পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in ༄SV2 মানিক রচনাসমগ্র কেশবকে ঘরের বাহির করি যা দিয়া দরজা বন্ধ করে। বেড়ার ফঁাকে চোখ রাখিয়া কেশব কিন্তু ভিতরের ব্যাপার সব দেখিতে পায়। একটা রিপু করা ফরসা শার্ট ও একটি কুচানো পাতলা কাপড় বাহির করিয়া পশুপতি তোরঙ্গ বন্ধ করে এবং দরজা খোলে। কেশবকে ডাকিয়া বলে, যেমন ছিল তেমনি আবার পায়ার সাথে বাধা দিনি দাদা, বুঝি কেমন বাহাদুর। তোরঙ্গটি বাধিয়া চৌকির তলা হইতে বাহির হইয়া কেশব জিজ্ঞাসা করে, জামা-কাপড় কী? হবে দাদামশায় ? পশুপতি ফোকলা হাসি হাসে। দেখিস কী হবে দেখিস । সন্ধ্যার সময় জামা—কাপড় পরিয়া সে বাবু সাজে। আটবছরের পুরানো চটি জোড়াটি কিন্তু তার চেয়েও নানাদিকে এত বেশি বাকিয়া দুমড়াইয়া গিয়াছে যে কোনোমতেই পায়ে দেওয়া যায় না। না যাক। এই বয়সে অত বেশি বাবু পশুপতির না সাজিলেও চলিবে। ঘরের বাহিরে গিয়া কেশবকে দিয়া দরজায সে পিতলের তলাটি লাগায় এবং কেশবকে নির্ভর করিয়া হাজির হয একেবারে বিবাহের আসরে । সকলের মাঝখানে বসিবার ইচ্ছ! থাকিলেও সে সাহস পায় না। একদিকে বেড়া ঘেষিয়া বসিয়া থাকে। বিবাহ-বাড়ির আলোয় পশুপতির নিবিড় অন্ধকার রাত্রি আজ একটু আলো হইয়াছে। এতগুলি মানুষের দেহের উত্তাপ সে যেন অল্প-অল্প অনুভব করিতে পারিতেছে। নিজের ইন্দ্ৰিয়গুলিকে আজ পশুপতির একটু সজাগ মনে হয়। জীবনের ঘোলাটে অস্পষ্ট স্মৃতিগুলিও যেন খানিকটা স্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছে। মানুষেবা সঙ্গে পশুপতির আলাপ করিতে ইচ্ছা হয়। তার ডাইনে যে বুদ্ধ ভদ্রলোকটি নিঃশব্দে শুধু তামাক টানিতেছেন তার বুকে খোচা দিয়া সবিনয়ে জিজ্ঞাসা পদ্ধকরিতে সাধ যায় ; মহাশয়ের নাম ? A. তারপর একটু হাসিয়া ; আমার নাম অজ্ঞে পশুপতি ঘোষ। দস্তিদাব। এখানেই ইস্কুলে মাস্টাবি করি, ভার্নাকুলার মাস্টার আজেও আমি। মেযের বাপ আমার বন্ধুপুত্ৰও বটে ছাত্রও বটে-বড়ো মানে আমাকে, বড়ো খাতির করে i. বসিয়া বসিয়া পশুপতি ঝিমায়। তার চোেখ ঢুলিয়া ঢুলিযা আসে। একসঙ্গে অতীতে ও বর্তমানে থাকিবার সাধ্য তার নাই বলিয়া, যখন সে অতীতের কথা ভাবে তখন এই বিবাহ-সভা তার কাছে মুছিয়া যায়, চারিদিকে আলো ও গণ্ডগোলে সে যখন এখানে ফিরিয়া আসে তখন অতীতকে তার মনে থাকে না। তাই চোখে পূৰ্ণ দৃষ্টি, দুকানে তীক্ষ শ্রবণ-শক্তি ও মুখে সুস্পষ্ট ভাষা লইয়া একদিন এমনি সভায় সে যে অভিনয় করিত তার এতটুকু নকলও করিতে পারে না। তারপর একসময় সে সেইখানেই ঘুমাইয়া পড়ে। কেহ অবাক হইয়া তার দিকে তাকায়, কেহ। তার সম্বন্ধে প্রশ্ন করে কেহ তাকাইয়াও দেখে না । পশুপতির ঘুমের আড়ালে শ্ৰীমন্তের মেয়ে মুখীর বিবাহোৎসব চলিতে থাকে।