পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in মহাসংগম পশুপতি থুড়গুডে বুড়া হইয়া পডিয়াছে। এই মাঘে তাব বয়স সাতাশি পূর্ণ হইল। দুটাে একটা যুগ নয, পশুপতি প্ৰাণপণ চেষ্টায় সাত যুগেব বেশি পৃথিবীতে টিকিয়া আছে। বিপুল সুদীর্ঘ জীবন। কিন্তু তাব সামনে যে মৃত্যু, সে আরও বিপুল, আরও সুদীর্ঘ ! মৃত্যুকে কে ঠেকাইয়া রাখিবো? সােতাশি বছবোৰ আযু নয়, সে ববং মৃত্যুকেই কাছে ডাকিতেছে বেশি। পৃথিবীতে যে যতদিন বেশি বঁচিবে সে তােত গিয়া পডিাবে মরণের কাছাকাছি। একদিন দেখা যাইবে তার দেহে তার মনে, তাব ক্ষীণ স্পন্দিত প্ৰাণেব জগতে মাবণকে যেন অনায়াসে খুঁজিয়া পাওয়া যায়। জীবনেই যেন হইয়াছে জীবনের মবণের মহাসংগম । পশুপতি বিকল হইয়া পডিযছে, অথর্ব হইয়া পডিযাছে। গায়ের চামডা তার বিবৰ্ণ, লোল, সহস্ৰ কৃঞ্চনে কুঞ্চিত। মাথায্য কুড়ি বছরের পুরানো চকচকে টাকটি পর্যন্ত তার ঢ়িলা নিম্প্রভ হইয পডিযাছে। কানে সে ভালো শুনিতে পায না। একটি অলৌকিক মর্মরিত জগতে সে বাস করে। বিরাট বায়ুস্তর হইতে কোটি মিশ্রিত শব্দ অহরহ তার দুই কানে আঘাত করে, কাছে কলবাব কবে মানুষ পশু আব্ব পাখি, সব মিলিয়া তার শুধু একটি অবিচ্ছিন্ন চাপা গুঞ্জনধ্বনির অনুভূতি হয়। বাড়ির লোকে তাব সঙ্গে কথা বলে চেচাইয়া। বাড়ির লোকে তাই তাহার সঙ্গে কথা কয় কম। কত চেচাইবে । চোখে এখনও সে অল্প অল্প দেখিতে পায়, কিন্তু চোখের পাতা দুটি সিসার মতো ভাবী হইয সর্বদাই তাব চোখ দুটিকে ঢাকিযা রাখিতে চায, টানিয়া খুলিয়া রাখিতে তাহার কষ্ট হয়, পরিশ্রমও যেন হয়। ভু পাকিয়া প্রায় উঠিযা গিয়াছে। মুখে আব্ব একটাও দাঁত নাই। চোয়ালেব দুপাশ দিয়া গালোব গোডা হইতে দুটি নিস্তেজ নীল শিরা তার শীর্ণ গলাটি বাহিয়া নীচে নামিয়া গিয়াছে। মেরুদণ্ডটি তাহাব ধনুকের মতো বাঁকা। উঠিয়া দাঁডইলে মাথাটি সে কোনোমতে নিজের কোমরের লেভেল ছাড়াইয়া উপবে তুলিতে পারে না। দুই হাতে মোটা একটা লাঠিতে ভর দিয়া তাহাকে দাঁড়াইতে হয়। লাঠি না থাকিলে সে মুখ থুবড়াইয়া পড়িয়া যাইবে। দেহের ভরকেন্দ্ৰ তাহার পাযেব আয়ত্তাধীন সীমানা ছাড়াইয়া অনেকখানি সামনে আগাইয়া গিয়াছে। উবু হইয়া বসিলে তাহার দুই হাঁটু মাথার কাছে ঠেলিযা ওঠে। পশুপতি থাকে চাদপুতিয়ার শ্ৰীমন্ত সরকারের বাড়ি। শ্ৰীমন্ত তার কেহ নয়। দয়া করি যা আশ্রয় দিয়াছে। পশুপতির একটি ছেলে ছিল। হয়তো এখনও আছে। কেহ তার খবর রাখে না। অনেককাল আগে সে পলাইয়া গিয়াছিল। সেই বৰ্মা মুলুকে। মাঝখানে একবার সংবাদ পাওয়া গিয়াছিল। সেইখানেই বিবাহাদি করিয়া সে সুখে বসবাস করিতেছে। তারপর তার আর কোনো খবব পাওয়া যায় নাই । শ্ৰীমন্ত মোক্তার। মফস্বলে মোক্তারি করিয়াও অনেকে পাকা দালান তোলে কিন্তু শ্ৰীমন্ত এখনও সেটা পারিয়া ওঠে নাই। বাড়িটা তার বড়ো, কিন্তু কঁচা। সদরের ঘরটা শ্ৰীমন্তের মোক্তারি ব্যবসার