পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in SR SR মানিক রচনাসমগ্ৰ শ্যামা বলিয়াছিল, কোলে নেবে তো আসনপিঁড়ি হয়ে বোসো। তুলবার চেষ্টা করলে কিন্তু ভালো হবে না বলে দিচ্ছি। শীতল আসনপিাড়ি হইয়া বসিলে শ্যামা সন্তৰ্পণে ছেলেকে তাহার কোলে শোয়াইয়া দিয়াছিল। লোকে যে ভাবে অচল দোয়ানি দ্যাখে কুঁকিয়া তেমনিভাবে ছেলের মুখ দেখিয়া শীতল বলিয়াছিল, যমজ নাকি, আঁধা ? নেশ্যাব সময় মাঝে মাঝে শীতলের চোখের সামনে একটা জিনিস দুটা হইয়! যাইত। শুধু সেই একদিন। ছেলে কোলে করার সাধ শীতলের আব্ব কখনও আসে নাই। যে কদিন ছেলে বঁচিয়াছিল আনন্দ ও ভযা উপভোগ করিয়াছিল শ্যামা একা। পাড়ায় শ্যামার সখী কেহ ছিল না। ছেলে হওয়াব খবর পাইয়া কয়েক বাড়ির কৌতুহলী মেয়েরা একবার দেখিয়া গিয়াছিল, এই পর্যন্ত। শ্যামা মন খুলিয়া কথা বলিতে পারে এমন কেহ আসে নাই। একজন, যে কখনও এ বাড়িতে পা দেয় নাই, শ্যামাব সঙ্গে ভােব করিতে চাহিয়াছিল। সে পাড়ার মহিম তালুকদারের স্ত্রী বিষ্ণুপ্রিয। পাড়ায় মহিম তালুকদারের চেযে বড়োলোক কেহ ছিল না। ভাব করা দূরে থােক, শ্যামাকে দেখিতে আসাটাই বিষ্ণুপ্রিয়ার পক্ষে এমন অসাধারণ ব্যাপার যে শ্যামা শুধু বিনয় করিয়াছিল, ভাব করিতে পাবে নাই। তখন শীতল ছাপাখানায় গিয়াছে, মন্দা রান্না শেষ করিয়া শ্যামার ছেলেকে স্নান করানোর আয়োজন করিতেছে ; কে জানিত এমন অসময়ে বিষ্ণুপ্রিয়া বেড়াইতে আসিবে-গয়না-পরা দাসীকে সঙ্গে করিয়া ? শ্যামা বলিয়াছিল, ও ঠাকুরবি, ও ঘব থেকে কাপোেটর আসনটা এনে বসতে দাও। মন্দা বলিযাছিল, কাপোটের আসন তো বাইবে নেই বউ, তেরঙেগ তোলা আছে। মন্দার বুদ্ধিব অভাবে শামা ক্ষুন্ন হইয়াছিল। একটা তুচ্ছ কাপোেটর আসন তাও যে তাহাবা তোরঙেগ তুলিয়া রাখে বিষ্ণুপ্রিয়াকে এ কথাটা কি না শোনাইলেই চলিত না! খুলে আন না 7 দাদা চাবি নিয়ে ছাপাখানায় চলে গেছে বউ । অগত্যা একটা মাদূব পাতিয়াই বিষ্ণুপ্রিয়াকে বসিতে দিতে হইয়াছিল। মাদুরে বসিতে বিষ্ণুপ্রিয়ার কোনোই অসুবিধা হয় নাই, কেবল শ্যামার মনের মধ্যে এই কথাটা খচখচ করিয়া বিঁধিয়াছিল যে গরম জল কী হবে ঠাকুরঝি ?--বিষ্ণুপ্রিয়া জিজ্ঞাসা করিয়াছিল। (.८८ &उँ | নাওয়ান, দেখি বসে বসে। মন্দা হাসিয়া বলিয়াছিল, দেখাও হবে শেখাও হবে, না ? আপনার দিনও তো ঘনিয়ে এল।-- বলিয়া বিষ্ণুপ্রিযাব গলায্য মুক্তাব মালা আর কানে হিরার দুল চােখে পড়ায় অন্যদিকে মুখ ফিবাইযা মন্দা আবার বলিষাছিল, তবে আপনি কী তার নিজে ছেলে নাওয়াবেন, ছেলে নাওয়াবার কাটা ধাত্রীই থাকবে আপনার । বিষ্ণুপ্রিয়া এ ধরনের কত মন্তব্য শুনিয়াছে। সে মৃদু হাসিয়া বলিয়াছিল, আপনার ছেলেমেয়ে কটি ঠাকুরঝি ? মেয়ে নেই, ..তিনটি ছেলে, দুটি যমজ। কোলেরটিকে সঙেগ এনেছি, বড়ো দুটি শাশুড়ির কাছে আছে। স্নানের জলে পাঁচটি দূর্ব ছাড়িয়া মন্দা জানালা বন্ধ করিয়াছিল। শ্যামা উৎকণ্ঠিত হইয়া বলিয়াছিল, জল বেশি গরম নয় তো ঠাকুরবি ?