পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOOkS. in অতসী মামি RR& নীলমণি মুযড়াইয়া পড়িল । সব অপরাধ তাহাব। সে ইচ্ছা করিয়া নিজের স্বাস্থ্য ও কার্যক্ষমতা নষ্ট করিয়াছে, খাদ্যের প্রাচুর্যে পরিতুষ্ট পৃথিবীতে নিজের গৃহকোণে সে সাধ করিয়া দুর্ভিক্ষ আনিয়াছে, ঘরের চাল পচাইয়া ফুটা করিয়াছে সে, তাহাবই ইচ্ছাতে রাতদুপুরে মুষলধারে বৃষ্টি নামিয়াছে। শুধু তাই নয়। ওদের সমস্ত দুঃখ দূর করিবার মন্ত্র সে জানে। মুখে ফিসফিস করিযা হোক, মনে মনে নিঃশব্দে হোক, ফুস মন্তবটি একবার আওড়াইয়া দিলেই তাহার এই ভাঙা ঘর সরকারদের পাকা দালান হইয়া যায়, আর ঘবের কোেনার ওই ভাঙা বাকসোটা চোখের পলকে মস্ত লোহার সিন্দুক হইয়া ভিতরে টাকা ঝমােঝম করিতে থাকে ;-টাকার ঝমােঝমানিতে বৃষ্টির ঝমােঝমানি কোনোমতেই আর শুনিবাব উপায থাকে না। কিন্তু মন্ত্রটা সে ইচ্ছা কবিয়া বলিতেছে না। ঘণ্টাখানেক এমনিভাবে কাটিয়া গেল। নিভা। একসময় জিজ্ঞাসা করিল, হ্যাগা, রাত কত ? তা হবে, দুটাে তিনটে হবে। একটা কিছু ব্যবস্থা করি ? সারারাত জল না ধরলে এমনি বসে বসে ভিজব ? বসে ভিজতে কক্ষপ্ত হব, দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভেজো । নিভা আল কিছু বলিল না। ছেড়া আলোয়ানটি দিয়া কোলেব শিশুকে আরও ভালো করিয়া ঢাকিয বৃক্ষ চুলের উপব খসিযা-পড়া ঘোমটাটি তুলিয়া দিল। স্বামীব কাছে মাথায্য কাপড় দেওযাব অভ্যাস সে এখনও কাঁটাই যা উঠিতে পারে নাই। ছাতি ধরিয়া আব্ব দাঁড়াইযা থাকিতে না পাবিয়া শ্যামা তার গা ঘেষিয়া বসিযা পড়িয়াছিল, মধ্যে মধ্যে তার শিহরনটা নির্বাভা টেব পাইতে লাগিল। কঁপিছিস কোন শ্যাম ? শীত করছে? শ্যামা কথা বলিল না। একটু মাথা নাড়িল মাত্র। নিভা বলিল, তবে ভালো কবেই ছাতিটা ধর বাপু, খোকার গায্যে ছি৮ে লাগছে। আঁচল দিয়া সে খোকাব মুখ মুছিযা লইল। ফিসফিস কবিয়া আপন মনে বলিল, কত জন্ম পাপ করেছিলাম, এই তার শাস্তি। নীলমণি শুনিতে পাইল, কিন্তু কিছু বলিল না। মন তাহার সজাগ, নির্মমভাবে সজাগ, কিন্তু চোখেব পাতা দিয়া দুই চোখকে সে অর্ধেক আবৃত করিয়া রাখিয়াছে। দেখিলে মনে হয়, একান্ত নির্বিকার চিত্তেই সে বিমাইতেছে। কিন্তু নীলমণি সবই দেখিতে পায়। তাহাব স্তিমিত দৃষ্টিতে শ্যামার মুখ তেরচা হইয়া বঁকিয়া যায়, প্ৰদীপের শিখাটা ফুলিয়া ফঁাপিয়া ওঠে, দেয়ালের গাযে ছযাগুলি সহসা জীবন পাইয়া দুলিয়া উঠিতে শুরু কবে। মুখ না ফিরাইয়াই নীলমণি দেখিতে পায় ঘরের ও-কোণে গুটািইন্যা রাখা বিছানার উপর উপুড় হইয়া নিমু ঘুমাইয়া পডিয়াছে। বিরক্তির তাহার সীমা থাকে না। তাহার মনে হয় ছেলেটা তাহাকে ব্যঙ্গ করিতেছে। দুই পা মেঝের জলস্রোতে প্রসারিত করিয়া দিয়া আকাশের গলিত মেঘে অর্ধেকটা শরীর ভিজাইতে ভিজাইতে ওইটুকু ছেলের অমন করিয়া ঘুমাইয়া পড়ায় আর কী মনে হয় ? এর চেয়ে ও যদি নাকি সুরে টানিয়া টানিয়া শেষ পর্যন্ত কঁাদিতে থাকিত তাও নীলমণির ভালো ছিল। এ সহা হয় না। সন্ধায় ও পেট ভরিয়া খাইতে পায় নাই, ক্ষুধার জ্বালায় মাকে বিরক্ত করিয়া পিঠের জ্বালায় চোখের জল ফেলিতে ফেলিতে ঘুমাইয়াছিল। হয়তো ওর বুপকথার পোষা বিড়ালটি এই বাদলে রাজবাড়ির ভালো ভালো খাবার ওকে চুবি করিয়া আনিয়া দিতে পারে নাই। হয়তো ঘুমের