পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in SSt মানিক রচনাসমগ্ৰ শঙ্কর বলিল, হবে হয়তো। কিন্তু সে দোষ আপনাদের নয়। হিমানীর চোখ দিয়া জল পড়িতেছিল, বলিল, আমারই দোষ, আমি সত্যি ডাইনি। না জন্মাতেই আমার সব খোকাকে আমি মেরেছি, কারও খোকা মরলে আমি ছাড়া আর কার পাপ হবে ? জানেন জ্যোৎস্নায় নামতে আজ আমার গা ছমছম করছে। আপনার সেই খোকা। যদি আচল ধরে টানে ? টানিলে শঙ্কর কী করিবে ? পিতা বলিয়া এখন কী আর সে তার কথা শুনিতে চাহিবে। হিমানী বলিল, আমার সঙ্গে একটু আসবেন ? সুকান্ত নিঃশব্দে পিছনে আসিয়া দাঁড়াইয়াছিল, মৃদুস্বরে বলিল, ভয় কী, এসো। সকালে সুকান্ত খবর নিতে আসিল বিধু কেমন আছে। চেহারা দেখিয়া সে যে সমস্তরাত্রি ঘুমায় নাই বুঝিতে কষ্ট হয় না। শঙ্কর টুলটা আগাইয়া দিয়া বলিল, বসুন। দাঁড়ান, খবরটা দিয়ে আসি আগে, বলিয়া সুকান্ত চলিয়া গেল। পাঁচমিনিট পরে ফিরিয়া আসিয়া বিনা আহ্বানেই টুলটাতে বসিয়া পড়িল। সকাল বেলার আলোতে রাত্রির আলোর ইঙ্গিতটুকুও নাই, এবং তাঁহা নিঃসন্দেহে পরম আশ্চর্যের ব্যাপার। তথাপি বিধুর পায়ের আঙুলে জড়ানো রেড়ির তেলের ন্যাকড়াটা শঙ্কর কখন যেন খুলিয়া নিয়াছে। সুকান্ত বলিল, বুঝলেন শঙ্কবাবু, জীবনে একফেঁটা সুখ নেই। এ কথা সকলেই জানে, শঙ্কর কিছু বলিল না। আপনাব এখান থেকে গিয়ে কী চেঁচামেচি আর কান্না যে আরম্ভ করে দিলে যদি দেখতেন। কোনো অভাব নেই। তবু কেন যে ওর মাথা এমনভাবে খারাপ হযে গেল! অভাবের প্রাচুর্যে আধমরা স্ত্রীর দিকে চাহিয়া শঙ্কর এবারও কিছু বলিতে পাবিল না।