পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in ՀՀԵ মানিক রচনাসমগ্ৰ নীলমণি ভাবিল - বিনা তামাকে এই গভীর রাত্রির লড়াই জিতিব কেমন কবিয়া ? ছেলের কান্না দুই কানে তিরের ফলার মতো বিধিয়া চলিবে, মেয়েটার মুখের চাহনি লঙ্কাবাটার মতো সারাক্ষণ মুখে লাগিয়া থাকিবে, নিমুনিয়ার সঙ্গে নিভার ব্যাকুল কলহ চাহিয়া দেখিতে দেখিতে শিহরিয়া শিহরিয়া মনে হইবে বঁচিয়া থাকাটা শুধু আজ এবং কাল নয়, মুহূর্তে মুহূর্তে নিম্প্রয়োজন,--আর ঘরে এখন তামাক আছে একটুখানি! তামাক আনানো হয় নাই কেন জিজ্ঞাসা করিতে গিয়া নীলমণি চুপ করি যা রহিল। প্রশ্ন করা অনর্থক, জবাব সে পরশু হইতে নিজেই সৃষ্টি করিয়া রাখিয়াছে—পয়সা নাই। ছেলেটা বিকালে এক পয়সার মুড়ি খাইতে পায় নাই—তামাকের পয়সা কোথা হইতে আসিবে। নিজে গেলে হয়তো দোকান হইতে ধারা আনিতে পাবিত, केिठू-- নীলমণি খুশি হয। এতক্ষণে ছুতা পাওয়া গিয়াছে। আমি দেখিনি বাবা। দেখিনি বাবা! কেন দেখনি বাবা ? চোখের মাথা খেয়েছিলে ? তুমি নিজে সেজেছিলে যে? সারাদিন আমি একবারও তামাক সাজিনি বাবা। L DOSB BBD BYB BDDDD BBB DBO0OBD BBB BDO BB BB DBB S S S নীলমণির কান্না আসিতেছিল। মুখ ফিরাইয়া সহসা উদগত অশ্রু সে দমন করি যা লইল । না আছে তামাক না থােক। পৃথিবীতে তার কী-ই বা আছে যে তামাক থাকিলেই সব দুঃখ দূব হইয়া যাইত! 1 বাহিরে যেন অবিবল ধারে জল পড়িতেছে না, ঘরের বায়ু যেন সাহারা হইতে আসিযাছে, নীলমণিব চোখ-মুখ এত জ্বালা কবিতেছিল। খানিকক্ষণ হইতে তাহার হাঁটুর উপর বড়ো বড়ো ফেঁাটায় জল পড়িতেছিল—টপটপ। আঞ্জলি পাতিযা নীলমণি গুনিয়া গুনিয়া জলের ফোঁটাগুলি ধবিতে লাগিল। সিদ্ধ করা চামড়ার মতো ফ্যাকাশে ঠোট নাড়িয়া সে কী বলিল, ঘরের কেহই তাহা শুনিতে পাইল না। ছেলেমানুষের মতো তাহার জলেব ফোটা সঞ্চয় করাব খেলাটাও কেহ চাহিয়া দেখিল না। কিন্তু হাতে খানিকটা জল জমিলে তাই দিয়া মুখ ধুইতে গিয়া নীলমণি ধরা পড়িয়া গেল। নিভা ও শ্যামা প্রতিবাদ কবিল দুজনেই। শ্যামা বলিল, ও কী করছ বাবা ? নিভা বলিল, পচা গলা চাল-ধোয়া জল, হ্যাগো, ঘেন্নাও কি নেই তোমার ? নীলমণি হঠাৎ একটু হাসিযা বলিল, হোক না পচা জল। চাল-ধােয়া জল তো! এও হয়তো কাল জুটবে না। নিভা! ইহাকে সূক্ষ্ম রসিকতা মনে করিয়া নীলমণি নিজের মনে একটু গর্ব অনুভব করিল। এমন অবস্থাতেও রসিকতা করিতে পারে, মনের জোর তো তাহার সহজ নয়। ঘরের চারিদিকে একবার চােখ বুলাইয়া আনিয়া নিভার মুখের দিকে পুনরায় চাহিতে গিয়া কিন্তু তাহার হাসি ফুটিল না। নিভার দৃষ্টির নির্মমতা তাহাকে আঘাত করিল। অবিকল শ্যামার মতো চাহিয়া আছে! এত দুঃখ, এত দুর্ভাবনা ওর চােখের দৃষ্টিকে কোমল করিতে পারে নাই, উদভ্ৰান্ত করিয়া তুলিতে পারে নাই, বুঢ় ভৎসনা আর নিঃশব্দ অসহায় নালিশে ভরিয়া রাখিয়াছে।