াছিল, হাত ব্যথা হইয়া গেলেও সে থামে নাই। শশীমুখী ময়দা মাখিতে বসিযা গিয়াছে মুকুল গবাম লুচি খাইবে। দুপুরবেলা ভাতের বদলে লুচি! স্নেহের পরিবর্তে যে সমাদর জুটিতেছে ও যেন তারই অতিবাস্তব বুপক। সুসান করিতে যাওয়ার আগে প্রত্যেকের জন্য সে যে উপহার আনিয়াছিল একে একে সকলকে মুকুল বঁটিয়া দিল। মাসির জন্য কিছু আনা হয নাই। মুখ কালো করিযা মাসি হাসিবার চেষ্টার সঙ্গে বলিলেন, আমি কিছু চাইনে বাবা- -অত শখ আমার নেই। তুই বেঁচে থাক, তাই আমার ঢের! মাসি একটু আড়ালে যাইতেই মা মুকুলকে বলিলেন, ওকে একজোডা কাপড় দিস।। মুকুল বিমৰ্ষভাবে বলিল, দেব। বেশি দামি নয়, সর্বদা ব্যবহারের জন্য দু-তিন টাকা জোড়ায় কাপড় দিলেই হবে। তাই দেব। খাওয়া-দাওয়ার পর ঘবে শুইতে যাওয়ার আগে মুকুল চারুর ঘরে গেল! চাবু বলিল, মুকুলদাদা এতক্ষণে বুঝি মনে পড়ল? মুকুল বলিল, আহা তুই এমন হয়ে গেছিস চারু! বেঁচে তো আছিা! তোর কাপড় ছেড়া কেন? এমন নোংরা বিছানায় তুই শুয়ে আছিস কেন ? আস্ত কাপড় কে দেবে বল? বসে না মুকুলদা! না, কাপড় ময়লা হয়ে যাবে? এক বোন সুখে আরেক বোন দুঃখে পর হইয়া গিয়াছে। রোগে শোকে পরের গলগ্ৰহ হইয়া জীবনধারণের লজ্জায় সকলের আগে চারু মুকুলের স্নেহকে বিক্রয় করিয়াছিল, অনেক ভণিতা করিয়া পত্র লিখিয়াছিল যে মুকুলদা, বড়ো কষ্টে আছি, আমায় পাঁচিশটা করে টাকা দেবে মাসে মাসে ? টাকা অবশ্য মুকুল দিতে পারে না, বিদেশে বিশেষ কারণে তখন তাহার অনেক খরচ। কিন্তু তাই বলিয়া চারু কি তাহাকে এমনভাবে খোঁচা দিতে পারে? চারুর এমন অবস্থা হইয়াছে জানিলে সে কি সামান্য পাঁচিশটা টাকা ওকে না দিয়া থাকিতে পারিত ? চারুর কত আত্মীয়স্বজন, যার কাছেই থাক সুখে না থাকিলেও দুঃখ পাইবে না। এই ছিল তাহার ধারণা। বাস্তবিক, এই ধারণাই তার ছিল। তাছাড়া চারুর প্রকৃতি বড়ো হীন হইয়া গিয়াছে।