পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in शांत्रेित ज्नांकि দেহে নাই কান্তি মনে নাই শান্তি। গরিবের এ দুটি অভাব চিরদিনের। কিন্তু চিরদিনের অভাবও স্বভাবে পরিণত হয় না, একদিন সহিয়া যায় এই মাত্র। এবং তাঁহাতেও আপশোশ বড়ো কম নহে! নিজের একটা অপ্রিয় অকথ্য বুপান্তরের আপশোশ। ওমনিবাস ট্রেন, ছটা সতেরো মিনিটে ছাডিয়া বজবজ যাইবে । ট্রেনটি এমনি সংক্ষিপ্ত যে মেয়েগাড়ির বাহুল্য নাই। গাড়ি ছাড়িবার কয়েক মিনিট পূর্বে উঠিয়া সুশ্ৰী মেয়েটি ঠিক সামনে শক্ত হইয়া বসিয়া আছে। মুখের দিকে চাহিবার ইচ্ছাও যেন হয় না। ভয় করে! মনে হয ক্ষণকাল চাহিযা থাকিলে পাতলা ঠোঁটদুটি শুদ্ধ ও শীর্ণ হইয়া উঠিবে, মসৃণ গাল ভাঙিয়া ব্ৰণেব দাগে ভরিযা। যাইবে, ভাসা-ভাসা চোখদুটি বুভুক্ষায় মুমূর্ষু পশুর চোখের মতো পীড়িত ও সকাতব হইয়া উঠিবে, কপালে দেখা দিবে তেলমাখা চটচটে ঘাম! বুপ দেখিলে দুচোেখ কুবৃপের স্বপ্নে বিভোর হইয়া যায়! কী আতঙ্কেই মিনিটগুলি ভরিয়া উঠিল। মাত্র দশ মিনিটেব পথ, গাড়ি স্টেশনে দাডাইল । লাইনের একদিকে শাহবােতলি বালিগঞ্জ, অপবদিকে গ্রাম কসবা। আভিজাতোব ছাপমারা পিচ-বাঁধানো পথটি রেলের গেট পার হইয়াই গোবিব আবে কাদায় ভরিয়া উঠিয়াছে। দুপাশের দোকানগুলোর গ্রাম্যমূর্তির গাযে শহুরে ভাবেব তালি লাগানো-— খালি-গায্যে বুট-পরা মানুষের মতো। কিন্তু এগুলোব দিকে চাহিয়া নিতাই শঙ্করেব মনে হয যে এ রকম একটা দোকান দিতে পারিলেও বুঝি মন্দ হইত না। ঘোষালপাড়া ছাড়াইলেই শঙ্করের বাডি। বাড়িটি পাকাও বটে দোতলাও বটে কিন্তু যেমন পুবাতন তেমনি ক্ষুদ্র। পথ হইতে দোতলার খোলা ছাদে উঠিবার খোলা সিঁড়ি খানিকটা চোখে পড়ে ; মনে হয। চুনবালির বাধনহীন কতকগুলো আলগা ইটে পা দিয়া এ বাড়ির লোকের উর্ধ্বগতিৰ প্ৰয়াস। স্থানটি কিন্তু বেশ ফাঁকা আর পরিষ্কার। বাড়িব সামনে একটা পুকুর-ছোটাে কিন্তু জল পচা নয। দক্ষিণে হাত-পঞ্চাশেক মাঠের ব্যবধানে রায়বাহাদুর মহাদেব বোসের বাড়ি। রায়বাহাদুরের অনেক টাকা ছিল বলিয়া এখানে সস্তা জমি কিনিয়া বাড়ি করিয়াছিলেন। রায়বাহাদুর এখন বাঁচিয়া নাই, ছেলে সুকান্ত বাপের টাকা ও বাড়ির মালিক। বড়ো বড়ো ঘর তুলিয়া, দামি আসবাবে সাজাইয়া, ছবির ফ্রেমের মতো চারিদিকে বাগান করিয়া এবং অন্যান্য বহুবিধ সংস্কারের দ্বারা সে বাড়িটিকে বাসোপযোগী করিয়া নিয়াছে। বাগানের একটা যুবতি পুষ্পবতী বকুলিকার ছায়ায় বসিয়া নিত্য অপরাহুে সে পত্নী হিমানীর সঙ্গে চা পান করে। আপিস-ফেরত পুকুরপাড় ঘুরিয়া নিজের বাড়ির দরজায় যাইবার সময়টুকু শঙ্কর ইহাদের দেখিতে থাকে। মৃদু হাসি ও কথার মাঝে মাঝে চায়েব কাপে চুমুক দেওয়ার বিরাম, হ্রস্বপদ লোমশ কুকুরটিকে কাছে টানিয়া মাথা চাপড়ানো, আশেপাশে দুই চারিটা বকুলফুলের এলোমেলো বর্ষণ, শঙ্করের চােখে ইহা আর পুরানো হইল না। রোজই তার মনে হয় কলেজ-জীবনে পড়া কবিতাগুলির এক একটি বাছিয়া নিয়া উহারা যেন অভিনয় করে।